ভিডিও দেখুন
বঙ্গদর্শন পত্রিকা
‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা প্রকাশ বাংলা সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়, ‘সমাগত রাজবদুন্নতধ্বনিঃ’ অর্থাৎ আষাঢ়ের বর্ষণের মতো চারিদিকে উদ্বেলিত করে এর আবির্ভাব।
১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র বহরমপুরে বদলি হন এবং সেখানে সাহিত্যিক মনীষী ও পন্ডিতদের একটি সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে প্রত্যক্ষ উপস্থিতি বঙ্কিমের পত্রিকা প্রকাশের ভাবনাকে আরো পুষ্ট করে এবং তিনি বঙ্গদর্শন পত্রিকা প্রকাশে উদ্যোগী হন।
◆ পত্রিকা প্রকাশ ◆
১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে (১২৭৯ বঙ্গাব্দে) ১লা বৈশাখ বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদনায় ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা কলকাতার ভবানীপুর থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়।
‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা প্রকাশের আগে ২৯.০৩.১৮৭২ সালে ‘এডুকেশন গেজেট‘ এবং ‘সাপ্তাহিক বার্ত্তাবহ’ এ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশিতব্য এই পত্রিকা সম্পর্কে লেখা হয় –
বঙ্গদর্শন
(মাসিক পত্রিকা ও সমালোচনা)
আগামী ১লা বৈশাখ হইতে প্রচারিত হইবে।
◆ প্রথম সংখ্যা◆
‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় প্রথম যে লেখাগুলি প্রকাশিত হয়েছিল তা ক্রমানুসারে দেওয়া হল –
১) পত্রসূচনা (প্রবন্ধ) – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
২) ভারতকলঙ্ক (ঐ) – বঙ্কিমচন্দ্র
৩) কামিনীকুসুম (কবিতা) – হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
৪) বিষবৃক্ষ (উপন্যাস) – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৫) আমরা বড়লোক (প্রবন্ধ) –
৬) সঙ্গীত (প্রবন্ধ) – বঙ্কিমচন্দ্র ও জগদীশনাথ রায়
৭) ব্যাঘ্রাচার্য্যের বৃহল্লাঙ্গুল (প্রবন্ধ) – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৮) উদ্দীপনা (প্রবন্ধ) – অক্ষয়চন্দ্র সরকর
উল্লেখ্য, ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় বহুরচনার লেখক বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং থাকতেন কিন্তু কোথাও তার নাম উল্লেখ করতেন না।
◆ প্রকাশ্য বিষয় ◆
বঙ্গদর্শন পত্রিকায় সাহিত্য, ধর্ম, ইতিহাস, বিজ্ঞান, তুলনামূলক আলোচনা, ব্যক্তিগত প্রবন্ধ এমনকি বহুগ্রন্থের ও সাময়িক পত্রের সমালোচনাও প্রকাশিত হত।
তবে রচনার পরিশুদ্ধতা ও সুষ্ঠতার জন্য সম্পাদক হিসাবে বঙ্কিমচন্দ্র অন্যের রচনা সংশোধন করে প্রকাশ করতেন পত্রিকায়। জানা যায়, একমাত্র রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ছাড়া আর সকল রচনাতেই অল্পবিস্তর হস্তক্ষেপ করেছেন।
◆ বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদনা ◆
বঙ্কিমচন্দ্র ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন মোট ৪বছর, ১২৭৯ বঙ্গাব্দে বৈশাখ থেকে ১২৮২ বঙ্গাব্দের চৈত্র পর্যন্ত, ৪৮ মাসে ৪৮ সংখ্যা, পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৮, ৮ পৃষ্ঠার ফর্মার সর্বসমেত ৬ ফর্মার পত্রিকা।
এই সময় ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার পাতা যাদের রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছিল – বঙ্কিমচন্দ্র, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য্য, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয়চন্দ্র সরকার, দীনবন্ধু মিত্র, নবীনচন্দ্র সেন, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
১২৮২ সালের চৈত্র মাসের পর বঙ্কিমচন্দ্র চিরকালের মত বঙ্গদর্শনের সম্পাদকীয় দায়িত্ব থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। চন্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্কিম স্মৃতি থেকে জানা যায়, একা হাতে বঙ্গদর্শনের বিপুল সংখ্যক রচনা প্রকাশের শ্রমজনিত ক্লান্তি ও ব্যাপক সংখ্যক সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে সময়ের অভাফ শেষ পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্রের মানসিকতায় পত্রিকা প্রকাশের উৎসাহকে স্তিমিত করে দেয়। এ সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র জানান – ” ইদানীংকালে বঙ্গদর্শনের প্রায় তিনভাগ লেখার ভার আমার ওপর পড়েছিল।”
◆ পরবর্তী সম্পাদনা ◆
বঙ্কিমচন্দ্রের পরেও বঙ্গদর্শন পত্রিকা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে তবে স্থায়ীত্ব লাভ করেনি।
● সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় – বঙ্গদর্শনের পঞ্চম বর্ষ ১২৮৪ বঙ্গাব্দ থেকে ১২৮৯ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যা পর্যন্ত সঞ্জীবচন্দ্র পত্রিকার সম্পাদনা করেন। যদিও এর মধ্যে ১২৮৬ বঙ্গাব্দে পত্রিকার কোনো সংখ্যা প্রকাশিত হয়নি।
● শ্রীশচন্দ্র মজুমদার – ১২৯০ বঙ্গাব্দের কার্ত্তিক মাসে বঙ্কিমচন্দ্রের সম্মতিতে শ্রীশচন্দ্র মজুমদার বঙ্গদর্শনের ভার নেন তবে ১২৯০এর মাঘ সংখ্যার পর পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।
● রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – ১৩০৮ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘নবপর্যায় বঙ্গদর্শন‘ নামে পত্রিকা প্রকাশের ভার নেন। রবীন্দ্রনাথ নবপর্যায় বঙ্গদর্শন এর দায়িত্বে ছিলেন ৫ বছর, ১৩০৮ – ১৩১৫ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত।