পুতুল নাচের ইতিকথা
✒️ লেখক : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯ মে, ১৯০৮ – ৩ডিসেম্বর, ১৯৫৬)
✒️ লেখক পরিচিতি : রবীন্দ্র-শরৎ পরবর্তী ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র যিনি কল্লোলের চেতনাকে সংযমের সঙ্গে গভীরভাবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের কথায় ‘কল্লোলের কুলবর্ধন’ আর বুদ্ধদেব বসুর মতে, ‘Belated Kollolian’.তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম – প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, যদিও ডাকনামের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে নামটি ১৯২৮ সালে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’। আর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘জননী’।
মানিক জানিয়েছেন – “জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি।” সৃষ্টির উৎসুকতা তাঁর চেতনায় প্রথমাবধি সুপ্ত ছিল, তবে তাঁর ধারণা ছিল – “তিরিশ বছর বয়সের আগে কারো লেখা উচিত নয়।” তাঁর ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনের ২৩ বছর উপন্যাস লেখায় নিযুক্ত ছিলেন তিনি, আর এই সময়ের মধ্যে মোট চল্লিশটি উপন্যাস রচনা করেন। তাঁর প্রথমদিকের উপন্যাসগুলি ফ্রয়েডিয় তত্ব অনুসারী মনস্তত্ত্ব প্রধান হলেও পরবর্তীকালে উপন্যাসগুলিতে মার্ক্সীয় চেতনায় আর্থসামাজিক দিকটিকে তুলে ধরেছিলেন।
✒️ প্রথম প্রকাশ :
◆ পত্রিকায় প্রকাশ : – ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় পৌষ, ১৩৪১ বঙ্গাব্দ থেকে অগ্রহায়ণ, ১৩৪২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত।
◆ গ্রন্থাকারে প্রকাশ :~ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে মে
✒️ উৎসর্গ :
✒️ পরিচ্ছেদ সংখ্যা : ১৩
✒️ প্রকার : মনস্তত্ত্ব প্রধান সামাজিক উপন্যাস।
✒️ বিষয়বস্তু : ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাসটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস। গাওদিয়া গ্রামের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে তাদের আশা ও হতাশার সমান্তরাল প্রবাহমানতার ছবি এঁকেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সমগ্র উপন্যাস জুড়ে – পরান-কুসুম-শশী, কুমুদ-মতি, যাদব পন্ডিত-পাগলদি, যামিনী-সেনদিদি-গোপাল, বিন্দু-নন্দলাল ইত্যাদি উপাখ্যানের মধ্য দিয়ে। উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র শশী, স্বপ্ন ও বাস্তবকে মেলাতে না পারা এক নি:সঙ্গ চরিত্র। শশী চরিত্রটির মধ্য দিয়ে বিশ শতকের তিরিশের দশকের মধ্যবিত্ত শিক্ষিতের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের ট্রাজেডি প্রকাশ পেয়েছে। এই স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভঙ্গকে আপাতভাবে নিয়তি খেলা মনে হলেও বিজ্ঞানের ছাত্র মানিক দেখালেন এ আসলের যুগক্রান্তিকালের ফসল। ভাগ্য নয় সময়ের ও মনের হাতের নিয়ামক মানুষ। মানিকের ফ্রয়েডীয় ও মার্কসীয় চেতনার অবিস্মরণীয় সৃষ্টি এই ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাসটি।
✒️ অন্যান্য :
■ প্রাসঙ্গিক তথ্য –
● ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় উপন্যাস, চতুর্থ গ্রন্থ।
● ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাসটির প্রথম প্রকাশক ডি.এম লাইব্রেরি, কলকাতা।
● ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ অবলম্বনে বাংলা চলচ্চিত্রটির পরিচালনা করেন – অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
● চলচ্চিত্রটি শ্রী, প্রাচী ও আলেয়া প্রেক্ষাগৃহে ২৮শে জুলাই, ১৯৪৯খ্রি: মুক্তিলাভ করে।
● চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র।
■ অনুবাদ সম্পর্কিত তথ্য –
১) উপন্যাসটি প্রথম অনুবাদ করা হয় গুজরাতি ভাষায়।
অনুবাদক – শ্রীকান্ত ত্রিবেদী
অনূদিত গ্রন্থ – মাটিনা মহেল
প্রকাশকাল – ১৯৫৩, চেতন প্রকাশন।
২) হিন্দি ভাষায় –
অনুবাদক – প্রবোধকুমার মজুমদার
অনূদিত গ্রন্থ – কটপুতলিয়োঁ কা ইতিহাস
প্রকাশকাল – ১৮৫৮ খ্রি:
৩) তেলেগু ভাষায় –
অনুবাদক – এম. সুরি
অনূদিত গ্রন্থ – জীবনলিতা
প্রকাশকাল – ১৯৬০ খ্রি:
৪) মালায়লাম ভাষায় –
অনুবাদক – নিলীনা আব্রাহাম
অনূদিত গ্রন্থ – পাভাকলিয়ুতে কথা
প্রকাশকাল – ১৯৭২ খ্রি:
৫) তামিল ভাষায় –
অনুবাদক – টি. এন. কুমারস্বামী
অনূদিত গ্রন্থ – বোম্মালাট্টম
প্রকাশকাল – ১৯৭৬ খ্রি:
৬) মারাঠি ভাষায় –
অনুবাদক – অশোক সাহানে
অনূদিত গ্রন্থ – সাইখদ্যঞ্চ্যা খেলাচি গোষ্ঠা
প্রকাশকাল – ১৯৭৯ খ্রি:
৭) সিন্ধি ভাষায় –
অনুবাদক – লখমী খিলানি
অনূদিত গ্রন্থ – কথা পুতলি-অ-জো-নাচ
প্রকাশকাল – ১৯৭৯খ্রি:
৮) ওড়িয়া ভাষায় –
অনুবাদক – বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিত
অনূদিত গ্রন্থ – কান্ধেই নাচের ইতিকথা
প্রকাশকাল – ১৯৯০ খ্রি:
৯) পাঞ্জাবি ভাষায় –
অনুবাদক – চন্দন নেগি
অনূদিত গ্রন্থ – পুতলিয়াঁ দি কাহানি
প্রকাশকাল – ১৯৯০ খ্রি:
১০) অসমিয়া ভাষায় –
অনুবাদক – রাজেন সাইকিয়া
অনূদিত গ্রন্থ – পুতুল নাচের ইতিকথা
প্রকাশকাল – ১৯৯৮খ্রি:
এছাড়া কানাড়া ভাষায় অনুবাদ হয় যার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না।
বিদেশি ভাষার মধ্যে
চেক – Tabe Loutek
হাঙ্গেরী – Ba’buk Ta’nca
ও ইংরাজি ভাষায় – The Puppets Tale
নামে অনূদিত হয়।
■ চরিত্র পরিচয় –
১) শশী দাস – কেন্দ্রিয় চরিত্র
২) গোপাল দাস – শশীর বাবা
৩) বিন্ধ্যবাসিনী – শশীর বড় বোন
৪) মোহন দাস – শশীর বড় জামাইবাবু
৫) শ্যামচরণ দাস – মোহন দাসের বাবা
৬) বিন্দুবাসিনী – শশীর মেজ বোন
৭) নন্দলাল – বিন্দুর স্বামী
৮) সিন্ধু – শশীর ছোটবোন
৯) হারু ঘোষ(৫১) – পরানের বাবা
১০) কুসুম(২৩) – পরানের বউ
১১) মতি – পরানের বোন
১২) মোক্ষদা – পরানের বোন
১৩) কুমুদ – শশীর বন্ধু
১৪) অনন্ত – কুসুমের বাবা
১৫) শিবনারায়ণ – গাওদিয়ার স্কুল মাস্টার
১৬) শ্রীনাথ – মুদি
১৭) কীর্তি নিয়োগী – পেনসন প্রাপ্ত হেডপিয়ন
১৮) যাদব পন্ডিত(৭০) – গাওদিয়ার গৃহস্থ যোগী
১৯) পাগল দিদি – যাদব পন্ডিতের স্ত্রী
২০) ভুতো – বাসুদেবের ছেলে
২১) ভূপতিচরণ – যামিনী কবিরাজের শিষ্য
২২) কুঞ্জ – যামিনী কবিরাজের শিষ্য
২৩) সেনদিদি (সরোজ)(৩৩) – যামিনীর স্ত্রী
২৪) শীতলবাবু – গাওদিয়ার জমিদার
২৫) বিমলবাবু – শীতলবাবুর ভাই
২৬) বিপিন – গোয়ালপাড়ার মোড়ল
২৭) অধর মল্লিক – বিনোদিনী অপেরার অধিকারী
২৮) রামতরণবাবু – বাজিতপুরের উকিল
২৯) সত্যহরিবাবু – উখরার আইনজ্ঞ
৩০) কেশববাবু – সাতগাঁর হেডমাস্টার
৩১) বনবিহারী – কুমুদের বন্ধু
৩২) জয়া – বনবিহারীর স্ত্রী
৩৩) হানিফ – অনন্তর নৌকার মাঝি
৩৪) গোবর্ধন – শশীর নৌকার মাঝি
৩৫) কৃপানাথ – সেনদিদির বাবা
৩৬) ভোলা ব্রহ্মচারী – গোপালের গুরুদেব
৩৭) ক্ষান্ত – শশীর পিসি
৩৮) খেমি – শশীর আশ্রিতা
৩৯) কুন্দ – শশীর আশ্রিতা
♥️অসাধারণ