ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – দেওঘরের স্মৃতি
সোমা রানা, বাংলা অনার্স, সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়
১. ভূমিকা :-
নিরানন্দ জীবনে মানুষ চায় আনন্দ৷ একঘেয়েমি অবসাদপূর্ন কর্মকোলাহলের ভিড়ে মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠে ঠিক তখনই মানুষের মন ছটফট করতে থাকে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য৷ প্রথাবদ্ধ ক্ষুদ্র জীবনের গন্ডি থেকে বেরিয়ে মানুষ চায় বিশ্ব -প্রকৃতিকে দেখতে, জানতে৷ তাই তো অবসর পেলে মানুষ যায় ভ্রমনে,কখনো পাহাড়,কখনো সমুদ্র আবার কখনো অরন্যে৷ সেখান থেকে সংগ্রহ করে আনে কত বিচিত্র অনুভূতি, অভিজ্ঞতা৷ জেনে আসে সেখানকার লোকজীবন- লোকসংস্কৃতি ও ভাষাকে ; তাদের আচার ব্যবহারকে৷ তাই তো মানবজীবনে ভ্রমন খুবই প্রয়োজন।
২. ভ্রমণের পরিকল্পনা :-
হঠাৎ করে সেদিন মনের মধ্যে উঠল ঢেউ, সুদূরকে জানবার ঢেউ। ঠিক করি ঘুরতে যাব৷ সবদিনের মতো মামা-মাসি-পিসির বাড়ি নয়, দেওঘর৷ কথাটা বললাম বাড়িতে৷ আমার সঙ্গী হলেন মা,বাবা ও দিদি৷ ঠিক হয় প্রত্যেক বছরের মতো টুরিষ্টবাসে নয় এবার যাব ট্রেনে৷ কেননা আমি জীবনে কোনো দিন ট্রেনে চাপি নি৷ আমার আনন্দের সীমা ছিল না কারন একসাথে ডবল আনন্দের ঝুড়ি পাব আমিI
ভ্রমণের আগের দিনগুলো যেন কাটতে চাইছিল না৷ দিন যত কাছে আসে উৎসাহ তত বেড়ে যায় অজানাকে জানতে আর অদেখাকে দেখতে৷ দেখতে দেখতে যাবার দিন চলে এল। ব্যাগপত্র বেশ কিছুদিন আগে থেকেই গুছাতে শুরু করে দিয়েছিলাম৷ আসলে যাবার প্রস্তুতিতেও একপ্রকার স্বাদ আছে সেই স্বাদ নিচ্ছিলাম অনেক দিন ধরে৷ অনেক দিন ধরেই মনে মনে কল্পনায় দেওঘরকে দেখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তা আসতো না মনের মধ্যে৷ কেননা যতদিন পর্যন্ত কোনো জায়গা না দেখা হয়েছে তা কল্পনা করলেও মাথায় আসে না৷ বই পড়ে (শুক্তি সাগর) আর বড়োদের মুখে অনেক কিছু জেনে নিয়েছিলাম৷ আসলে কোনো জায়গা ঘুরতে যাওয়ার আগে যদি সে বিষয়ে না জানা হয় তাহলে পুরো ভ্রমনটাই যেন মাটি হয় যায়৷
৩. যাত্রাপথের বর্ণনা:-
বাড়ি থেকে স্টেশন দূর তাই ঠিক হয় গাড়ি করে স্টেশনে যাব৷ বিকেল ৩টার সময় পৌঁছে গেলাম ঝাড়গ্রাম স্টেশনে৷ দিনটা ছিল শুক্রবার ১১ই আগস্ট৷ অধীর আগ্রহী ছিলাম যেমন দেওঘর দেখার জন্য ঠিক তেমনি ট্রেনে চাপার জন্য। দূর থেকে কু- ঝিক-ঝিক শব্দ করে ট্রেন এসে প্লাটফর্মে দাঁড়ালো৷ ঠেলা -ঠেলির মধ্য দিয়ে উঠে পড়লাম ট্রেনে, বসে পড়লাম জানালা ধারের এক সিটে৷ চলতে শুরু করলো ট্রেন৷ বাইরের গাছপালা শুরু করলো ছুটতে৷ কত হকার এসে ডাকাডাকি করতে লাগলো৷ এর মধ্যে এক মহিলা হকারের প্রতি আমার বড় কৌতুহল হল মনে হল এই সেই সমরেশ বসুর ‘পশারিনী’ গল্পের নায়িকা৷ কত মাঠ কত গাছ কত ঘর সাঁই সাঁই করে সরে যাচ্ছে জানালার কাছ দিয়ে৷ সবই যেন পটে আঁকা ছবি৷
