পাঁটা – ঈশ্বর গুপ্ত
প্রশ্নোত্তর আলোচনা
রসভরা রসময় রসের ছাগল।
তোমার কারণে আমি হয়েছি পাগল।।
স্বর্ণকুঁকী রত্নগর্ভা জননী তোমার।
উদরে তোমার ধরে ধন্য গুণ তার।।
তুমি যার পেটে যাও সেই পুণ্যবান্।
সাধু সাধু সাধু তুমি ছাগীর সন্তান।।
ত্রিতাপেতে তরে লোক তব নাম নিয়া।
বাঁচাল দক্ষের প্রাণ নিজ মুন্ডা দিয়া।।
চাঁদমুকে চাঁপদাড়ি গালে নাই গোঁপ।
শৃঙ্গ খাড়া ছাড়া ছাড়া লোমে লোমে খোপ।।
সে সময়ে অপরূপ মনোলোভা শোভা।
দৃষ্টিমাত্র নেড়ে গাত্র কথা কয় বোবা।।
স্বর্গ এক উপসর্গ ফল তাহে কলা।
দিবানিশি প’ড়ে থাকি ধ’রে তার গলা।।
চারি পায়ে ছাঁদ দিয়া তুলে রাখি বুকে।
হাতে হাতে স্বর্গ পাই বোকা গন্ধ সুঁকে।।
শুধু যায় পেট ভ’রে পাটারাম দাদা।
ভোজনের কালে যদি কাছে থাক বাঁধা।।
শাদা কাল কটা রূপ বলিহারি গুণে।
সাত পাত ভাত মারি ভ্যা ভ্যা রব শুনে।।
মহিমায় নাম ধর শ্রীমহাপ্রসাদ।
তোমার প্রসাদে যায় সকল বিষাদ।।
জ্বাল দিতে কাল যায় লাল পড়ে গালে।
কাটনা কামাই হয় বাটনার কালে।।
ইচ্ছা করে কাঁচা খাই সমুদয় লয়ে।
হাড় শুদ্ধ গিলে ফেলি হাড়গিলে হয়ে।।
মজাদাতা অজা তোর কি লিখিব যশ?
যত চুসী তত খুসী হাড়ে হাড়ে রস।।
গিলে গিলে ঝোল খায় আস্বাদন-হত।
তাদের জীবন বৃথা দাঁতপড়া যত।।
এমন পাঁটার মাস নাহি খায় যারা।
মরে যেন ছাগী-গর্ভে জন্ম লয় তারা।।
দেখিয়া ছাগের গুণ করে অভিমান।
হইলেন বরারূপ নিজে ভগবান্।।
তথাচ যবন হিন্দু করে অপমান।
ইংরাজে কেবল তাঁর রাখিয়াছে মান।।
হোটেল বিক্রয় হয় নাম ধরে হ্যাম।
পচাগন্ধে প্রাণ যায় ড্যাম্ ড্যাম্ ড্যাম্।।
অদ্যাপি শ্রীহরি সেই অভিমান লয়ে।
লুকায়ে আছেন জলে কুর্ম্ম মীন হয়ে।।
কচ্ছপ সে জুজুবুড়ী তারে কেবা যাচে ?
মাছে কিছু আছে মান বাঙ্গালীর কাছে।।
কিন্তু মাছ পাঁটার নিকটে কোথা রয় ?
দাসদাস তস্য দাস তস্য দাস নয়।।
এক, দুই, তিন, চার, ছেড়ে দেহ ছয়।
পাঁচেরে করিলে হারে রিপু রিপু নয়।।
তঞ্চ ছাড়া পঞ্চ সেই অতি পরিপাটী।
বাবু সেজে পাটির উপরে রাখি পাটি।।
পাত্র হয়ে পাত্র লয়ে ঢোলে মারি চাঁটি।
ঝোলমাখা মাস নিয়া, চাটি ক’রে চাটি।।
টুকি টাকি টুক টুক মুখে দিই মেটে।
যত পাই তত খাই সাধ নাহি মেটে।।
ঝোলের সহিত দিলে গোটা গোটা আলু।
লক লক লোলো লোলো জিব হয় লালু।।
সাবাস সাবাস রে সাবাসী তোরে অজা।
ত্রিভূবনে তোর কাছে কিছু নাই মজা।।
কোন অংশে বড় নয় কেহ তোর চেয়ে।
এত গুণ ধরিয়াছ পাতা ঘাস খেয়ে।
মহতের কার্য্য কর গরিবানা চেলে।
না জানি কি হত আরো ঘৃত ক্ষীর খেলে।।
বিশেষ মহিমা তব কি কব জবানী।
জানেন কিঞ্চিৎ গুণ ভাঁড়ে মা ভবানী।।
বৃথায় তিলক ধরে ছাই ভস্ম খেয়ে।
কসাই অনেক ভাল গোঁসায়ের চেয়ে।।
পরম বৈষ্ণবী যিনি দক্ষের দুহিতা।
ছাগ-মাংস-রক্ষে তিনি সদাই মোহিতা।।
