■ প্রতিবেদন রচনা – ১
◆ সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যু ◆
নিজস্বীর নেশায় আবারো প্রাণ হারাল এক যুবক। কখনো বহুতলে দাঁড়িয়ে, কখনো বা ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফিতে মৃত্যুর পাশাপাশি এবার যুক্ত হল ঝরণার সঙ্গে সেলফি। গত শুক্রবার, তারিখে দার্জিলিঙের রকগার্ডেনে ঝরণার সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ২২ বছরের যুবক কিশোর দাস। জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কিশোরের বাড়ি মেদিনীপুর জেলায়।
স্থানীয় পুলিশ সূত্রের খবর, তিন বন্ধুর সঙ্গে কিশোর কয়েকদিনের ছুটিতে বেড়াতে এসেছিলেন দার্জিলিঙে। রক গার্ডেনে ঝরণার তলায় শুয়ে দুঃসাহসিক সেলফি তোলার চেষ্টাতেই পা পিছলে জলের স্রোতে নিচের দিকে ভেসে যায় বছর ২২এর কিশোর। বন্ধুদের সাহায্যে কলেজে এবং বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী এক পর্যটক রিনা ঘোষ এর কথায়, “ছেলেটিকে বারণ করেছিলাম আমরা অনেকেই। কিন্তু আমাদের কথা উপেক্ষা করে হাসতে হাসতে রেলিং পেরিয়ে এগিয়ে গেল। আর তার পর সঙ্গে সঙ্গেই…”। বন্ধুদের কথায়, সব ব্যাপারেই ও দুঃসাহসী, একবার রাত একটায় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে এসেছিল কিশোর বন্ধুদের সঙ্গে বিরিয়ানির বাজি ধরে। তবে সেদিন সেলফি নিজে থেকেই তুলতে গিয়েছিল।
সমস্তরকম প্রচার, সচেতনতা ও সাবধানীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেড়েই চলেছে সেলফি তোলার হিড়িক। বেশি মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা যুক্ত মোবাইলের রমরমায় সেলফিতে বুঁদ হয়ে আছে বর্তমান যুব সমাজ। আর তার জেরেই বেড়ে চলেছে বিপত্তি। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (AIIMS) এর সমীক্ষা অনুযায়ী গত ছয় বছরে প্রায় ৩০০ র বেশি ছাত্র সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। তবে ট্রেনের সঙ্গে, পাহাড়ে বা বহুতলে সেলফিতে প্রাণ হারানোর সংখ্যাই বেশি। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন ঝরনা।
বিকল্প শিরোনাম –
১) নিজস্বী নেশায় প্রাণ গেল যুবকের
২) আবারো মৃত্যু সেলফিতে,
৩) ঝর্ণা কেড়ে নিল তরতাজা প্রাণ
■ প্রতিবেদন রচনা – ২
★ প্লাস্টিকের রমরমায় বিপর্যস্ত শহর থেকে শহরতলি ★
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ভৎসর্নাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্লাস্টিকের রমরমা বেড়েই চলেছে শহর থেকে শহরতলিগুলিতে। বড়ো বড়ো শপিং মল, থেকে শুরু করে রাস্তার অস্থায়ী দোকানের প্লাস্টিক ব্যাগ, খাবারের দোকানগুলিতে প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাস, থার্মোকলের প্লেটের ‘সিঙ্গল ইউজ’ এবং তারপর যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার ফলেই বিপর্যস্ত হচ্ছে নিকাশি ব্যবস্থা, গ্রাস করছে দূষণ। অল্প বৃষ্টিতে জলমগ্ন এবং টানা বৃষ্টিতে বন্যার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও কোনো পুরপ্রধানই প্লাস্টিক বন্ধের অভিযান নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এদিকে মেয়রের কথায় , “সাধারণ মানুষকেই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ধরপাকর করে প্লাস্টিক বন্ধ করা যাবে না।”
কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহারের রাশ টানতে কোনো আইন কিম্বা দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর জন্য পৌরসভাগুলিকে উদ্যোগ এবং বিশেষ দায়িত্ব নেওয়া একান্ত জরুরি।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ শ্রীমতি শ্যামলী মিত্রের বক্তব্য, পলিথিন ব্যাগ থেকে ওষুধের মোড়ক, সবই প্লাস্টিক। এত সুন্দর, সহজলভ্য এবং সহজ বহ জিনিস আর দুটো নেই। তাই আধুনিক সভ্যতায় এর ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। প্লাস্টিকের লাগামছাড়া ব্যবহারই দূষণের কারণ। তাই প্লাস্টিকের সিঙ্গল ইউজ অর্থাৎ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া বন্ধ করতেহবে। এর সঙ্গে লাস্টিক যাতে পুনর্ব্যবহার করা যায় তার জন্য খেয়াল রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যাগে বাজার করার পরিবর্তে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার যেমন করা যায়, তেমনি প্লাস্টিকের বোতল ফেলে না দিয়ে টব বানিয়ে গাছ লাগানোর কথা ভাবতে পারি। অনেকে ইটের বদলে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে বেড়া দিয়ে, পুকুরের পাড় বাঁধিয়ে, বাগান সাজিয়ে সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। এমনকি ম্যাগি কোম্পানিও প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার নিয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ধরণের দৃষ্টান্তমূলক কাজগুলিকে প্রচারে এনে সাধারণ মানুষকে এই ধরণের কাজের উৎসাহী করতে হবে। সব শেষে এটাই বলার নিজের ভালোটা নিজেকেই বুঝতে হবে। নাহলে নিজে তো ভুগবেনই, সঙ্গে আপনার প্রিয় মানুষটাও।