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামল ট্রেনের আলো জ্বলে উঠল আর জ্বলে উঠলো রেললাইনের দুপাশের আলো৷ রাত্রির খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম স্লিপারে৷ তবে ঘুম এল না৷ ট্রেন আমাকে হালকা হালকা দোল দিয়ে ঘুম পাড়াতে চেষ্টা করলো৷ মা যেমন করে শিশুকে দোলনাতে ঘুম পাড়ান ঠিক সেই ভাবে৷ পড়লাম ঘুমিয়ে৷ ভোরের সময় জানালা দিয়ে দেখলাম ছোটো ছোটো পাহাড়, ছোটো ছোটো ঘর , জঙ্গল আরো কত কিছু৷ ট্রেন থামলো ৭ টার সময় জোসিডি স্টেশনে৷ প্লাটফর্ম চঞ্চল হয়ে উঠল৷ আমরা নেমে পড়লাম৷ আবার কিছু মানুষ চড়ে বসল ট্রেনে৷ আমাদের পেছনে ফেলে ট্রেন এগিয়ে গেল বহু দূরে৷ আমরা অটো ধরে পৌঁছে গেলাম স্টেশন থেকে ৭ কিমি দূরে থাকা দেওঘরে৷ উঠে পড়লাম আগে থেকে বুকিং করা ভাড়া ঘরে৷
৪. দর্শনীয় স্থান ও আমার অভিজ্ঞতা : –
কিছুক্ষন বিশ্রাম নেবার পর স্নান সেরে আবার বেরিয়ে পড়লাম ভ্রমণের মধু সংগ্রহ করতে৷ প্রথমে পৌঁছালাম দেওঘর সৎসঙ্গ আশ্রমে। আহা কি শান্তি! যেন সারা জীবন থেকে যাই এই আশ্রমে৷
তারপর গেলাম বৈদ্যনাথ ধাম৷ এক গলির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছি৷ গলির দুপাশে অসংখ্য পূজা সামগ্রির দোকান৷ তারা একে একে ডাকছিল আমাদের, পূজার ভোগ কেনার জন্য৷ দোকানের দিকে চোখ রেখে ভিড়ের মধ্যে এঁকেবেঁকে সামনে এগিয়ে গেলাম আমরা৷ পৌঁছালাম মন্দিরের একেবারে পায়ের নীচে সেখানে কত গেরুয়া পোশাকের মানুষের সমাগম৷ মনে পড়ে গেল সেদিন ছিল শ্রাবণ মাসের সোমবার৷ কত শিবভক্ত কত দূর দূর থেকে খালি পায়ে এসেছেন জল ঢালতে৷ কারোর পায়ে ফসকা আবার কারো পায়ে রক্তের দাগ৷ চারিদিকে ওঁ নম: শিবায়: আর বম্ বম্ ভোলের জয়ধ্বনি৷ আর বড় বড় ঢোল কাঁসরের শব্দ৷ এত ভিড়ের মধ্যে মন্দিরের মূল গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারলাম না৷ দূর থেকে প্রনাম করে এক পান্ডার কাছে দক্ষিনা আর পূজা সামগ্রী দিয়ে রওনা হলাম পরের গন্তব্য নওলাক্ষা মন্দিরে৷
নলাক্ষা মন্দিরটি বেশ বড়ো এবং পুরোনো৷ গায়ের রং ধূসর খয়েরি তার মধ্যে অবাক করা ভাস্কর্য্য৷ সেখানের এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে জানলাম মন্দিরটি এক নিঃসন্তান রানী সন্তান হবার পর খুশি হয়ে দান করেছিলেন৷ ঘুরে ঘুরে মন্দিরটার চারপাশ দেখলাম৷ দেখি মন্দিরের পিছনের দিকে এক বিশাল বড় ভাঙা কুঁয়ো আছে৷ সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম নীচে উঁকি মেরে দেখলাম কুঁয়োর ভেতর। সেখানে জল ততটা নেই কয়েকটা অশ্বস্থ গাছ গজিয়েছে কুঁয়োর ভেতর৷ সব কিছু রহস্যময়ী গল্প মনে হতে লাগল৷
