নির্বাস ‌

✒️ লেখক : অমিয়ভূষণ মজুমদার

✒️ লেখক পরিচিতি বাংলা সাহিত‍্যে অমিয়ভূষণ মজুমদার সেভাবে জনপ্রিয়তা পাননি, তাঁর গল্প উপন‍্যাস সম্পর্কেও পাঠক তেমন ওয়াকিবহাল নয়। অমিয়ভূষণ মজুমদার প্রথমদিকের বেশিরভাগ লেখাই লিখে ছিঁড়ে ফেললেও প্রথম যে লেখা ছাপা হয়েছিল তা একটি একাঙ্ক নাটক – ‘দ‍্য গড অন মাউন্ট সিনাই’, আনুমানিক ১৯৪৪ সাল(মন্দিরা, জ‍্যৈষ্ঠ ও আষাঢ়, ১৩৫১)।
পরবর্তী রচনা ১৩৫২এর ভাদ্র সংখ‍্যায় ‘মন্দিরা’ পত্রিকাতেই প্রকাশিত কবিতা ‘রাজার ঝিয়ারী অচেতন ঘুমঘোরে।’ যদিও এই কবিতাটির কথা অমিয়বাবু তাঁর ডায়েরিতে বা কোনো স্মৃতিকথনে উল্লেখ করেননি। তবে, অমিয়ভূষণ লেখক জীবনের সূচনা বলা যায় ‘পূর্ব্বাশা’ পত্রিকায় ‘প্রমীলার বিয়ে’ গল্প প্রকাশের মধ‍্য দিয়ে, কার্তিক ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে।

অমিয়ভূষণ মজুমদারের প্রথম উপন‍্যাস ‘গড় শ্রীখন্ড’ পূর্ব্বাশা পত্রিকায় ১৩৬০ বঙ্গাব্দ থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করে। অমিয়ভূষণ মজুমদারের সাহিত‍্যিক খ‍্যাতি মূলত প্রথমদিকের তিনটি উপন‍্যাসকে কেন্দ্র করেই – গড় শ্রীখন্ড, নীলভুঁইয়া(নয়নতারা), এবং রাজনগর। প্রসঙ্গত বলি, ‘নয়নতারা’ নামে ‘নীল ভুঁইয়া’ উপন‍্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ বাজারে আসে ১৯৬৬ সালে, উপন‍্যাস প্রকাশের দশ বছর পর।
২৩/২৪ বছর বয়স থেকে ৮২ বছর বয়স পর্যন্ত – অর্থাৎ পঞ্চাশ বছরের‌ও বেশি সময় ধরে লিখেছেন অমিয়ভূষণ। এই সময়বৃত্তের মধ‍্যে প্রকাশিত উপন‍্যাসের সংখ‍্যা ২৭, গল্প ১১২, নাটক ৬ এবং প্রবন্ধের সংখ‍্যা ৫০টির ও বেশি।

✒️ প্রথম প্রকাশ :
● পত্রিকায় – শারদীয়া গণবার্তা, ১৩৬৬
● গ্রন্থাকারে – ১৩৬৬, ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ
পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়, ১৯৯৬খ্রি:, দে’জ পাবলিশিং থেকে।

✒️ উৎসর্গ : ‘অধ‍্যাপক শ্রীমান নবকুমার নন্দীর করকমলে’

✒️  পরিচ্ছেদ সংখ‍্যা :

✒️ প্রকার : ঔপন‍্যাসিকের বক্তব‍্য – “এটা রাজনৈতিক উপন‍্যাস নয়। …পোষ্ট কলোনিয়াল সাহিত‍্যসৃষ্টির প্রথমদিককার নিদর্শন।”

