ভারতীয় আর্য ভাষা – UGC NET প্যাটার্ণে প্রশ্নোত্তর
◆ শুদ্ধ ও অশুদ্ধ –
● ১) ঋ, ঋ্ঋ , ৯, এ, ঐ প্রভৃতি স্বরধ্বনির প্রচলন ছিল।
● ২) স্বরাঘাতের স্থান পরিবর্তনের ফলে শব্দের অন্তর্গত স্বরধ্বনির বিশেষ ক্রম অনুসারে গুণগত পরিবর্তন হত।
● ৩) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে স্বরধ্বনি পরিবর্তনের তিনটি ক্রম ছিল – গুণ, বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণ।
● ৪) স্বরধ্বনি অবিকৃত থাকলে তাকে গুণ বলে ~ স্বপ্ ধাতু থেকে জাত হয়ে স্বপ্ন শব্দে অ স্বরধ্বনিটি অবিকৃত আছে।
● ৫) স্বরধ্বনি দীর্ঘ হয়ে গেলে তাকে বৃদ্ধি বলে ~ স্বপ্ ধাতু থেকে জাত স্বাপ হয়ে গেলে অ স্বরধ্বনি দীর্ঘ হয়ে আ হয়।
● ৬) স্বরধ্বনি যখন ক্ষীণ হয়ে লোপ পেয়ে যায় তখন শব্দের অন্তর্গত ঋ, ব ধ্বনির স্থানে যথাক্রমে র, উ আসে। এই পরিবর্তনকে সম্প্রসারণ বলে ~ স্বপ ধাতু থেকে জাত সুপ্ত শব্দে ‘স্বপ’ ধাতুর অ ধ্বনিটি লোপ পেয়েছে এবং ব ধ্বনিটি পরিবর্তিত হয়ে উ ধ্বনি হয়েছে।
● ৭) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে দুটি সন্নিহিত ধ্বনির মধ্যে যেখানে সম্ভব সবক্ষেত্রে সন্ধি সংঘটিত হয়েছে।
● ৮) এইসময় বিভিন্ন যুক্তব্যঞ্জনের স্বচ্ছন্দ ব্যবহার প্রচলিত ছিল।
● ৯) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে তিনটি বচন – একবচন, দ্বিবচন, বহুবচন প্রচলিত ছিল।
● ১০) বৈদিক ভাষায় প্রকৃতি নির্দিষ্ট জোড়া জোড়া প্রাণীর ক্ষেত্রে দ্বিবচন প্রচলিত ছিল ( পিতা মাতা)
● ১১) ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতে যে কোনো দুটো জিনিস বোঝাতে দ্বিবচনের প্রচলন হয়।
● ১২) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে বচনভেদে ধাতুরূপ ও শব্দরূপের পার্থক্য হত।
● ১৩) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে আটটি কারক এবং প্রতিটি কারকে পৃথক বিভক্তি ছিল।
● ১৪) সংস্কৃতে সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদকে কারকের মধ্যে ধরা হয়নি যেহেতু এদের সঙ্গে বাক্যের ক্রিয়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল না।
● ১৫) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে মূল শব্দের অন্ত্যধ্বনি পৃথক হলেও শব্দরূপ পৃথক হত।
● ১৬) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে শব্দের অর্থের ওপরে লিঙ্গ নির্ভর করত না।
● ১৭) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে লিঙ্গভেদ অনুসারে শব্দরূপ পৃথক হলেও ক্রিয়ারূপ পৃথক হতো না।
● ১৮) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে শব্দরূপ অপেক্ষা ক্রিয়ারূপের বৈচিত্র্য প্রাচীন ভারতীয় আর্যে অনেক বেশি ছিল।
● ১৯) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে বিশেষ্য ও সর্বনামের শব্দরূপ পৃথক হত।
● ২০) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে পুরুষে বচন অনুসারে ক্রিয়ারূপের পার্থক্য হত।
● প্রাচীন ভারতীয় আর্যে পাঁচটি ক্রিয়ার কাল ছিল – লট(বর্তমান), লঙ(অসম্পন্ন অতীত), লৃট(ভবিষ্যৎ), লিট(সম্পন্ন অতীত), লুঙ(সদ্য অতীত)।
● ২১) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে সমাসের প্রয়োগ থাকলেও ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতে বহুপদ গঠিত দীর্ঘ সমাসের ব্যবহার দেখা যায়।
● ২২) ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতে কুড়িটি উপসর্গ (প্র, পরা, সম, অপ, অনু, অব, সু ইত্যাদি) ছিল এবং এগুলি স্বাধীন পদরূপে স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হত।
