নবান্ন – বিজন ভট্টাচার্য
★ বিষয়বস্তু ★
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিবেশে একদিকে ফ্যাসিজমের উত্থান, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন, অপরদিকে দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর, কালোবাজারিতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত ও নিপীড়িত হচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ১৬ই অক্টোবর এক ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসে পড়ে মূলত মেদিনীপুর এবং পার্শ্ববর্তী ২৪ পরগণা জেলায়। এই ধ্বংসলীলায় সাধারণ মানুষ বিশেষত কৃষকরা ভূমিহীন হয়ে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। গণনাট্য সংঘের সভ্য হিসাবে বিজন ভট্টাচার্য এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘নবান্ন’ নাটক লেখেন। একদিকে হারু দত্তের মতো মানুষের কারসাজিতে এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রধান সমাদ্দার তার স্ত্রী পুত্র নাতি হারিয়ে বাকি সংসার নিয়ে কলকাতায় বাস্তুহারাদের দলে ভিড় করে, তারপর পুনরায় গ্রামে ফিরে এসে নতুন করে সংসার শুরু করে সেই কাহিনিই বর্ণিত হয়েছে নাটকে। নবান্ন নাটক শেষ হয়েছে ‘নবান্ন’ উৎসবের মধ্য দিয়ে।
★ প্রথম প্রকাশ ★
● ‘নবান্ন’ নাটকটি প্রথম পত্রিকায় প্রকাশ পায় – ১৯৪৩ খ্রি:, অরণি পত্রিকায়।
● ‘নবান্ন’ নাটকটি গ্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায় – ১৩৫১ খ্রি:, প্রকাশক – গিরীন চক্রবর্তী, পূরবী পাবলিশার্স,
● প্রথম প্রকাশে প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছিলেন – আশু বন্দ্যোপাধ্যায়।
● বিজন ভট্টাচার্য ‘নবান্ন’ নাটকটি উৎসর্গ করেছিলেন – আমিনপুরকে। এই আমিনপুর আসলে মেদিনীপুর।
● প্রথম প্রকাশের মূল্য – পাঁচ সিকা, ডবল ক্রাউন, পৃষ্ঠা সংখ্যা – ৬ + ১২৪
● গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ হয়েছিল ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে।
● গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণ হয়েছিল – ১৮ই নভেম্বর, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ।
● গ্রন্থের চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল – ১লা বৈশাখ, ১৩৬৯বঙ্গাব্দ।
এই সংস্করণের প্রকাশক – সুনীল দত্ত, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ।
প্রচ্ছদপট ও বর্ণলিপি – দেবব্রত ঘোষ।
এই চতুর্থ সংস্করণের ভূমিকা লিখেছিলেন – বিজন ভট্টাচার্য।
এই সংস্করণের মূল্য – ৩টাকা ৫০ পয়সা।
● ‘নবান্ন’ নাটকের প্রথম প্রমা সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল – ১লা বৈশাখ, ১৩৯১ খ্রি:
এই সংস্করণের প্রচ্ছদপট ও বর্ণলিপি অঙ্কন করেছিলেন – খালেদ চৌধুরি।
★ মঞ্চায়ন ★
● ‘নবান্ন’ নাটক প্রথম অভিনীত হয়েছিল – ২৪শে অক্টোবর, ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, শ্রীরঙ্গম মঞ্চে।
● পরিচালনায় – ভারতীয় গণনাট্য সংঘ
● পরিচালনা – শম্ভু মিত্র ও বিজন ভট্টাচার্য
● আবহ সংগীত পরিচালক – গৌর ঘোষ
● উপদেষ্টা – মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য
★ চরিত্র ★
● পুরুষ চরিত্র –
প্রধান সমাদ্দার – আমিনপুরের বৃদ্ধ চাষী
কুঞ্জ সমাদ্দার – প্রধানের ভাইপো
নিরঞ্জন সমাদ্দার – কুঞ্জের সহোদর
মাখন – কুঞ্জর ছেলে
দয়াল মন্ডল – প্রতিবেশী
হারু দত্ত – স্থানীয় সমাদ্দার
কালীধন ধাড়া – চাল ব্যবসায়ী
রাজীব – কালীধনের সরকার
চন্দর – জনৈক চাষী
যুধিষ্ঠির – আন্দোলনকারী
ফটোগ্রাফারদ্বয়, ভদ্রলোক, নির্মলবাবু, হারু দত্তের শালা, কনস্টেবল, রোগী, ডাক্তার, ভৃত্য, টাউট, বৃদ্ধ ভিখারি, ডোম, দারোগা, দিগম্বর, ফকির, কৃষকদল
● নারী চরিত্র –
পঞ্চাননী – প্রধান সমাদ্দারের স্ত্রী
রাধিকা – কুঞ্জর স্ত্রী
বিনোদিনী – নিরঞ্জনের স্ত্রী
রেবা – নার্স
খুকির মা, চন্দরের মেয়ে, ভিখারিনি, বাংলার ম্যাডোনা ইত্যাদি
★ প্রথম অভিনয়ে অভিনীত কুশীলব ★
প্রধান সমাদ্দার – বিজন ভট্টাচার্য
কুঞ্জ সমাদ্দার – সুধী প্রধান
নিরঞ্জন সমাদ্দার – জলদ চট্টোপাধ্যায়
মাখন – মণিকা ভট্টাচার্য
দয়াল মন্ডল – শম্ভু মিত্র
হারু দত্ত – গঙ্গাপদ বসু
পঞ্চাননী – মণিকুন্তলা সেন
রাধিকা – শোভা সেন
বিনোদিনী – তৃপ্তি ভাদুড়ী
কালীধন – চারুপ্রকাশ ঘোষ
রাজীব – সজল রায়চৌধুরি
চন্দর – রঞ্জিৎ বসু
যুধিষ্ঠির – নীহার দাশগুপ্ত
ডাক্তার – সমর রায়চৌধুরী
দারোগা – বিমলেন্দু ঘোষ
বৃদ্ধ ভিখারি – গোপাল হালদার
বরকর্তা – চিত্ত হোড়
প্রথম ভদ্রলোক (চাল খদ্দের) – মনোরঞ্জন বড়াল
ডোম – শম্ভু হালদার
দিগম্বর – অজিত মিত্র
ফকির – সত্যজীবন ভট্টাচার্য
খুকির মা – কল্যাণী কুমারমঙ্গলম
ভিখারিনি – বিভা সেন
বাংলার ম্যাডোনা – ললিতা বিশ্বাস
ফটোগ্রাফারদ্বয় – অমল ভট্টাচার্য, রবীন মজুমদার
★ অঙ্ক – দৃশ্য ★
● নবান্ন নাটকে মোট অঙ্কসংখ্যা – ৪
