স্নানযাত্রা – ঈশ্বর গুপ্ত

গুণে বলি হারি যাই     
সাধু সাধু সাধু ভাই
     ধরাবাসী যত ধুতি পরা।
আমাদের এই বঙ্গ,
কোন ক্রমে নহে ভঙ্গ
     নানা রাগ-রঙ্গ-রসভরা।।
বৃষপূর্ণিমার দিবা,
অপার আনন্দ কিবা
     মাহেশে সুখের মহামেলা।
স্নানযাত্রা প্রতি বর্ষে,
এই দিন মহা হর্ষে,
     মেলা পেয়ে করে সবে খেলা।।
কিবা ধনী কিবা দীন,
সবার সুখের দিন
    আয়োজন কত দিন আগে।
সবিশেষ দেখি বেশ
ইচ্ছামতো করো বেশ
   যাহার যেমন মনে লাগে।।
বন্ধ হয়ে আশা ফাঁদে,
কত ছাঁদে কত সাধে
    গত নিশি করিয়াছে গত।
মুখে আমোদের রব
অধিক আমোদী সব
     বিশেষত ছোটলোক যত।।
চরণে বিলাতি জুতি,
পরিলেন ধোপ ধুতি
     হরিলেন পৈতৃক তসর।
চাঁপাতলা শূন‍্য করি,
যান যত নরহরি
     ঘস ঘস ঘসর ঘসর।।
ঘাটে গিয়া কত চোট
সুখেতে সাজান বোট
     বাঁধে কোট তাহার ভিতর।
দলে দলে গলাগলি,
দলে দলে দলাদলি
     বলাবলি হয় পরস্পর।।
ধুতির কিনারা কালা,
গলায় পরিয়া মালা,
      রোঘোখেকো রোঘো সব সাজে।
চুল করে প‍্যানচিট,
হয় ফিট কত চিট
      মাঝে মাঝে চিট তার মাঝে।।
একমাত্র, **
জলধর প্রেমছাত্র
      শত শত আছে তাই ঘেরে।
রঙ্গিণীর ঘোর ঘটা
হেরিয়া রূপের ছটা
    লক্ষ্মীপ্রিয় পক্ষী যায় হেরে।।
চোপার কে পারে আর
খোঁপায় ফুলের হার
      কোপায় কথা হেন কাঠ।
কত হাসে কত ভাষে,
ঘুরে ঘুরে চারি পাশে
    একা মাগী লাগায়েছে হাট।।
রঙ্গরস ঠারে ঠারে
সাজায় সাজায় তারে
     পুড়ে মরে দৃষ্টিপোড়া বিষে।
মনে এই দুখ লাগে
পড়িয়াছে নানা তাগে
      গঙ্গালাভ হবে তার কিসে।।
যাবার কিঞ্চিৎ আগে
খাবার তল্লাশ লাগে
    আবার কে ভূমে দেয় পদ।
আম্র তুলে কত গন্ডা
কেহ আনে লুচি মন্ডা
      ষণ্ডা সব ভাবে গদগদ।।
‘নোচন গিয়াছে ঘর,
নক্ষীর হয়েছে জ্বর
     লৈকা চড়ি আমরা সবাই।
লিতাই লারাণ ওই,
লৈতুন ইয়ার ক‌ই
    বলসিস লবীন লবাই।।

