কলমে: অদিতি সিংহ, স্নাতকোত্তর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

প্লাস্টিকের মুঠোয় পরিবেশ, দূষণ মাত্রাতিরিক্ত,

ভীত বিজ্ঞানীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা: ইদানিং পৃথিবী ক্রমশ দূষণের পথে নিজের নাম লেখাচ্ছে। মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পরিবেশ দূষণ তীব্রতা বাড়িয়েছে। আমরা একাধারে যেমন চাঁদের মাটি স্পর্শ করছি, ঠিক তেমন পৃথিবীর দূষণ-এর মাথা বাড়িয়ে তুলছি।

পরিবেশে অবস্থিত যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থ, তাদের মধ্যে প্রধান হলো প্লাস্টিক, যা অনায়াসে পরিবেশ রক্ষার বাধা সৃষ্টি করে। তা একসময় মানব জনজীবনের ওপর বিপুল প্রভাব সৃষ্টি করে৷ অনিয়মিত প্লাস্টিকের ব্যবহারে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলেছে। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক, পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না। এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয়৷ মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সম্প্রতি ‘পরিবেশ ও মানুষ’ চ‍্যানেলের পক্ষ থেকে কলকাতার কিছু পথ চলতি মানুষের থেকে এর প্রতিরোধ করার জন্য তাদের বক্তব‍্য জানতে চাওয়া হয়। কলেজস্ট্রীটের এক ব‌ইক্রেতা সুবিনয় মন্ডল বলেন, “অকারণবশত প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা কমাতে হবে, তার বদলে কাগজের ও চটের বাগ ব্যবহার করতে হবে।” এক‌ই সুর হরিশ মুখার্জী রোডে বাজার করতে আসা অমল বিশ্বাসের কথায় , “দোকানদাররা যদি প্লাস্টিকের ব্যাগ না দেয় তাহলে এর ব্যবহার অনেকটা কমতে পারে।” এবং সবশেষে নরেন্দ্রপুরের রামকৃষ্ণ মিশনের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র শুভব্রতর মন্তব্য, “রাস্তার প্রতিটি মোড়ে ডাস্টবিন রাখার ব্যবস্থা এবং সঠিকভাবে বজ্র পদার্থ যাতে ওই ডাস্টবিনে ফেলা হয় তার পদক্ষেপ নিতে হবে পৌরসভাকে।”

প্লাস্টিক দূষণ প্রাণীকুলের খাদ্যচক্রের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে৷ এটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপর বেশি বিরুপ ফেলে৷ “Introduction to Marine Biology” বই অনুসারে প্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য “একক সর্বাধিক হুমকি” র মত। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিলে সচেতনতা তৈরির জন্য শিল্পী মারিয়া ক্রিস্টিনা ফিনুচ্চি প্যারিসে অবস্থিত ইউনেস্কোতে ডিরেক্টর জেনারেল ইরিনা বোকোভার সামনে গারবেজ প্যাচ স্কেল এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এটা ছিল ইউনেস্কো এবং ইতালির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া কয়েকটি ঘটনার মধ্যে প্রথম। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ প্লাস্টিক দূষণের ব্যাপারেও সচেতনতা তৈরি করছে। তাছাড়া অনেক ছোট ছোট দল সারা বিশ্বে স্থানীয় ভাবে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে।

পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে নজির গড়ল শ্যামবাজার স্কুলের ছাত্রছাত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা: আচ্ছা বলুন তো, বিপদে পড়লে সব সময় রক্ষা করার জন্য নিরাপত্তা রক্ষীদেরই কেন আসতে হবে! কথায় আছে না? ছোটদের থেকেও কিছু শেখা যায়। তারই প্রমাণ মিললো গত ৯ই জানুয়ারি শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে।

এক বয়স্ক বৃদ্ধ অনেকক্ষণ দিয়ে রাস্তা পার হবার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু কোনো ক্রমে তিনি রাস্তা পার হতে পারছিলেন না। ঠিক সেই সময় বিদ্যালয় ফেরত কিছু ছাত্র-ছাত্রীরা সেই বৃদ্ধকে সাহায্য করেন। বৃদ্ধটি বোধহয় হাতিবাগান থেকে শিয়ালদার দিকে যাচ্ছিলেন। অনেক্ষন ধরেই চেষ্টা করছিলেন কিন্তু চলতি গাড়ির বেগ ক্রমশ বেড়ে চলছিল, তাই তিনি রাস্তা পার হতে পারছিলেন না। সেই সময় বিদ্যালয় ফেরত কিছু ছাত্র-ছাত্রী সেই পথে যাচ্ছিল, তারা সেই বৃদ্ধ লোকটিকে সাহায্য করে। এইসমস্ত ঘটনা নজর বন্ধি করেছেন পথ চলতি কিছু মানুষজন।

ছাত্রছাত্রীরা গত বৃহস্পতিবার ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি পালন করে। রাজ্য সরকারের যাবতীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ সত্ত্বেও পথদুর্ঘটনায় কোনও বিরাম নেই। ছোট থেকে বড়, দুর্ঘটনা অহরহ ঘটেই চলেছে রাজ্যের সর্বত্র। বহু দুর্ঘটনার পিছনেই রয়েছে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা এবং অসচেতনতা। তাঁদের সচেতন করতেই এবার এগিয়ে এল স্কুলের কচিকাঁচারা।

নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী তানিয়া দত্তকে প্রশ্ন করায় জানিয়েছে, “সকলে যাতে রাস্তা পারাপার করার সময় কোন বিপদে না পড়ে, সেই জন্য আমাদের এই উদ্যোগ।” পথচারী এক ব্যক্তি জানান, “ছাত্র-ছাত্রীদের এই উদ্যোগ দেখে আমি বেজায় আনন্দিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কুর্নিশ জানাই, তারা যাতে এমন কাজ করতে আগামী দিয়ে এগিয়ে আসে। তাদেরকে দেখেও আমাদের শিক্ষা লাভ করা উচিত”

রাজ্য সরকারের পরিবহন দফতরের নির্দেশ মেনে, শ্যামবাজার স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ বিশ্বাস উদ্যোগে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এদিন শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মুড়ি ফেস্টুন নিয়ে, পদযাত্রার মধ্য দিয়ে সড়ক পথে চলাচলের নিয়মকানুন গ্রহণ করেন এবং এলাকাবাসীদের সচেতন করে। প্রধান শিক্ষক জানান, পথ নিরাপত্তার কারণে মোটরবাইক চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি গোলাপ ফুল,  চকোলেট ও কলম দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। এই উদ্যোগে পদযাত্রায় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে স্কুলের বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাও অংশ নেন। পথ নিরাপত্তা নিয়ে বাদবাকি আরব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের এই সচেতনতামূলক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী মানুষজন।