● নবান্ন নাটকে দৃশ্য সংখ্যা – ১৫; প্রথম অঙ্কে – ৫, দ্বিতীয় অঙ্কে – ৫, তৃতীয় সংখ্যা – ২, চতুর্থ সংখ্যা – ৩।
● প্রথম অঙ্ক –
◆ প্রথম দৃশ্য – প্রান্তর, সন্ধ্যা
◆ দ্বিতীয় দৃশ্য – প্রধানের ছন্নছাড়া গৃহস্থলি
◆ তৃতীয় দৃশ্য – প্রধানের গৃহ প্রাঙ্গণ
◆ চতুর্থ দৃশ্য – প্রধানের গৃহপ্রাঙ্গণ
◆ পঞ্চম দৃশ্য – প্রধানের গৃহপ্রাঙ্গণ
● দ্বিতীয় অঙ্ক –
◆ প্রথম দৃশ্য – কালীধনের গদি
◆ দ্বিতীয় দৃশ্য – পার্ক
◆ তৃতীয় দৃশ্য – অনুষ্ঠান বাড়ি
◆ চতুর্থ দৃশ্য – হারু দত্তের বাড়ি
◆ পঞ্চম দৃশ্য – কালীধনের সেবাশ্রম
● তৃতীয় অঙ্ক –
◆ প্রথম দৃশ্য – লঙ্গরখানা
◆ দ্বিতীয় দৃশ্য – চিকিৎসাকেন্দ্র
● চতুর্থ অঙ্ক –
◆ প্রথম দৃশ্য – প্রধানের গৃহপ্রাঙ্গণ
◆ দ্বিতীয়দৃশ্য – প্রধানের গৃহপ্রাঙ্গণ
◆ তৃতীয় দৃশ্য – বিস্তীর্ণ প্রান্তর
★ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ★
● পঞ্চাননীর মৃত্যু – ১ম অঙ্ক, ১ম দৃশ্য
● বন্যা – ১ম অঙ্ক, ৩য় দৃশ্য
● মাখনের মৃত্যু – ১ম অঙ্ক, ৫ম দৃশ্য
● ফটো শ্যুট – ২য় অঙ্ক, ২য় দৃশ্য
● কালীধন ও হারুর গ্রেপ্তার – ২য় অঙ্ক, ৫ম দৃশ্য
● কুঞ্জ রাধিকার গ্রামে ফেরা – ৪র্থ অঙ্ক, ১ম দৃশ্য
● নবান্ন উৎসব – ৪র্থ অঙ্ক , ৩য় দৃশ্য
◆ ‘নবান্ন’ নাটকে ‘নবান্ন’ কথাটি প্রথম উচ্চারণ হয় – ৪র্থ অঙ্কের ২য় দৃশ্যে।
◆ ‘নবান্ন’ নাটকের প্রথম সংলাপ – প্রধানের
◆ ‘নবান্ন’ নাটকের শেষ সংলাপ – প্রধানের।
◆ ‘নবান্ন’ নাটকে মৃত্যু সংখ্যা – ৬ – পঞ্চাননী, রাঙা, রাঙার মা, মাখন, ৫নং রোগী, ত্রিলোচন বিশ্বাস,
★ সঙ্গীত ★
● ‘নবান্ন’ নাটকের সঙ্গীত সংখ্যা – ৪
● প্রথম সঙ্গীত – “বড় জ্বালা বিষম জ্বালায়”
৪র্থ অঙ্ক, ১ম দৃশ্য ; গায়ক – নিরঞ্জন
● দ্বিতীয় সঙ্গীত – “আপনি বাঁচলে তো বাপের নাম” ৪র্থ অঙ্ক, ২য় দৃশ্য ; গায়ক – ফকির
● তৃতীয় সঙ্গীত – “নিসলো চেয়ে সামনের হাটে”
৪র্থ অঙ্ক, ৩য় দৃশ্য ; গায়ক – কৃষক রমণী
● চতুর্থ সঙ্গীত – “ফেকু মিঞা মোরগ জিতেছে”
৪র্থ অঙ্ক, ৩য় দৃশ্য ; গায়ক – চাষি
★ প্রবাদ ★
● কাজে কুঁড়ে ভোজনে দেঁড়ে –
বক্তা – কুঞ্জ , উল্লেখ – ১ম অঙ্ক, ২য় দৃশ্য
● সুখ খায় গুড় দিয়ে মুড়ি –
বক্তা – কুঞ্জ, উল্লেখ – ১ম অঙ্ক, ৪র্থ দৃশ্য
● ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো –
বক্তা – হারু দত্ত, উল্লেখ – ২য় অঙ্ক, ৪র্থ দৃশ্য
● যত হাসি তত কান্না, বলে গেছে রামসন্না –
বক্তা – রাধিকা, উল্লেখ – ৪র্থ অঙ্ক, ২য় দৃশ্য
নবান্ন নাটকে কোন বিলের কথা বলা হয়েছে