এ ওরে ফর্মাস করে,
একজন রাগ ভরে
     কহিতেছে করি খচো মচো।
বোতলের করি নাম
‘লড়‌ওম মোড় লাম
    লল ব‌ওয়া লৈবচো লৈবচো।।’
খুলে তরী কত ধূম,
ধূম করে উঠে ধূম..
    দেখে ঘুম করিল শ্রীহরি।
কেহ বলে ‘বাবা ভাই,
আমি এক গীত গাই,
     লাচ তোরা লাগর লাগরী।।’
আর আর নীচ জাতি,
বাবু হয়ে রাতারাতি
     মাতামাতি করে কত রূপ।
ফুলায়ে বুকের ছাতি,
যেন নবাবের নাতি,
      হাতি কিনে হয়ে বসে ভূপ।।
সম্ভব যেমন যার,
ব‍্যয় করে সে প্রকার
     কেহ কেহ শুদ্ধ হন ধারে।
ধোবার আনন্দময়
পরধনে বাবু হয়,
     ভাড়া দিয়া সব কর্ম সারে।।
মাতুল নন্দন যারা,
ধনের কুবের তারা,
     জলে জলে, জলে শোভা পায়।
জলে উপার্জন কত
সাহা নয় সাহা যত,
     সাহালম বাদশার প্রায়।।
হাড়ি মুচি যুগি জোলা
কত বা শেখের পোলা
    জাঁকে জাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে চলে।
ঠেলাঠেলি চুলোচুলি
কাঁকে কাঁকে ঝুলোঝুলি
     লোকারণ‍্য জলে আর স্থলে।
স্থলে উঠে দেখি চেয়ে,
কত মদ্দ কত মেয়ে
    পথ ছেয়ে গান গেয়ে যায়।
আগে পাছে পাকাপাকি,
আঁকাআঁকি তাকাতাকি
     ঝাঁকাঝাঁকি স্থান নাহি পায়।
এসে বাড়ি যত রাড়ি,
কাঁকে করি ফেলে হাঁড়ি,
      হাতে পাখা কাঁটাল মাথায়।
কথা কয় ইলিবিলি
মুখেতে পানের খিলি
     গল বয়ে পিক পড়ে গায়।।
ভদ্র যত মন শাদা
পরস্পর করি চাঁদা
    রুচির তরুণী লয়ে ভাড়া।
যাহাতে আসক্তি যাঁর
সেই শক্তি সঙ্গে তাঁর
     গরবেতে গোঁপে দেন চাড়া।।
যথাশক্তি শক্তি – সেবা,
শক্তি বিনা আছে কেবা
     শক্তি ভক্তি সকলের সার।
ভক্তিভাবে যত জীব
শক্তি যোগে হন শিব
     শিবশক্তি পূজে কেবা আর ?
সকলেই ঘোর শাক্ত
কোন ক্রমে নহে ভাক্ত
    সেইরূপ আচার ব‍্যভার।
সহজে সুখের যোগ,
রিপুর পঞ্চম ভোগ,
     আদ‍্য তার করে সহকার।।
* * গায়ে গাটি
তবলার মুখে চাটি
    পরিপাটি খান কষে কষে।
পূর্ণ হল ইচ্ছা যেটা
স্নান আর দেখে কেটা
     স্নান পান এক ঠাঁই বসে।
লম্পট যুবক যারা
বীচ করে ফেরে তারা
    ধীরে ধীরে তীরে চালে ডিঙে।
যেখানে * *
সেইখানে গায় সারি,
    কাকের পশ্চাতে যেন ফিঙে।
আমি যে অভাগা অতি,
স্বভাবত ক্ষীণমতি,
     কোনোকালে মাহেশে না যাই।
ইচ্ছা হেন থাকে জ্ঞান
করিয়া বিভুর ধ‍্যান,
      ঘরে যেন মুক্তিস্নান পাই।

■ প্রশ্নোত্তর আলোচনা –
১) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতাটির চরণ সংখ‍্যা কত ?
★ ১০৪ (মূল কবিতাটি ত্রিপদীতে লেখা)

২) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় ঈশ্বর গুপ্ত কোন বিশেষ উৎসবের উল্লেখ করেছেন ?
★ মাহেশের স্নানযাত্রা

৩) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় কোন বিশেষ তিথির উল্লেখ আছে ?
★ বৃষ পূর্ণিমা

৪) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় ‘স্নানযাত্রা’ শব্দটি কতবার ব‍্যবহৃত হয়েছে ?
★ ১বার

৫) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় ‘স্নান’ শব্দটি কতবার এসেছে ?
★ ২ বার

৬) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় যে বিশেষ বাদ‍্যযন্ত্রটির উল্লেখ আছে তার নাম কী ?
★ তবলা

৭) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় কোন কোন ভগবানের প্রসঙ্গ এসেছে ?
★ শ্রীহরি, কুবের, শিব

৮) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় কোন কোন ফলের উল্লেখ আছে ?
★ আম, কাঁঠাল

৯) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় ‘মাহেশ’ কথাটির উল্লেখ কতবার হয়েছে ?
★ ২বার

১০)  ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় কোন পশুর উল্লেখ আছে ?
★ হাতি

১১) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় বর্ণিত মেলা থেকে মেয়েরা কী কী কিনে আনে ?
★ হাঁড়ি, পাখা, কাঁঠাল

১২) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় কোন বাদশার কথা আছে ?
★ শাহ আলম

১৩) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় শিব কথাটি কতবার উল্লেখ করা হয়েছে ?
★ ২ বার

১৪) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় বর্ণিত জাতিগুলির ক্রমানুসারে সাজাও –
★ হাড়ি – মুচি – যুগি – জোলা

১৫) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় কোন শব্দটির উল্লেখ নেই ?
ঠেলাঠেলি, চুলোচুলি, ঝুলোঝুলি, কোলাকুলি
★ কোলাকুলি

১৬) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় ঈশ্বর গুপ্ত কোথাকার স্নানযাত্রার ছবি তুলে ধরেছেন ?
★ মাহেশের

১৭) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় – স্নান, স্নানযাত্রা, শিব, শক্তি – কোন শব্দটির উল্লেখ বেশিবার হয়েছে ?
★ শক্তি (৬বার)

১৮) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় কাদের আনষ্দ সবথেকে বেশি ?
★ ধোবার

১৯) ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় মুক্তিস্নান শব্দটির কতবার উল্লেখ হয়েছে ?
★ ১বার

২০) মন্তব‍্য – সকলেই ঘোর শাক্ত
                    কোনক্রমে নহে ভাক্ত
                    সেইরূপ আচার ব‍্যভার।
      যুক্তি – সহজে সুখের যোগ
                 রিপুর পঞ্চম ভোগ
                 আদ‍্য তার করে সহকার।

২১) ঈশ্বর গুপ্তের ‘স্নানযাত্রা’ কবিতায় বর্ণিত স্নানযাত্রার সঙ্গে UGC NET বাংলা সিলেবাসে কোন পাঠের সাদৃশ‍্য পাওয়া যায় ?
★ কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প‍্যাঁচার নকশা’-র