পথের পাঁচালী – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বর্ণনামূলক / আমি কে ?
১) রামচাঁদ রায় (১নং) –
৹ আদি বাড়ি – যশড়া – বিষ্ণুপুর।
৹ পিতার মৃত্যুর পর পৈতৃক বাস তুলে স্থায়ীভাবে দ্বিতীয় পক্ষের শ্বশুরবাড়িতে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।
৹ শ্বশুরের যত্নে টোলে সংস্কৃত শিখে ভালো পন্ডিত হয়ে উঠেছিল।
৹ পাতিরাম মুখুজ্জ্যের পাশার আড্ডায় অধিকাংশ সময় কাটাত।
৹ শ্বশুরের নাম – ব্রজ চক্রবর্ত্তী, ছেলের নাম – হরিহর রায়।
২) ব্রজ চক্রবর্ত্তীর স্ত্রী (৩নং) –
৹ জগদ্ধাত্রীর মতো রূপ, অমন রূপসী বধূ এ অঞ্চলে ছিল না।
৹ বনিয়াদী ধনী ঘরের মেয়ে
৹ স্বামীর পাদোদক না খেয়ে কখনও জল খাননি।
৹ রন্ধন করে আত্মীয় পরিজনকে খাওয়াইয়া নিজে তৃতীয় প্রহরে সামান্য আহার করতেন।
৹ দানে ধ্যানে, অন্ন বিতরণে ছিলেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা।
৹ লোককে রেঁধে খাওয়াতে ভালোবাসতেন।
৹ ছেলের নাম নিবারণ।
৩) নিবারণ (৩নং) –
৹ ব্রজ চক্রবর্ত্তীর ছেলে, হরিহরের মামা।
৹ টকটকে গায়ের রঙ।
৹ কঠিন জ্বররোগে দুই তিনদিন শয্যাগত হয়ে চতুর্থদিন রাত্রে মারা যায়।
৹ ঈশান কবিরাজ জল খাওয়াতে বারণ করায় মৌরির পুঁটুলি চোষানো হত।
৹ ষোল বছর বয়সে মারা যায়।
৹ চন্ডীমন্ডপের জঙ্গলে বাঁশবনের মধ্যে ঢাকা পড়ে আছে।
৪) চন্দ্র মজুমদার (৫নং) –
৹ ইন্দিরঠাকুরণের জামাই।
৹ নিবাস ভান্ডারহাটিতে।
৹ তালগাছের গুঁড়ির খুঁটি ও আড়াবাঁধা প্রকান্ড দুইখানা দাওয়া উঁচু আটচালা ঘর।
৹ সংসারের কর্ত্রী বিধবা বড় মেয়ে এবং বড় বৌমা।
৫) ভুবন মুখুয্যে (৯নং) –
৹ নিশ্চিন্দিপুরের অবস্থাপন্ন লোক, বাড়িতে পাঁচ ছয়টা গোলা আছে।
৹ অন্নদা রায়ের নীচেই জমিজমা ও সম্পত্তি বিষয়ে তাঁর নাম করা যেতে পারে।
৹ বহুদিন স্ত্রী মারা গেছে, সেজ ভায়ের বিধবা স্ত্রী সংসারের কর্ত্রী।
৬) চিনিবাস ময়রা (৯নং) –
৹ দোকান আছে, আবার গুড়ের ও ধানের ব্যবসা করে।
৹ মাথায় করে হাটেহাটে আলু, পটল, পান বিক্রি করে বেড়ায়।
৹ লোকে বলে একমাত্র মাছ ছাড়া এমন কিছু জিনিস নেই যা সে বিক্রি করে না।
৹ দশহরার আগের দিন মুড়কি সন্দেশ বিক্রি করতে বেরিয়েছে।
৭) প্রসন্ন গুরুমশায় (১৫নং) –
৹ অপুর শিক্ষাজীবন তাঁর পাঠশালা থেকেই শুরু হয়েছিল।
৹ বাড়িতে একখানা মুদির দোকান ছিল।