ছালে এক মন্ত্র বলি বলিদান লয়ে।
খান দেবী পিতৃ-মাথা বিশ্বমাতা হয়ে।।
দক্ষযজ্ঞে প্রাণ ত্যজি খন্ড খন্ড হয়ে।
করিলেন ভুষ্টিনাশ কালীঘাটে রয়ে।।
প্রতি কোপে যত পাঁটা বলিদান করে।
দেবী-বরে জন্মে তারা হালদার ঘরে।।
এক জন্মে মাংস দিয়া আর জন্মে খায়।
কলির দেবল হয়ে কালীগুণ গায়।।
প্রণমামি মা কালিকা, তোমার চরণে।
পেট ভরে পাঁটা দিও যত যাত্রিগণে।।
প্রণমামি কালীঘাট যথা মাতা কালী।
প্রণমামি মুদি-পদে বেচে যারা ডালি।।
ধন্য ধন্য কর্ম্মকার ধন্য তুমি খাঁড়া।
প্রণমামি তব পদে দিয়া গাত্র নাড়া।।
এমন সুখে ছাগে কর যেই দ্বেষ।
তাড়াইব তারে আমি ছাড়াইব দেশ।।
বাছিয়া পাঁটার হাড় গেঁথে তার মালা।
বানাইব কুঁড়াজালি দিয়া ছাগ-ছালা।।
নামাবলী বহির্বাস নিয়া করতলে।
ভাল ক’রে ছোপাইব রুধিরের জালে।।
সাজাইব গোঁড়াগণে দিয়া রক্ত-ছাব।
পশু-গন্ধে পশুদের যাবে পশুভাব।।
ফের যদি করে দ্বেষ হয়ে প্রতিবাদী।
ঘুচাব গোঁড়ামী রোগ দিয়া ছাগ-নাদী।।
অনুমতি কর ছাগ উদরেতে গিয়া।
অন্তে যেন প্রাণ যায় তব নাম নিয়া।।
মুখে বলি গঙ্গা-নারায়ণ-ব্রহ্ম-হরি।
পাঁটামাংস খেতে খেতে বিছানায় মরি।।
তাহাতেই মুক্তি লাভ যুক্তি নাই আর।
নিতান্ত কৃতান্ত হয় পদানত তার।।
হায় এ কি অপরূপ বিধাতার খেলা।
শুদ্ধ গাত্রে কিছুমাত্র নাহি যায় ফেলা।।
লোম তুলি করি তুলি রঙ্গে রঙ্গ ভরি।
শ্রীরাধা-শ্রীকৃষ্ণ-রূপ সুখে চিত্র করি।।
চিত্রকরে চিত্র করে দিয়া সূক্ষরেখা।
দেবমূর্ত্তি অবয়ব সব যায় লেখা।।
নানারূপ যন্ত্র হয় ছাগলের ছালে।
শ্রীহরি-গৌরাঙ্গ-গুণ বাজে তালে তালে।।
ঢাক কাঁড়া নহবৎ মৃদঙ্গ মাদোল।
তবলা অবলাপ্রিয় ঢোল আর খোল।।
এক চর্ম্মে বহু যন্ত্র বাদ্য তায় কল।
নেড়ানেড়ী গোঁড়াদের ভিক্ষার সম্বল।।
কোপ্নীধারী প্রেমদাস সেবাদাসী নিয়ে।
দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে খঞ্জনী বাজিয়ে।।
সাধ্য কার এক মুখে মহিমা প্রকাশে।
আপনি করেন বাদ্য আপনার নাশে।।
হাড়িকাষ্ঠে ফেলে দিই ধরে দুটি ঠ্যাঙ।
সে সময়ে বাদ্য করে ছ্যাডাঙ ছ্যাডাঙ।।
এমন পাঁটার নাম যে রেখেছে বোকা।
নিয়ে সেই বোকা নয় ঝাড়বংশ বোকা।।
ভ্রমণে যে ভবোদয় নদ-নদী-পথে।
রচিলাম ছাগ-গুণ যথা সাধ্য মতে।।
প্রতিদিন প্রাতে উঠি করে শুদ্ধ মন।
ভক্তিভাবে এই পদ্য পড়িবে যে জন।।
বিচিত্র পুষ্পের রথে পাঁটা পাঁটা ব’লে।
সাতান্ন পুরুষ তার স্বর্গে যাবে চ’লে।।
■ প্রশ্নোত্তর আলোচনা –
১) ‘পাঁটা’ কবিতার চরণ সংখ্যা কত ?
✒️ ১২৪
২) ‘পাঁটা’ কবিতায় ‘পাঁটা’ শব্দটি কতবার আছে ?
✒️ ৯বার
৩) “_ _ রসের ছাগল” – ‘পাঁটা’ কবিতা অনুসরণে শূন্যস্থান পূরণ করো।
✒️ রসভরা রসময়
৪) “বাঁচালে _ এর প্রাণ নিজ মুন্ড দিয়া” – পাঁটা’ কবিতা অনুযায়ী কার প্রাণ ছাগল বাঁচিয়েছিল ?
