তত্ত্ব – ঈশ্বরগুপ্ত
কলেবর কুটীরেতে ইন্দ্রিয় তস্কর।
ধরিয়া প্রবল বল, আছে নিরন্তর।।
পরমার্থ পুরুষার্থ, করিছে হরণ।
একবার কেহ নাহি, করে দরশন।।
কেমন অজ্ঞান হয়ে, আছে সব জীব।
কখনো করে না মনে, আপনার শিব।
নিজ ঘর চুরি তার, শাসন না হয়।
হরিতে পরের ধন, ব্যাকুল হৃদয়।।
নিজ জ্ঞান আছে যার, মানুষ সে হয়।
জ্ঞানহীন যত জীব, পশু সমুদয়।
প্রাতে করে মল মূত্র, সবে পরিহার।
দিবা দ্বিপ্রহরে করে, সবাই আহার।।
নিশিতে * * * পরে নিদ্রাযোগে।
পশুতেও কোরে থাকে, এইরূপ ভোগ।।
নর যদি রিপুজয়ী, জ্ঞানেতে না হবে।
পশুর সহিত তার, প্রভেদ কি তবে ?
আপনার দেহ আর, আপনার দারা।
অনায়াসে রক্ষা করে, পশু পক্ষী যারা।।
সে বড় বিষম নহে, কঠিন তো নয়।
স্বভাবের ধর্ম্মে তাহা, সহজেই হয়।।
ক্রিয়াপাশে বন্ধ সব, যে দিকেতে চাই।
পরতত্ত্বপরায়ণ, দেখিতে না পাই।।
জ্ঞানীরে মানুষ বোধে নমস্কার করি।
মাথায় মুকুতা-হার, সেই করী করী।।
ডাক ছেড়ে মন্ত্র পড়ে, হোম করে কত।
নানারূপ বেশ ধরে, দাম্ভিকের মত।।
কভু দুর্গা, কভু শিব, কভু বলে হরি।
করে ধন আহরণ, প্রতারণা করি।।
বাকসিদ্ধ, মন্ত্রসিদ্ধ, ছলেতে জানায়।
কাগী, বগী, ভস্ম করে, কথায় কথায়।।
আপনারে বড় রোলে, মরে অভিমানে।
অথচ সে আপনারে, কভু নাহি জানে।।
সদাই আসক্ত মন, সংসারের সুখে।
শোক আর তাপ পেয়ে, দগ্ধ হয় দুধে।।
সংসারের যত ধর্ম্ম, সকলি সে ধরে।
কিছু নাহি বাকি রাখে, সকলি সে করে।।
অথচ লোকের কাছে, আর রূপ হয়।
আমি হই ব্রহ্মজ্ঞানী, এইরূপ কয়।
জন মাঝে কেহ নাই, অজ্ঞান তেমন।
কর্ম আর ব্রহ্ম তার, উভয় পতন।।
শ্রুতিদোষে স্মৃতিহীন, বাক্য নাহি ধরে।
দর্শনে ধরেছে দোষ, দর্শনে কি করে ?
পরস্পর অন্ধ হয়ে, পড়িয়াছে কূপে।
উঠিবার শক্তি আর, নাহি কোনরূপে।।
একেতো অধীর অন্ধ, তাহাতে বধির।
কি করিলে কি হইবে, নাহি পায় স্থির।।
করিয়া পরমপথে, কন্টক প্রদান।
শব্দ নিয়া করে শুধু, অর্থের সন্ধান।।
বন্ধ করি বাক্যব্যূহ কাব্য অলঙ্কারে।
পুরাণাদি শাস্ত্র শস্ত্র, রাখে ধারে ধারে।।
পরস্পর মত্ত সবে, বিচার সমরে।
কিসে জয়লাভ হয়, এই আশা করে।।
বচনের সূত্র তুলে, ব্যাকুল চিন্তায়।
পরম ভাবের ভারে, অভাব ঘটায়।।
কিছুমাত্র নাহি লয়, ভিতরের সার।
শাস্ত্রের সদ্ভাব ভেঙে, একে করে আর।।
বোঝা বোঝা পুঁথি পড়ে, মর্ম্ম নাহি লয়।
মিছে পোড়ে কি হইবে, নাহি ফলোদয়।।
বৃথা পরিশ্রম করে, হরে আয়ুধন।
অবোধের পাঠ আর, অন্ধের দর্পণ।।
বুদ্ধিমানে শাস্ত্র পড়ে, তত্ত্ব লয় তার।
অবোধে কি পাবে তত্ত্ব, তত্ত্ব কোথা তার ?
শব্দবোধে শুধু হয়, বিদ্যার প্রকাশ।
সংসারের মোহ তায়, নাহি হয় নাশ।।
কোন নর কোটি বর্ষ, বেঁচে যদি রয়।
তথাপিও শাস্ত্র পোড়ে, শেষ নাহি হয়।।
কত গুণ সম্ভাবনা, হয় একাধারে।
শাস্ত্ররূপ সিন্ধুপারে, কে যাইতে পারে ?
