রাধা
✒️ লেখক : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ( ২৩শে জুলাই, ১৮৯৮ – ১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)
✒️ লেখক পরিচিতি : বাংলা কথাসাহিত্যে ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম হলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের অভিজাত উচ্চবর্ণের কাহিনি তথা রাবীন্দ্রিক আদর্শ এবং কল্লোলের অতিবাস্তবতার মধ্যে এক দ্বিধাভক্ত সময়ের মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। বিংশ শতকের শিল্পী হয়েও তারাশঙ্কর ঐতিহ্যানুসরণ থেকে বঞ্চিত হননি। তাঁর জীবনদৃষ্টির একপ্রান্তে পুরাতন মূল্যবোধ, জমিদার তন্ত্রের শ্মশানশয্যায় পূর্বগৌরবের স্মৃতি অন্যদিকে যন্ত্রসভ্যতার অপরিহার্যতা নিয়ে বণিকতন্ত্রের আগমন। আর সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব বীরভূম তাঁর সাহিত্যের চারণক্ষেত্র।
তারাশঙ্কর প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ষাটটি উপন্যাস লিখেছেন। উপন্যাসগুলিকে তিন পর্বে ভাগ করা যায় –
● প্রথম পর্ব – ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ।
চৈতালী ঘূর্ণি, পাষাণপুরী, রাইকমল, আগুন, ধাত্রীদেবতা ইত্যাদি উপন্যাস।
● দ্বিতীয় পর্ব – ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ।
কালিন্দী, গণদেবতা, মন্বন্তর, পঞ্চগ্রাম, কবি, সন্দীপনের পাঠশালা, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা ইত্যাদি।
● তৃতীয় পর্ব – ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ – আমৃত্যু
নাগিনী কন্যার কাহিনী, আরোগ্য নিকেতন, সপ্তপদী, ভুবনপুরের হাট, গন্নাবেগম, রাধা, অরণ্যবহ্নি ইত্যাদি।
✒️ প্রথম প্রকাশ :
● পত্রিকায় প্রকাশ : শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬৪ বঙ্গাব্দ।
● গ্রন্থাকারে প্রকাশ : ১৯৫৮ খ্রি:।
✒️ উৎসর্গ : প্রেমেন্দ্র মিত্র
✒️ পরিচ্ছেদ সংখ্যা : ১৫
✒️ প্রকার : ইতিহাসাশ্রিত উপন্যাস
✒️ বিষয়বস্তু : রাধা (১৯৫৮) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস। উপন্যাসের পটভূমি অষ্টাদশ শতকের অবক্ষয়িত সমাজ। উপন্যাসটি শুরু হচ্ছে ১৭২৬-২৭ খ্রিস্টাব্দ, সুবে বাংলায় নবাবদের উজ্জ্বল জৌলুস, আর উপন্যাস শেষ হয়েছে পলাশির যুদ্ধের এখনও চারমাস হয়নি এই মর্মে অর্থাৎ উপন্যাসের কালপরিসর বিস্তৃত, তিরিশ বছর। বিস্তৃত ঘটনাবর্তের বিশ্বস্ত বিবরণ থাকলেও রাজনৈতিক ঘটনাবর্ত উপন্যাসে পটভূমিকা মাত্র।
এই রাজনৈতিক পটভূমিকায় তারাশঙ্কর উপস্থাপন করেছেন বীরভূমের বৈষ্ণব ও শাক্ত ধর্মের অবক্ষয়ের মুল সুরটিকে। কৃষ্ণসাধনা থেকে রাধাতত্ত্বকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে বৈষ্ণব দর্শনের এক নতুন অভিজ্ঞান সন্ধানে ব্রতী হন মোহান্ত মাধবানন্দ। অপরদিকে মা কৃষ্ণদাসীর প্ররোচনায় মোহিনী মাধবানন্দকে কৃষ্ণরূপে আরাধনা করে এবং প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও কৃষ্ণসাধনার পথ থেকে বিচ্যুত হয় না। উপন্যাসের শেষে রাধাতত্ত্বে অবিশ্বাসী মাধবানন্দের প্রত্যাখ্যাতা মোহিনীর একাগ্র প্রেমের সুদীর্ঘ তপস্যার কাছে আত্মসমর্পন করে।
মোহিনী এখানে পরকীয়া সাধনায় বিরহী রাধার প্রতিবিম্ব আর কৃষ্ণদাসী পরকীয়া তত্ত্বের দৈহিক বিকৃতির স্বরূপ। কাহিনির মাধবানন্দ – মোহিনী অংশ লেখকের কল্পনাপ্রসূত এবং পরকীয়ার চরমরূপ হিসাবে বিকৃত মানসিকতাই সমকালের বাস্তব।
✒️ অন্যান্য :