✒️ বিষয়বস্তু : অমিয়ভূষণ তাঁর উপন‍্যাসের বিষয় সম্পর্কে বলতেন ‘আমার কালচার উদ্বাস্তু’। এই ভাবনার নিরীখেই ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে ‘নির্বাস’ উপন‍্যাস। তবে এখানে দেশভাগের পাশাপাশি ১৯৪২-৪৩এ ঘটেছে বর্মা ইভ‍্যাকুয়েশন এবং বাংলার মন্বন্তর। যে কারণে বিমলপ্রভা উদ্বাস্তু হয়েছেন রেঙ্গুন থেকে। ১৯৪২ এর যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রেঙ্গুন থেকে হাজার মাইল হেঁটে পূর্ববঙ্গে চলে আসতে হয় বিমলাকে, সঙ্গে দিদি আর ভুবনবাবু। পথে বিনা ওষুধে দিদির মৃত‍্যু আর ভুবনবাবু ও বিমলার জন‍্য শুরু হয় পথ চলা শিকড়ের খোঁজে। রেঙ্গুন থেকে বজ্রযোগিনী, বজ্রযোগিনী থেকে বনগাঁ সীমান্ত, তারপর সেখান থেকে হলুদমোহন ক‍্যাম্প। তবে এখানেও স্থায়ী হয়না। আবার রাষ্ট্রের নির্দেশে দন্ডকারণ‍্যে উদ্বাস্তু প্রেরণের ইঙ্গিত দিচ্ছেন অমিয়ভূষণ। আর এখানেই ‘নির্বাস’ নামের সার্থকতা।
তবে এখানেই শেষ নয়, এই চলমানতার পাশাপাশি ঘটে যাচ্ছে বিমলার জীবনে নানা ঘটনা – গণধর্ষণ, সন্তানধারণ, নিরাপত্তার জন‍্য আত্মসমর্পণ, জীবিকা, জীবিকাচ‍্যুতি – এখানেও স্থিতি নেই। জীবনের এই অস্থিরতাই ‘নির্বাস’ উপন‍্যাসের মূল উপজীব‍্য বিষয়। 

✒️ অন‍্যান‍্য :
কাহিনির স্থান – হলুদমোহন ক‍্যাম্প
-৹ এখানে সেনাদের ঘাঁটি ছিল, ঘাঁটির তাঁবুগুলোর দৈর্ঘ‍্য – ছয় হাত বাই চার হাত।
-৹ এখানে দুটো পাড়া আছে, একটা লাইব্রেরি আছে।
-৹ ক‍্যাম্পের প্রধান কর্মচারী – অজয়।

চরিত্র
বিমলা – প্রধান চরিত্র, নাম বিমলপ্রভা, রেঙ্গুন থেকে উদ্বাস্তু, বয়স – ৩৩ বছর।
(বিমলার ঠিকানা – হলুদমোহন ক‍্যাম্প, ২৭নং তাঁবু, ৫৮৭ নং কার্ড, ৬নং গ্রুপ।)
ভুবনবাবু – স্কুল মাস্টার, বয়স – ৪৩ বছর।
মরণচাঁদ – হলুদমোহন ক‍্যাম্পে উদ্বাস্তু
সোদুমিনি(সৌদামিনী) – মরণচাঁদের ব‌উ
অবিমন্নো (অভিমন‍্যু) – মরণচাঁদের ছেলে
সুভাষ – মরণচাঁদের ভাই
মোহিতবাবু – আই.বি. র দারোগা, হলুদমোহন ক‍্যাম্পে উদ্বাস্তু
লতা – মোহিতবাবুর স্ত্রী
গিরিশবাবু – লতার বাবা
ফাদার ফিলিপট – মেথডিস্ট চার্চের বিশপ
বেঞ্জামিন দাস – অধস্তন পাদরি
অজয় – হলুদমোহন ক‍্যাম্পের কর্মচারী
সুরথ – ব‍্যাঙ্ক কর্মচারী
শ্রীকান্ত – হলুদ মোহন ক‍্যাম্পে উদ্বাস্তু
বিন্দা – শ্রীকান্তর স্ত্রী
মালতী – গাঙ্গুলীমশাইয়ের বড় মেয়ে
সৌম‍্য – গুহগিন্নীর ছেলে (২০বছর)।