কর কর যত পার, শাস্ত্রের আলাপ।
কিন্তু তার মন যেন, না দেখে প্রলাপ।।
দেখিবে প্রত্যক্ষ যাহা, মেনে লবে তাই।
বচনে গ্রহণে কোন প্রয়োজন নাই।।
অয়ুহর বিঘ্নকর, শাস্ত্র সমুদয়।
সমুদয় শাস্ত্র পোড়ে,জ্ঞান কার হয়?
শাস্ত্র পাঠে নাহি হয়, মালিন্য মোচন।
কখনই শাস্ত্র নয়, মোক্ষের কারণ।।
বিদ্যা কিছু অন্তরের আঁধার না হরে।
মুক্তি আর জ্ঞানপথে, বিড়াম্বনা করে।।
শাস্ত্র পোড়ে বিদ্যা শেখে, ঘোচে না বন্ধন।
মুক্তির কারণ শুধু, একমাত্র মন।।
বেছে বেছে সার লও, শাস্ত্রালাপ করি।
হংস যথা ক্ষীর খায়, নীর পরিহরি।।
অমৃত ভোজন করি, তৃপ্তি লাভ যার।
আহারে প্রয়োজন, কিছু নাহি তার।।
সহজেতে সমুদয়, দৃষ্টি যেই করে।
বৃদ্ধ হোলে সে কখন ‘চসমা’ না ধরে।।
হেঁটে না হোঁচোট খায়, চলে যেই তেজে।
সে কি কভু যষ্টি ধরে, যষ্টীবুড়ি সেজে ?
প্রেম আর ভক্তি হর, সর্ব্বমূলাধার।
ভগবানে ভক্তি কর, মনে মেনে সার।।
ভক্তিভরে প্রভু পদে, যে সঁপেছে মন।
সে কি আর করে কভু, শাস্ত্র আলাপন?
বিচার, বিতর্ক তার, মনে নাহি লয়।
কোনোমতে বাহ্য তার, গ্রাহ্য আর নয়।।
শাস্ত্র ছেড়ে জ্ঞানী করে, জ্ঞানের গ্রহণ।
পল ফেলে ধান্য লয়, কৃষক যেমন।।
■ প্রশ্নোত্তর আলোচনা –
১) ‘তত্ত্ব’ কবিতার পঙক্তি সংখ্যা কত ?
★ ৯৬
২) ‘তত্ত্ব’ কবিতার স্তবক সংখ্যা কত ?
★ ১২
৩) ‘তত্ত্ব’ কবিতায় ‘তত্ত্ব’ কথাটি কতবার আছে ?
★ ৩বার
৪) ঈশ্বর গুপ্ত ‘তত্ত্ব’ কবিতায় মুক্তির একমাত্র কারণ কী বলেছেন ?
★ মন
৫) ‘তত্ত্ব’ কবিতা অনুযায়ী শব্দ বোধে কী হয় ?
★ বিদ্যার প্রকাশ
৬) শাস্ত্র, অলঙ্কার, পুরাণ, কাব্য – ‘তত্ত্ব’ কবিতা অনুযায়ী ক্রমানুসারে সাজাও
★ কাব্য, অলঙ্কার, পুরাণ, শাস্ত্র
৭) শিব, দূর্গা, হরি, বিষ্ণু – কোন দেবতার উল্লেখ ‘তত্ত্ব’ কবিতায় নেই ?
★ বিষ্ণু
৮) ‘তত্ত্ব’ কবিতার কততম স্তবকে যষ্টিবুড়ির উল্লেখ আছে ?
★ ১১নং স্তবকে
৯) ঈশ্বর গুপ্ত ‘তত্ত্ব’ কবিতায় প্রকৃত জ্ঞানীকে কার সঙ্গে তুলনা করেছেন ?
★ কৃষকের সঙ্গে
১০) ‘তত্ত্ব’ কবিতায় শাস্ত্র কথাটি কতবার উল্লেখ আছে ?
★ ১৫বার
১১) ‘তত্ত্ব’ কবিতার কততম স্তবকে পরতত্ত্বপরায়ণ কথাটি আছে ?
★ তৃতীয় স্তবকে
১২) মন্তব্য – পশুর সহিত তার প্রভেদ কি হবে ?
যুক্তি – নর যদি রিপুজয়ী জ্ঞানেতে না হবে।
১৩) মন্তব্য – বৃদ্ধ হলে সে কখন চসমা না ধরে।
যুক্তি – সহজেতে সমুদয় দৃষ্টি যে হরে।
১৪) শাস্ত্রালাপ, শাস্ত্ররূপ সিন্ধুপার, শাস্ত্র আলাপন, শাস্ত্রের আলাপ – ‘তত্ত্ব’ কবিতা অনুযায়ী ক্রমানুসারে সাজাও
★ শাস্ত্ররূপ সিন্ধুপার, শাস্ত্রের আলাপ, শাস্ত্রালাপ, শাস্ত্র আলাপন
১৫) ‘তত্ত্ব’ কবিতায় ‘শিব’ এর উল্লেখ কতবার আছে ?
★ ২বার
Very nice and helpful… thank you so much…
দারুণ উপকৃত হলাম মেম।