✒️ চর্যাপদ ✒️

পর্ব – ১

● ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালা থেকে একটি গ্রন্থ খন্ডিত অবস্থায় পেয়েছিলেন।
● সাধারণত প্রাচীন পুঁথির শেষে নাম লেখা থাকে , কিন্তু এই পুঁথির শেষ পাতা পাওয়া যায়নি। তাই এর নাম জানা যায়নি।
● হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত‍্য পরিষৎ থেকে প্রকাশ করার সময় এর নাম দেন – “চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়”।

নামকরণ

পুঁথিটির গীত ও টীকা অংশের ওপর নির্ভর করে অনেকে নানা নাম দিয়েছেন।

১) চর্যাচর্য্য :-
● পুঁথিটির ওপর সাদা পৃষ্ঠায় (পত্র ১ক) লেখা ছিল।
● লেখাটি নাগরী হরফে লেখা।
● সম্ভবত পরবর্তীকালে লেখা হয়েছিল।
● পুরো লেখাটি ছিল –
চর্য্যাচর্য্যটীকা, মূল ব‌ই – চর্যাচর্য্য।

২) চর্যাগীতিকোষ :-
● চর্যাপুঁথির তিব্বতি অনুবাদের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা।
● মূল পুঁথি পাওয়া যায়নি।
● মূলের সংস্কৃত টীকা লেখেন মুনিদত্ত, ‘নির্মলগিরাটীকা’। এর তিব্বতি অনুবাদ করেন কীর্তিচন্দ্র।
● মুনিদত্তের টীকার নাম – ‘চর্যাগীতিকোষবৃত্তি’। বৃত্তি ~ টীকা, তাই মুল পুঁথি ~ চর্য্যাগীতিকোষ।

৩) আশ্চর্য্যচর্য্যাচয় :-
● হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর পুঁথির মঙ্গলাচরণ শ্লোকে ( পত্র ১ – খ,  লাইন ১- ২)  নামটি পাওয়া যায়।

পরবর্তীকালের পন্ডিতেরা গ্রন্থটির নানা নামকরণ করেছেন।

চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়           হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সম্পাদিত ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা’ গ্রন্থের প্রথম গ্রন্থের নাম দেন – ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’।

আশ্চর্যচর্য্যাচয়                    বিধুশেখর শাস্ত্রী

◆ প্রাপ্ত পুঁথির মঙ্গলাচরণ থেকে প্রাপ্ত। নেপাল রাজ দরবার পুঁথিশালার ক‍্যাটালগে এই নামটি আছে।

চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়            প্রবোধচন্দ্র বাগচী

চর্য্যাপদ                             প্রবোধচন্দ্র বাগচী

◆ ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের ৩০ নং জার্নালে মুদ্রিত এক প্রবন্ধে উল্লেখিত।

চর্য্যাগীতিপদাবলী             ড. সুকুমার সেন

◆ পদ অর্থাৎ ছোটোগান, অনেকগুলি পদের সংকলন তাই নাম – পদাবলী।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ‍্যালয় থেকে এই নামে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

চর্যাগীতিকোষ             ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী         
                                         ও শান্তিভিক্ষু
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী থেকে যে গ্রন্থ সম্পাদনা করেন তাতে উল্লেখ করা হয়।

চর্যাগীতিকোষ               ড. নীলরতন সেন

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মূল পুঁথির বাংলা ও ইংরাজি ফটোমুদ্রণ সংস্করণে গ্রন্থ নামে উল্লেখ আছে।

চর্য্যাগীতি                  ড. শশীভূষণ দাশগুপ্ত

১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধধর্ম ও চর্যাগীতি নামে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

চর্য্যাগীতিকা      অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ‍্যায়

১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সাহিত‍্যের ইতিব‍্যত্তের প্রথম খন্ডে প্রকাশিত হয়।

রচনাকাল


চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে পন্ডিতরা একমত নন, এখানে কয়েকজন পন্ডিতের নাম ও তাদের মতানুসারে চর্যার রচনাকাল উল্লেখ করা হল –

১) সুনীতিকুমার চট্টোপাধ‍্যায় – ১০ম – ১২শ শতাব্দী
২) বিনয়তোষ ভট্টাচার্য্য – ৮ম শতাব্দী
৩) মহম্মদ শহীদুল্লাহ – ৭ম শতাব্দী
৪) রাহুল সাংকৃত‍্যায়ন – ৮ম – ১২শ শতাব্দী
৫) সুকুমার সেন – ১০ম-১২শ শতাব্দী
৬) জাহ্নবী কুমার চক্রবর্ত্তী – ৮ম – ১১শ শতাব্দী
৭) সুখময় গঙ্গোপাধ‍্যায় – ৮ম – ১১শ শতাব্দী

মূল পুঁথির পূর্ণাঙ্গ পরিচয়


ড. নীলরতন সেন ১৯৭৮ খ্রি: মূল চর্যাপুঁথিটির ফটো মুদ্রণ সংস্কার গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এর নাম – চর্যাগীতিকোষ। ইংরাজিতেও এক‌ই নামে ছাপা হয়েছে। নীলরতন সেন মূল চর্যাপুঁথির যে সকল বর্ণনা দিয়েছেন –
১) তালপাতার পুঁথি, দুপৃষ্ঠাতেই লেখা।
২) প্রতি পাতার মাঝখানে সুতোর বাধার জন‍্য ছিদ্র আছে। সেই ছিদ্রর চারপাশে ফাঁকা আছে, কিছু লেখা নেই।
৩) প্রতি পাতার আয়তন ১২পূর্ণ৩/৪ ইঞ্চি × ১পূর্ণ ৭/৮ ইঞ্চি।
৪) প্রতি পৃষ্ঠাতেই ৫টি করে লাইন লেখা আছে। তবে ৬৫খ পত্রে ৬টি লাইন আছে।
৫) প্রাপ্ত পুঁথিতে পাতা ছিল ১ থেকে ৬৯, তবে মাঝের ৩৫ থেকে ৩৮ এবং ৬৬ – এই পাঁচটি পাতা পাওয়া যায়নি এবং ৬৯ পাতার পর আর কোনো পাতা ছিল কিনা জানা যায়নি।
৬) নীলরতন সেন প্রাপ্ত পুঁথির ওপরে সাদা পৃষ্ঠায় লেখা আছে – ‘চর্য্যাচর্য্যটীকা’, – নাগরী হরফে লেখা, পুঁথির কালির তুলনায় এর কালি বেশ উজ্জ্বল ছিল তাই মনে করা হয় এটি পরবর্তীকালে লেখা।
৭) সাদা পৃষ্ঠাতে লেখা ছিল – “সম্বৎ ৭৪১ ভাদ যম বাতি।” অর্থাৎ ৭৪১ সম্বৎ বা ১৬২০/২১ খ্রি:। পন্ডিতদের অনুমান এই দিনেই চর্যাপদের পুঁথিটি নেপালের রাজদরবারে সংগৃহীত হয়েছিল।