আমাদের পরের গন্তব্য ছিল ত্রিকুট পাহাড়৷ দূর থেকে দেখতে পেলাম তাকে৷ প্রথমে ছোটো এক বিন্দুর মতো দেখাচ্ছিল তারপর যত সামনে এগোতে লাগলাম পাহাড়টা তত বড় হতে লাগল যেন প্রকান্ড এক দৈত্য উবু হয়ে বসে আছে৷ আমাদের অটো সেই ত্রিকুট পাহাড়কে যত সামনে রেখে এগোচ্ছে ঠিক ততই পাহাড়টা বাঁম দিকে সরে যাচ্ছে৷ বেশ কিছুক্ষন সময়ের শেষে অটো গিয়ে থামলো পাহাড়ের পাদদেশে৷ আমরা একে একে অটো থেকে নেমে পড়লাম, এবার পাহাড়ে উঠার পালা৷ পাথরের উঁচু উঁচু সিঁড়ি বেয়ে আমরা উপরে উঠছি৷ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষন শক্তি যেন আমাদের উপরে উঠতে দিতে চায় না৷ আমরাও হার মানার মানুষ নই৷ এক এক ধাপ করে উঠে চলেছি উপরে৷ সিঁডির দুপাশে ত্রিপল টাঙ্গানো দোকান বসেছে৷ সেখানে বিক্রি হচ্ছে খেলনা, ফুল, ফল আর এই পাহাড়ের গভীর বন থেকে সংগ্রহ করা শেকড় – বাকল, মূল – ফুল – ফল এক কথায় কবিরাজি ঔষুধ৷ প্রায় ৩৫০ টা সিঁডির পর পড়ল মন্দির। ত্রিকূটাচল মহাদেব মন্দির। মন্দিরে কত ভক্তের ভিড়৷ সিঁড়ি এখানেই শেষ কিন্তু পাহাড় আরো উঁচু৷ তবে সেখানে উঠতে হলে শাল আর কত নাম – না জানা গাছের গভীর জঙ্গল আর চড়াই রাস্তা উঠতে হবে৷ তাছাড়া জঙ্গলে বিষাক্ত পোকামাকড়, সাপ ভালুকেরও বাসস্থান৷ আমরা এখানে পুরো নতুন, কাজেই আর উপরে ওঠা হল না সেখান থেকেই ফিরে আসতে হল আমাদের৷ একটা কথা তো লিখতেই ভুলে গেলাম৷ সেখানে কত বড় বড় পাথর চাঁই করে সাজানো আছে যেন মনে হল বিধাতা যেন নিজের হাতে করে সাজিয়েছেন এই ত্রিকুট পাহাড়কে৷
আহা কি শান্তি! নির্জন প্রকৃতিক পরিবেশ৷ তবে বাঁদরের উপদ্রবটা সেখানে একটু বেশিই৷ নিজের ব্যাগ, মোবাইল বাঁচিয়ে নীচে নামতে লাগলাম৷ এখন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষন শক্তি আর নেই৷ নিমেষেই নীচে পৌঁছোলাম৷ তারপর একে একে ঘুরে নিলাম নন্দন পাহাড় আর তপবন৷ নন্দন পাহাড়ে উপরেই আছে শিশুদের জন্য এক সুন্দর পার্ক। সেখানে কত শিশু খেলছে হাসছে৷ এ যেন সত্যিই নন্দনকানন৷ পাহাড়ের উপর থেকে দেখা যাচ্ছে পুরো দেওঘর শহরটিকে৷ বড়ো বড়ো ইঁট পাথরের ঘরগুলিকে খেলনা ঘর মনে হচ্ছে৷ রাস্তা নয় যেন সুতো,গোরু বাছুর নয় যেন কাগজের ঠোঙা এমনই মনে হচ্ছিল৷ তপোবন পাহাড়েও ঠিক এই একই দৃশ্য দেখলাম৷
সন্ধ্যের সময় ভাড়া ঘরে ফিরলাম৷ তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে রাত্রে বেরোলাম আশ্রমের দিকে৷ প্রার্থনায় যোগ দিলাম৷ তারপর বাইরে এসে কিছু কেনাকাটা করলাম৷ এখানকার কেনাকাটার প্রধান খাদ্যবস্তু হচ্ছে পেড়া মানে সন্দেশ৷ যেমন পুরীর খাজা ঠিক তেমনি৷ সবশেষে রাস্তার ধারের এক চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম৷ মাটির ভাঁড়ে এমন স্বস্বাদু চা অনেক দিন পর খেলাম৷ রাস্তা দিয়ে অনবরত ছুটে চলেছে এক্কাগাড়ি। দেখতে দেখতে দোকানদারের সাথে বেশ কিছু কথা বলে বুঝলাম৷ এরা বাংলা বেশ ভালোই বোঝে, তবে বলে ভাঙা ভাঙা গলায় ; পোশাক পরিচ্ছেদ বাঙালিদের মতোই৷ …
