অচলায়তন নাটক – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রশ্নোত্তর আলোচনা
★ প্রকাশ ★
● ‘অচলায়তন’ নাটকটি রূপক সাংকেতিক নাটক।
● ‘অচলায়তন’ নাটকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন – ১৫ই আষাঢ়, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ, শিলাইদহ থেকে।
● ১৬ই জুন, ১৯১১ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিতে লিখেছেন – “নাটকটি লিখতে শুরু করেছি”, ২১শে জুন,১৯১২ তে লেখেন – নাটকটি শেষ করেছেন।
● ‘অচলায়তন’ নাটকটি প্রথম ২রা আগষ্ট, ১৯১২ খ্রি: প্রবাসী পত্রিকায় (আশ্বিন সংখ্যা) প্রকাশিত হয়।
● অচলায়তন নাটকের প্রথম অভিনয় যোগ্য সংস্করণ হয় ১৯১৮ সালে, ‘গুরু’ নামে।
অচলায়তন ও গুরু :-
◆ অচলায়তন নাটকে মোট দৃশ্য সংখ্যা - ৬
গুরু নাটকে দৃশ্যসংখ্যা - ৪।
◆ অচলায়তন নাটকের তৃণাঞ্জন চরিত্রটি গুরু নাটকে নেই।
◆ 'অচলায়তন' নাটকের শোণপাংশু চরিত্রের বদলে 'গুরু' নাটকে যূণক চরিত্রটি এসেছে।
◆ অচলায়তন নাটক থেকে গুরু নাটকেমোট ৬ টি গান ( প্রথম দৃশ্যে - ২টি, দ্বিতীয় দৃশ্যে - ৩টি, তৃতীয় দৃশ্যে - ১টি) গৃহীত হয়েছে।
★ দৃশ্য সংখ্যা ★
● ‘অচলায়তন’ নাটকের মোট দৃশ্য সংখ্যা – ৬
প্রথম দৃশ্য – গৃহ অচলায়তন
দ্বিতীয় দৃশ্য – পাহাড় – মাঠ
তৃতীয় দৃশ্য – অচলায়তন
চতুর্থ দৃশ্য – দর্ভক পল্লী
পঞ্চম দৃশ্য – অচলায়তন
ষষ্ঠ দৃশ্য – দর্ভক পল্লী
★ সঙ্গীত সংখ্যা ★
অচলায়তন নাটকের মোট সঙ্গীত সংখ্যা – ২৪
◆ প্রথম দৃশ্য –
১) তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে
গায়ক – পঞ্চক
২) দূরে কোথায় দূরে দূরে
গায়ক – পঞ্চক
◆ দ্বিতীয় দৃশ্য –
৩) এ পথ গেছে কোনখানে গো কোনখানে
গায়ক – পঞ্চক
৪) আমরা চাষ করি আনন্দে
গায়ক – শোণপাংশু
৫) কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন
গায়ক – শোণপাংশু
৬) সব কাজে হাত লাগাই মোরা সব কাজেই
গায়ক – শোণপাংশু
৭) ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে
গায়ক – পঞ্চক
৮) এক একলা মোদের হাজার মানুষ
গায়ক – শোণপাংশু
৯) যা হবার তা হবে
গায়ক – দাদাঠাকুর
১০) আমি কারে ডাকি গো
গায়ক – পঞ্চক
১১) বুঝি এল বুঝি এল ওরে প্রাণ
গায়ক – দাদাঠাকুর
১২) আজ যেমন করে গাইছে আকাশ
গায়ক – পঞ্চক
১৩) হারে রে রে রে রে
গায়ক – পঞ্চক
◆ তৃতীয় দৃশ্য –
১৪) ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে
গায়ক – পঞ্চক
◆ চতুর্থ দৃশ্য –
১৫) এই মৌমাছিদের ঘর ছাড়া
গায়ক – পঞ্চক
১৬) ও কূলের কূল, ও অগতির গতি
গায়ক – দর্ভক
১৭) আমরা তারে জানি, তারই সাথের সাথি
গায়ক – দর্ভক
১৮) সকল জনম ভরে ও মোর দরদিয়া
গায়ক – পঞ্চক
১৯) পারের কান্ডারী গো এবার ঘাট কি দেখা যায় ?