৹ দোকানের পাশে তার পাঠশালা ছিল।
৹ পাঠশালায় শিক্ষাদানের একমাত্র উপকরণ ছিল বেত।
৹ পাঠশালা সাধারণত বিকালে বসে।
৹ পাঠশালায় ছাত্রসংখ্যা ৮-১০জন।
৹ প্রায়ই গ্রামের দীনুপালিত, রাজু রায়, রাজকৃষ্ণ সান্যাল গল্প করতে আসেন পাঠশালায়।
৮) গোকুল (১৬নং) –
৹ অন্নদা রায়ের ছেলে।
৹ বয়স ৩৫-৩৬ এরকম নয়।
৹ দেহ তেমন সবল নয়, ম্যালেরিয়া দুর্বল।
৯) পিতম কাঁসারি (১৫নং) –
৹ বেঁটে খাটো, পাকসিটে গড়ন।
৹ জাতিতে কাঁসারি
৹ বয়স ত্রিশও হতে পারে, ৫০ও হতে পারে।
৹ গলায় ত্রিকন্ঠি তুলসীর মালা, মুখের ডানদিকে কাটা দাগ।
৹ পরনে আধময়লা ধুতি,
৹ মাঝে মাঝে বলে – জয় রাধে! রাধে গোবিন্দ।
৹ পাঁচু বাড়ুজ্যের বাড়ির কাছে জামতলায় ভাঙা বাটি জড়ো করে সারাতে বসেছে।
১০) লক্ষণ মহাজন (১৬ নং) –
৹ হরিহরের শিষ্য।
৹ নিবাস আমডোব গ্রাম
৹ বেশ বড়ো চাষী, অবস্থাপন্ন গৃহস্থ।
১১) অমলা (১৬ নং) –
৹ লক্ষণ মহাজনের ব্রাহ্মণ প্রতিবেশীর মেয়ে।
৹ বাড়ি আমডোব প্রাম।
৹ বেশ টকটকে ফর্সা রঙ, বড়বড় চোখ, মুখখানি বড়।
৹ বয়স দূর্গার মতো
৹ অপুকে সোনার পাত দেখিয়েছিল।
১২) নীরেন (১৭নং) –
৹ অন্নদা রায়ের প্রবাসী জ্ঞাতিভ্রাতার পুত্র।
৹ পিতা – রাজ্যেশ্বর রায়।
৹ বয়স – ২১/২২বছর।
৹ বলিষ্ঠ গড়ন, সুপুরুষ, মৌন প্রকৃতির মানুষ।
৹ কলকাতার কলেজে আইন পড়ে।
৹ দিনরাত নভেল পড়ে, শিকারের ঝোঁক, সঙ্গে বন্দুক এনেছে।
১৩) বিশালাক্ষী দেবী (১৬নং) –
৹ গ্রামের মজুমদার বংশের প্রতিষ্ঠিত দেবতা।
৹ দেবীর মন্দিরে নরবলি দিলে দেবী রুষ্ট হয়ে মন্দির পরিত্যাগ করেন।
৹ ষোড়শী বেশে গ্রামের স্বরূপ চক্রবর্ত্তীকে দেখা দিয়ে গ্রামে ওলাওঠার মড়ক থেকে বাঁচবার বিধান দিয়েছিলেন।
১৪) নরোত্তম দাস বাবাজি (২০নং) –
৹ গাঙ্গুলীপাড়ার গৌরবর্ণ, দিব্যকান্তি, সদানন্দ বৃদ্ধ
৹ সামান্য খড়ের ঘরে একা বাস করেন, নির্জনে থাকেন।
৹ সন্ধেবেলায় মাঝে মাঝে চন্ডীমন্ডপে গিয়ে বসেন।
৹ অপু একমাত্র এই সরল শান্তদর্শন বৃদ্ধের সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে মিশতে পারে।
৹ তাঁর কাছে বিদ্যাপতি চন্ডীদাসের পদের কদর বেশি।
৹ তাঁর প্রিয় গ্রন্থ প্রেমভক্ত-চন্দ্রিকা, যা মৃত্যুর সময় অপুকে দিয়ে যাবেন বলেন।
১৫) বিনি (২০নং) –
৹ কালীনাথ চক্রবর্ত্তীর মেয়ে।
৹ একটু লম্বা গড়ন, মুখটা নিতান্ত সাদাসিধা।
৹ বাবা যুগীর বামুন বলে সামাজিক ব্যাপারে পাড়ায় তাদের নিমন্ত্রণ হয় না।