৫. দেওঘরের মাহাত্ম্য :-
‘দেওঘর ‘একটি হিন্দি শব্দ যার অর্থ হল ‘দেব কা ঘর’ অর্থাৎ দেবতার থাকার স্থান৷ ঝাড়খন্ড রাজ্যের ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে অবস্থিত এই দেওঘরে প্রাকৃতিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তির সংমিশ্রন ঘটেছে৷ এখানে আছে – বৈদ্যনাথ ধাম যা ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ ও ৫১ টি সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম৷ সতীপীঠ ও জ্যোতির্লিঙ্গ একসাথে থাকা স্থানগুলির মধ্যে এই বৈদ্যনাথ ধাম অন্যতম তীর্থক্ষেত্র৷
কথিত আছে,দশানন রাবন ছিলেন শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত৷ একদিন রাবনের ইচ্ছে হয় তিনি শিবকে কৈলাশ থেকে তুলে নিয়ে আসবেন লঙ্কায়৷ এর জন্য তিনি দীর্ঘ তপস্যা করেন৷ এবং শিবকে সন্তুষ্টুও করেন৷ তবে শিব শর্ত দেন যে যদি লঙ্কা যাওয়ার পথে যদি তাকে মাটিতে একবারও রাখা হয় তবে তিনি লঙ্কায় যাবেন না৷ অন্যান্য দেবতারা সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা শিবকে কোনো মতেই যেতে দিবেন না৷ তাই তাঁরা দেবী গঙ্গাকে রাবনের দেহে প্রবেশ করান৷ কিছু দূর যাওয়ার পর মাঝপথে রাবনে মূত্র বিসর্জনেরর জন্য জায়গা খোঁজেন৷ এবং সেখানের ত্রিকুট পাহাড়ে তিনি তাঁর রথ নামান৷ এরজন্যই অনেকে আবার এই ত্রিকুট পাহাড়ের শিখরকে রাবনের হেলিপ্যাড বলে থাকেন৷এই ত্রিকুট পাহাড় থেকে ২০ কিমি দূরে তিনি এক ব্যক্তির হাতে শিবলিঙ্গ ধরিয়ে মূত্রবিসর্জন করতে থাকেন৷ ঠিক তখনই সেই ব্যক্তি শিবলিঙ্গকে মাটিতে রেখে দেন৷ এবং শর্ত অনুযায়ী শিব সেখানেই স্থাপিত হন৷ এটাই বৈদ্যনাথ ধাম৷ আর এই রাবনের মূত্রবিসর্জিত গঙ্গা শিবগঙ্গা নামে পরিচিত৷ তবে কেউ কেউ আবার মনে করেন রাবন যখন শিবকে লঙ্কায় না নিতে পারার রাগে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে পৃথিবীতে তার মুষ্টি ফুঁকলেন তখন এই বিশাল জলধারা বেরিয়ে আসে।
পুরানের মতপার্থক্য থাকে এটা স্বাভাবিক৷ তবে এখানে স্নান করে পুন্য লাভের জন্য বহু ভক্ত দেশবিদেশ থেকে জোড়ো হন৷ এছাড়া বৈদ্যনাথ মন্দিরে দেখা যায় প্রধান মন্দিরের সঙ্গে দেবী পার্বতীর মন্দির ‘গাঁটবন্ধনে’ আবদ্ধ৷ দুটি মন্দির লাল সুতোয় বাঁধা। শিবপুরান অনুযায়ী বৈদ্যনাথ ধাম আসলে দুই আত্মার মিলন তাই অনেক হিন্দু পরিবার বিবাহের স্থান হিসেবে এই মন্দিরকে বেছে নেন৷