গায়ক – দর্ভকদল
২০) উতল ধারা বাদল ঝরে
গায়ক – দর্ভক দল
ভুলে গিয়ে জীবন মরণ – থেকে – আচার্য
এরপর সকলে একসঙ্গে
◆ পঞ্চম দৃশ্য –
২১) আলো আমার আলো ওগো
গায়ক – বালক
২২) যিনি সকল কাজের কাজি
গায়ক – শোণপাংশু
◆ ষষ্ঠ দৃশ্য –
২৩) আমি যে সব নিতে চাই সব নিতে ধাই রে
গায়ক – পঞ্চক
২৪) আর নহে আর নয়
গায়ক – পঞ্চক
গায়ক গানের সংখ্যা
পঞ্চক ১২
শোণপাংশু ৫
দাদাঠাকুর ২
দর্ভক ৪
বালক ১
দৃশ্য গান সংখ্যা
১ম দৃশ্য ২
২য় দৃশ্য ১১
৩য় দৃশ্য ১
৪র্থ দৃশ্য ৬
৫ম দৃশ্য ২
৬ঠ দৃশ্য ২
★ অচলায়তন নাটকের মন্ত্র ★
মৃত্যু ভয় – অমিতায়ুর্ধারিণী
শত্রুভয় – মহাসহস্রপ্রমর্দিনী
ঘরের ভয় – গৃহমাতৃকা
বাইরের ভয় – অভয়ংকরী
সাপের ভয় – মহাময়ূরী
বজ্র ভয় – বজ্রগান্ধারী
ভূতের ভয় – চন্ডভট্টারিকা
চোরের ভয় – হরাহরহৃদয়া
★ প্রাসঙ্গিক তথ্য ★
● রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৌদ্ধ সাহিত্যের ‘দিব্যাবদানমালা’র অন্তর্গত পঞ্চকের কাহিনি থেকে গ্রহণ করেছেন।
● নাটকের অদীনপুণ্য চরিত্রটির কথা ‘বোধিসত্ত্বাবদান কল্পলতা’য় আছে।
● একজটা, মহামারীচি, পর্ণশর্বরী, মহাময়ূরী, মহাভৈরবী এরা সবাই মহাযান বৌদ্ধ দেবায়তনের দেবদেবী।
● অভয়ঙ্করী, চন্দ্রভট্টারিকা, বজ্রবিদারন, গৃহমাতৃকা প্রভৃতি মন্ত্রগুলি রাজেন্দ্রলাল মিত্রের ‘The Sanskrit Buddhist Literature of Nepal” থেকে গৃহীত।
● নাটকে পঞ্চক ও মহাপঞ্চক চরিত্রের সঙ্গে অবদান শতকের পন্থক ও মহাপন্থকের সাদৃশ্য আছে। অবদানশতকে পন্থক মহাপন্থকের কনিষ্ঠ ভাই।
● প্রমথনাথ বিশী পঞ্চক ও মহাপঞ্চক চরিত্রদুটিকে ‘রূপকারূঢ়’ বলেছেন। ‘মহাপঞ্চক সাধনার নিষ্ঠা ও কঠোরতার দিক, পঞ্চক সাধনার সরসতা ও প্রাণ’। সাধনার পূর্ণতার জন্য কঠোরতার সঙ্গে সরসতার, নিষ্ঠার সঙ্গে প্রাণের মিলন প্রয়োজন।
● বৌদ্ধসাহিত্যে দাদাঠাকুরের স্থানে বুদ্ধদেব স্বয়ং গুরুর আসনে অধিষ্ঠিত।
● শোণপংশু – সংকীর্ণ বা বদ্ধকর্মের প্রতীক
দর্ভক – ভাবসর্বস্ব দুর্বল ভক্তির প্রতীক।
● ‘অচলায়তন’ নাটকের আরম্ভ গ্রীষ্মকালে, শেষ বর্ষাকালে।
● ১৩১৮ সালে আষাঢ় মাসে শিলাইদহে অবস্থানকালে বর্ষা ঋতুর উপযোগী ছেলেদের জন্য একটা নাটক করার অভিপ্রায়ে ‘অচলায়তন’ নাটকটি রচিত হয়।
● ‘ঘরেতে ভ্রমর এল’ গানটি ‘অচলায়তন’ নাটক ছাড়া ‘তাসের দেশ’ নাটকে ব্যবহৃত হয়।
—-
শুভ কামনা
Thank you so much 💗