৹ গ্রামের একপাশে নিতান্ত সংকুচিতভাবে বাস করে।
৹ পরনে আধময়লা শাড়ি, হাতে সরু সরু কাচের চুড়ি।
৹ অপু দূর্গার সঙ্গে চড়ুইভাতি করেছিল।
১৬) রাজপুত্র অজয় (২৩নং) –
৹ অপুর সমবয়সী
৹ টুকটুকে, বেশ দেখতে, গানের গলা বড় সুন্দর।
৹ ব্রাহ্মণের ছেলে, এক মাসী তাকে মানুষ করেছিল।
৹ বছরখানেক সে যাত্রাদলে কাজ করে।
৹ যাত্রা করে সে ৪০টাকা জমিয়েছে।
৹ একটু বড় হলে এ দল ছেড়ে আশুতোষ পালের দলে যাবে।
১৭) নীলমণি রায়ের পরিবার (২৭নং) –
৹ নীলমণি রায় কমিসারিয়েটে চাকরি করতেন।
৹ এরা বেশি সময় লাহোরে কাটিয়েছে।
৹ দুই ছেলে – সুরেশ, সুনীল(৮) এবং এক মেয়ে – অতসী(১৪)।
৹ স্ত্রী নগদে ও কোম্পানির কাগজে দশহাজার টাকার মালিক।
১৮) সুরেশ (২৭নং) –
৹ নীলমণি রায়ের বড় ছেলে।
৹ অপুর বয়সী
৹ কলকাতায় ইংরাজি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
৹ দেখতে খুব ফর্সা নয়, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ।
৹ নিয়মিত ব্যায়াম করে বলে শরীর বেশ বলিষ্ঠ, স্বাস্থ্যবান।
৹ রমানাথ গাঙ্গুলীর ভাগ্নে তার সহপাঠী।
৹ দোলের সময় নিশ্চিন্দিপুরে এসে দশদিন ছিল।
৹ মায়ের ইচ্ছে ছেলে বড় হয়ে ওকালতি করবে।
১৯) গুলকী (২৮নং) –
৹ অনাথ, দূরসম্পর্কের জেঠীর কাছে অনাদরে মানুষ।
৹ থাকে গঙ্গানন্দপুরে, অপুর পিসির প্রতিবেশী।
৹ মাথার চুলগুলো ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া, ছেলেদের চুলের মতো খাটো।
৹ মাথায় তেল নেই, রং শ্যামবর্ণ
৹ কথায় কথায় ফিক করে হেসে ওঠে।
৹ অপুর মনে হয় – এ যেন ঠিক তাহার দিদি! এই বয়সে দিদি যেন এই রকমই ছিল।
২০) কথক ঠাকুর (৩০নং) –
৹ নাম রামধন, বিপত্মীক।
৹ গ্রাম ছিল সাতক্ষীরের সামনে বাদুড়ে শীতলকাটি।
৹ স্ত্রী মাচায় কুমড়ো কাটতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যায়।
৹ কাশীতে এসেছে ৮বছর।
৹ অপুদের বাড়িতে চা খেতে এসেছিল।
৹ কাশীবাসী পন্ডিত রামগোপাল চক্রবর্তী কথক ঠাকুরের নামে দশ বিঘা জমি দানপত্র করে গেছেন।
২১) পাঞ্জাবী দম্পতি(৩০,৩১নং) –
৹ স্বামী জালিম সিং, স্ত্রী সূরযকুঁয়ারী।
৹ তারা পাঞ্জাবের রোয়ালসর জেলার অধিবাসী।
৹ স্বামীটি রেলের ওভারসিয়ারের কাজ করে।
৹ স্ত্রীটি গৌরাঙ্গী, আয়তনয়না, আঁটসাঁট দীর্ঘগড়ন।
৹ হরিহর মারা গেলে সৎকারের কাজে সাহায্য করেছিল।
—–