মাধ্যমিক বাংলা প্রতিবেদন সাজেশন
আয়োজিত অনুষ্ঠানমূলক প্রতিবেদন
১) রক্তদান শিবির নিয়ে প্রতিবেদন
নিজস্ব সংবাদদাতা – ‘সকলের তরে সকলে আমরা’ – এই কথাটিকে পুনর্জীবন দান করে মেয়ের জন্মদিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলেন হাওড়া জেলার নিজবালিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুকান্ত দাস। গত রবিবার তার মেয়ে তিতিরের পাঁচ বছরের জন্মদিনে নিজবালিয়ার নেতাজি মাঠে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে ছিল বিছানা, স্যানিটেশন, মাস্ক, থেকে সোশ্যাল ডিসট্যান্স বিধি – সবকিছুর ব্যবস্থা ছিল। শিবিরে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার নার্সদের একটি দল।
ছোট্ট তিতিরের জন্মদিনে আমন্ত্রিত সকলকে উপহারের বদলে রক্তদানের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আমন্ত্রিতরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন অতিমারীকালীন পরিস্থিতিতেও। কিছু মেডিক্যাল চেক আপের পর ১৮ উত্তীর্ণ স্বাভাবিক রক্তচাপের মানুষদের থেকে রক্ত নেওয়া হয়েছে। রক্তদান শিবিরে সকলের জন্য ছিল ফল, দুধ, ডিম, মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং উপহারের ব্যবস্থা। রক্তদানের প্রক্রিয়া শুরু হয় সকাল এগারোটা থেকে, অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট হার্ট স্পেশালিস্ট ডা. কে নন্দী। বিকাল চারটে পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে ডা. নন্দী বলেন, “রক্তদান মহৎ দান। এই রক্তদান দাতাকে দূর্বল করে না, কিন্তু অন্য দুর্বল মানুষের প্রাণ বাঁচায়।” শরীর থেকে ২৫০মিলি রক্ত যে নেওয়া হয়, তা হয়ত আপনার শরীরে কয়েকদিনের মধ্যেই পূর্ণ হয়ে যাবে কিন্তু এই রক্ত অপর এক মানুষকে কয়েক মাস বছর বা একটা গোটা জীবন উপহার দেবে।
জন্মদিনের মতো ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে রক্তদানের মতো এমন সার্বিক অভিনব আয়োজনে সকলেই অভিনন্দন জানিয়েছেন সুকান্তবাবুকে। ছোট্ট তিতিরও খুশি এত লোক সমাগমে। সুকান্তবাবু জানান, আমার ছোটো বোন থ্যালাসেমিয়ার পেশেন্ট, রক্তের অভাবে মারা যায়। তখন কিছুই করতে পারিনি। তাই রক্তদানের সঙ্গে নিজ সাধ্য অনুযায়ী কম বেশি যুক্ত থাকিই, তবে বিরাট ভাবে আয়োজনের জন্য এই দিনটাকেই বেছে নিয়েছি আমরা।
প্রসঙ্গত, আগত অতিথিদের একটি অঙ্গিকার পত্রেও সই করিয়ে নিয়েছেন দাস দম্পতি। অঙ্গিকারপত্র অনুযায়ী, প্রতি বছর অন্তত একবার রক্তদান তারা করবেনই, অন্তত নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।
২) বিদ্যালয়ে অরণ্য সপ্তাহ পালন নিয়ে প্রতিবেদন
নিজস্ব সংবাদদাতা – অতিমারী পরিস্থিতিতে অভিনব উপায়ে অরণ্য সপ্তাহ পালনে নজির গড়ল আনন্দপুর শিক্ষানিকেতন। করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় দুইমাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল স্কুল। স্কুলে আসতে না পারাটাই স্কুলছুট খুদেদের কাছে সবচেয়ে হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে আনন্দ শিক্ষানিকেতনের প্রধানা শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আবার প্রাণোচ্ছ্বলতা ফিরিয়ে আনতে অরণ্য সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অভিনব উপায়ে।
করোনা পরিস্থিতিতে পড়াশোনা সচল রাখতে শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল গুগল মিটের মতো ক্ষেত্রের। সেখানেই ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে প্রতিদিনকার শাকসবজি থেকে কীভাবে চারা করা হয় শেখানো হয়। তারপর বাড়ির ভাঙা বালতি, জলের ড্রাম, পুরানো বোতল, কফি মগকে কাজে লাগিয়ে টব বানিয়ে তাতেই বীজ, চারা বসিয়েছে। জুঁই, টগর, বেল, দোপাটি, জবা ফুলের পাশাপাশি লঙ্কা, লেবু, উচ্ছে, কুমড়ো, পেঁপে ইত্যাদি গাছও বসিয়েছে ছাত্রীরা। প্রধানা শিক্ষিকা বসুধা দেবীর কথায়, করোনা পরিস্থিতিতে স্কুলে আসতে না পেরে কচিকাচাগুলো উদ্যম হারিয়ে ফেলেছিল। তাই স্কুলের অন্যান্য শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে একসপ্তাহ ব্যাপী অরণ্য সপ্তাহ পালনের পরিকল্পনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “বিভিন্ন স্কুলে বাড়িতে বসে ছবি আঁকা, কবিতা লেখার মতো সৃজনশীল কাজ করছিল। আমরা ভাবছিলাম সকলকে একই কাজে শামিল করার কথা। এই সময়ে দাঁড়িয়ে এর থেকে ভালো উপলক্ষ আর কী হতে পারে।”
শিক্ষিকাদের এই উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হয়েছেন অভিভাবকরাও। বাড়িতে ঘরবন্দির মধ্যে এমন একটা কাজে শামিল হতে পেরে এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেক অভিভাবকই। লকডাউনের বাড়িতে বসে মেয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট হতে পেরে দারুণ খুশি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তিতাস মন্ডলের বাবা তাপসবাবু। দশম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যার কথায়, “বাড়িতে বসে বসে হতাশ হচ্ছিলাম। এত সময় পেয়েও পড়ায় মন বসছিল না। এর মধ্যে ছাদ বাগান করতে পেরে আমি খুব খুশি।”
শুধু বাগান করাই নয়, কে কতগুলি চারা বানিয়েছে, গাছ বসিয়েছে, কীভাবে চারা বানিয়েছে সেইসব নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বানিয়ে জমাও দিতে হবে স্কুলে। স্কুলের সহশিক্ষিকা মৌমিতা মাইতি জানিয়েছেন, প্রায় ১০০০ এরও বেশি চারা রোপণ করেছে ছাত্রছাত্রীরা। স্কুলের এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান থেকে বি.ডি.ও অফিসররাও।