● ২৩) বেদের শেষদিক থেকেই ৯ এর ব্যবহার কম হতে থাকে।
● ২৪) বৈদিক ভাষায় মূর্ধন্য ধ্বনির ব্যবহার খুবই কম।
● ২৫) বৈদিক ভাষায় একটি অক্ষর থেকে অন্য অক্ষরে স্বরাঘাতের স্থান পরিবর্তন করলে তার ফলে শব্দের অর্থও পরিবর্তিত হত।
● ২৫) প্রাচীন ভারতীয় আর্যের দ্বিবচন পালিভাষায় লুপ্ত।
● ২৬) সর্বভারতীয় সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হয়ে উঠেছিল – শৌরসেনী অপভ্রংশ।
● ২৭) ‘অপভ্রংশ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন পতঞ্জলি তাঁর মহাভাষ্য গ্রন্থে।
● ২৮) অবহটঠ হল অপভ্রংশ ভাষার অন্তর্গত।
● ২৯) অবহটঠের সাহিত্যিক নিদর্শন পাওয়া যায় – সরহের দোহাকোষে।
● ৩০) অপভ্রংশ অবহটঠে স্ত্রীলিঙ্গবাচক একটি মাত্র প্রত্যয়ের ব্যবহার দেখা যায় – ই/ঈ।
● ৩১) অপভ্রংশ অবহটঠে নতুন নতুন সর্বনাম পদের প্রচলন হয়।
● ৩২) অপভ্রংশ অবহটঠ স্তরে বাক্যে বিভক্তিহীন পদের ব্যবহার প্রচলিত ছিল।
● ৩৩) ভারতীয় আর্যভাষা থেকে জাত অথচ ভারতের বাইরে প্রচলিত দুটি ভাষা – সিংহলী ও জিপসী।
● ৩৪) অবধী, বাঘেলী ও ছত্তিশগড়ী এই তিনটি ভাষাকে একত্রে পূর্বী হিন্দি বা কোশলী বলে।
● ৩৫) কথ্য হিন্দুস্তানী, ব্রজভাষা, কনৌজী, বুন্দেলী ও বঙ্গারু – এই পাঁচটিকে একত্রে পশ্চিমা হিন্দি বলা হয়।
● ৩৬) হিন্দুস্তানী ভাষার আরবি ফারসি শব্দবহুল নব রূপায়ণ হল – উর্দু ভাষা।
● ৩৭) মুহম্মদ জায়সীর পদুমাবত এবং তুলসীদাসের রামচরিতমানস অবধী ভাষায় রচিত।
● ৩৮) বাংলা ভাষার জন্ম – মাগধী গোষ্ঠীর অন্তর্গত।
● ৩৯) দেবনাগরীর ঈষৎ পরিবর্তিত রূপ ‘বালবোধ’ লিপিতে লেখা হয় – মারাঠি।
● ৪০) নাগরক অপভ্রংশ আসলে – শৌরসেনী অপভ্রংশ।
◆ মন্তব্য – যুক্তি –
১) মন্তব্য – প্রাচীন ভারতীয় আর্যে শব্দের অর্থের ওপর লিঙ্গ নির্ভর করত না।
যুক্তি – প্রাচীন ভারতীয় আর্যে লিঙ্গভেদ ছিল ব্যাকরণগত।
২) মন্তব্য – ভাষাগত বৈশিষ্ঠ্যে ক্লাসিক্যাল সংস্কৃত প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার অন্তর্গত।
যুক্তি – ভাষার গঠন ও বৈশিষ্ঠ্যের দিক থেকে এখানে বৈদিক ভাষার প্রভাব লক্ষণীয়।
৩) মন্তব্য – দক্ষিণ পশ্চিমা প্রাকৃত সবচেয়ে প্রাচীনতাধর্মী।
যুক্তি – এই কথ্য প্রাকৃতের পরিবর্তন সবচেয়ে কম হয়েছিল, এতে বৈদিক ভাষার প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
৪) মন্তব্য – প্রাচ্যা প্রাকৃতে বুদ্ধ তাঁর বাণী প্রচার করলেও শুধু প্রাচ্যা থেকেই পালির জন্ম হয়নি।
যুক্তি – পালির সর্বভারতীয় ভাব বিনিময়ের ভাষা।
৫) মন্তব্য – পালি ভাষাকে সমন্বয়ী ভাষা বলা হয়।
যুক্তি – মধ্যদেশের প্রাকৃতের ওপর ভিত্তি করে সবরকমের প্রাকৃতের উপাদান গ্রহণ করে পালি গড়ে উঠেছিল।
৬) মন্তব্য – ভারতের বাইরে পাওয়া গেলেও ভারতীয় আর্যভাষার নিদর্শন রূপে নিয়া প্রাকৃত গ্রহণ করা হয়।
যুক্তি – উত্তর পশ্চিমা প্রাকৃতের প্রভাব এতে বিদ্যমান ছিল।
৭) মন্তব্য – সিংহলী ভাষা মাগধী গোষ্ঠীর অন্তর্গত।
যুক্তি – মাগধীর পূর্বরূপ থেকে বিবর্তনের ফলে সিংহলীর জন্ম।
৮) মন্তব্য – ইরানীয় গোষ্ঠী আর্যভাষার অন্তর্গত হলেও ভারতীয় ভাষা নয়।
যুক্তি – ইরানীয় ভাষা ভারতের বাইরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে প্রচলিত।
৯) মন্তব্য – যাকোবী অর্ধমাগধীকে জৈন প্রাকৃত বলেছেন।
যুক্তি – জৈন ধর্মসাহিত্যের মধ্যে অর্ধ মাগধীর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল।
১০) মন্তব্য – সুকুমার সেন বলেছেন অশ্বঘোষের নাটকের তালপাতার পুঁথির টুকরোয় প্রাচীন অর্ধমাগধীর ব্যবহার আছে – এই বিবৃতি ভুল।
যুক্তি – অশ্বঘোষের নাটকে অর্ধমাগধীর পূর্বরূপ প্রাচ্যমধ্যার নিদর্শন আছে।
– – – –