এছাড়া, দেওঘর যেমন বিখ্যাত সৎসঙ্গ আশ্রমের জন্য৷ ঠিক তেমনি বিখ্যাত প্রকৃতির অপরূপ রূপের জন্য৷ এখানে আছে পাহাড় এখানে আছে রোপওয়ে (ত্রিকূট পাহাড়ের রোপওয়ে ভারতের অন্যতম রোপওয়ে যার দৈর্ঘ্য ৭৬৬ মিটার) আছে অরন্য৷ আছে বৈদ্যনাথ ধামের মতো তীর্থক্ষেত্র৷ আছে স্বামী বালানন্দের আশ্রম৷নবলক্ষ মন্দির। সব মিলিয়ে এক সুন্দর ভক্তিপূর্ণ পরিবেশ৷ তাই দেওঘর যেমন প্রকৃতিপ্রেমি, পাহাড় প্রেমিক, পুরাতাত্ত্বিকদের টানে ঠিক তেমনি টানে ভক্তদেরও৷
৬. ফেরার পালা :-
দেওঘরকে বিদায় জানিয়ে পরের দিন রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে৷ আবার সেই ট্রেন সফর৷ তবে এবার আমাদের ট্রেন পাল্টাতে হবে টাটাতে৷ দুপুর প্রায় ১ টার দিকে পৌঁছালাম সেখানে৷ খাওয়া – দাওয়া সেরে নিলাম প্লাটফর্মে। সেদিন এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হল৷ আমার পারিবারিক শিক্ষা খাবার একেবারে নিঃশেষ করে খেতে নেই৷ কারন আমাদের আশেপাশের অনেক কাক-পক্ষী, পশু সেগুলো খেয়েই বেঁচে থাকে৷ তাই আমার পাতেও কিছু খাবার অবশিষ্ট ছিল আর আমি সেগুলিকে ডাষ্টবিনের কাছে রেখে দিয়ে এলাম৷ পিছনে ফিরেই দেখি এক বৃদ্ধ ভিক্ষারী আমার সেই ফেলে আসা খাবার খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে৷ আমি অবাক পৃথিবীতে এত দুখী মানুষও আছে যাদের দুবেলা খাবারও জুটে না৷ হায়রে দুনিয়া!!
ভ্রমণে না এলে হয়তো আমার এমন অভিজ্ঞতা কোনো দিনই হতো না৷ আবার ট্রেন ধরলাম৷ তারপর পুরুলিয়া, আসানসোল, রানীগঞ্জ, ঘাটশিলা বেশ কয়েকটি স্টেশন পেরোলাম৷ মাঝে মাঝে আমাদের ট্রেনের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে কায়লা ভর্তি মালগাড়ি৷ এই জায়গা গুলো তো সেই ভূগোল বইয়ে পড়া জায়গা৷ সেই ইস্পাতনগরী, আসানসোল – রানীগঞ্জের কয়লা খনি ; ভেবে ভেবে আনন্দিত হয়ে উঠছিলাম৷
দেখতে দেখতে ট্রেন এসে থামলো ঝাড়গ্রাম স্টেশনে৷ আমরা নেমে পড়লাম৷ এই ঝাড়গ্রামের লোকেরা আমার কেউই না তবুও তাদের আপন মনে হত লাগল৷ নিজের মাটির সুগন্ধ আমার নাকে আসছিল৷ আমার গ্রাম আমাকে ডাকছিল৷ ঘরে কেউ নেই তবুও এক অদ্ভূত মায়া আমাকে টানছিল৷ যেন সর্বসুখ আছে সেইখানে৷
৭. উপসংহার :-
ভ্রমন কেবল মনোরঞ্জন করায় না মনের গভীরে থাকা সুপ্ত অনুভূতি গুলোকে জাগিয়ে তোলে৷ বইয়ে পড়া বিষয় জায়গাগুলিকে চোখের সামনে দেখতে পায় মানুষ৷ তখন তার কাছে পৃথিবী মনে হয় অনেক বড়৷ অনেক সুন্দর৷ একঘেয়েমি জীবনে জাদুকরের পরশ পাথরের ছোঁয়া লাগে৷ তখন সাধারণ জীবন -যাপনকে মনে হয় অসাধারন৷ আর এর জন্য দায়ী ভ্রমন৷ কারন ভ্রমন যেমন মনকে আনন্দ দেয় ঠিক তেমনি শরীরকে দেয় কষ্ট৷ আর এই কষ্টে থাকাকালীন মানুষ পায় আসল গৃহ সুখের সন্ধান৷
রোজকার জীবিনে মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠে আর ঠিক তখনই চোখ বন্ধ করে মানুষ পৌঁছে যায় সেই ভ্রমনে কাটানো দিনগুলিতে৷ এবং সেই স্মৃতি মানব মনে আনন্দের হুল ফুটাতে থাকে৷ এখানেই ভ্রমণের আসল সার্থকতা৷
◆ তথ্যসূত্র – ইন্টারনেট