✒️ দক্ষের
৫) কবি পাঠার ভ্যা ভ্যা রব শুনে কত পাত ভাত খেয়ে ফেলেন ?
✒️ সাত পাত
৬) ছাগের গুণ দেখে অভিমান করে ভগবান কিসের রূপ নিলেন ?
✒️ বরারূপ
৭) পাঁটা’ কবিতায় পাঠা হোটেলে কী নামে বিক্রি হয় ?
✒️ হ্যাম
৮) পাঁটা’ কবিতা অনুযায়ী কারা পাঠার মান রেখেছেন ?
✒️ ইংরাজ
৯) পাঁটা’ কবিতায় কাকে জুজুবুড়ী বলা হয়েছে ?
✒️ কচ্ছপ
১০) পাঁটা’ কবিতা অনুযায়ী শ্রীহরি অভিমানী হয়ে জলে কী রূপে লুকিয়ে আছেন ?
✒️ কুর্ম্ম মীন হয়ে
১১) “খান দেবী পিতৃ-মাথা বিশ্বমাতা হয়ে” – এখানে দেবী কে ?
✒️ দক্ষের দুহিতা
১২) “প্রতি কোপে যত পাঁটা বলিদান করে।
দেবী বরে জন্মে তারা _ ঘরে।” – পাঁটা’ কবিতা
অনুযায়ী পূরণ করো।
✒️ হালদারের
১৩) পাঁটা’ কবিতায় কবি দেবীর কোন পীঠস্থানের উল্লেখ করেছেন ?
✒️ কালীঘাট
১৪) পাঁটা’ কবিতায় কবি গোঁড়ামী রোগ কী দিয়ে ঘোচাবেন ?
✒️ ছাগ নাদী
১৫) পাঁটা’ কবিতায় কবি কুঁড়াজালি বানাবেন কী দিয়ে ?
✒️ ছাগছাল
১৬) পাঁটা’ কবিতায় কোন কোন দেব দেবীর উল্লেখ আছে ?
✒️ কালি, শ্রীহরি, শ্রীরাধা, দক্ষ রাজা
১৭) পাঁটা’ কবিতায় কবি ঈশ্বর গুপ্ত কয়টি বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ করেছেন ?
✒️ ৮টি
১৮) পাঁটা’ কবিতায় প্রেমদাস সেবাদাসী কোন বাদ্যযন্ত্র বাজায় ?
✒️ খঞ্জনী
১৯) পাঁটা’ কবিতায় কোন বাদ্যযন্ত্রটির একাধিকবার উল্লেখ আছে ?
✒️ ঢোল
২০) ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, মাদল, তবলা – বাদ্যযন্ত্রগুলি ক্রমানুসারে সাজাও।
✒️ ঢাক – মৃদঙ্গ – মাদোল – তবলা – ঢোল
২১) ঈশ্বর গুপ্তের পাঁটা’ কবিতায় যে ভক্তিভাবে পাঁটা কবিতা পড়বে তার কতপুরুষ স্বর্গে যেতে পারবে ?
✒️ ৫৭ পুরুষ
২২) “আপনি করেন বাদ্য আপনার নাশে” – বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
✒️ ঢাক ঢোল সহ বলিদানের কথা বলা হয়েছে
২৩) “এক দুই তিন চার ছেড়ে দেহ ছয়” – বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
✒️ ষড়রিপু
২৪) বিবৃতি : মরে যেন ছাগী গর্ভে জন্ম লয় তারা।
✒️ কারণ – এমন পাঁটার মাস নাহি খায় যারা।
২৫) মন্তব্য – হইলেন বরারূপ নিজে ভগবান।
✒️ যুক্তি – দেখিয়া ছাগের গুণ করে অভিমান।
২৬) মন্তব্য – অদ্যপি শ্রীহরি সেই অভিমান লয়ে/লুকায়ে আছেন জলে কুর্ম্ম মীন হয়ে।
✒️ যুক্তি – হোটেল বিক্রয় হয় নাম ধরে হ্যাম / পচাগন্ধে প্রাণ যায় ড্যাম্ ড্যাম্ ড্যাম।
২৭) শব্দসংখ্যা –
ছাগল – ২, ছাগ – ৮, ছাগী – ২
পাঁটা – ৯, মাংস – ২, দক্ষ – ৩, হাড় – ৫
২৮) “স্বর্ণকুঁকী রত্নগর্ভা জননী তোমার/উদরে তোমায় ধরে ধন্য গুণ তার” – কার কথা বলা হয়েছে ?
✒️ পাঁটা
২৯) পাঁটা’ কবিতার বিপরীতার্থক শব্দ উল্লেখ করো।
✒️ দিবানিশি, শাদা কাল
৩০) পাঁটা’ কবিতায় একটি ফলের উল্লেখ আছে। সেটি কী ?
✒️ কলা