বিষয় : বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য
কলমে : অনন্যা সাহা, বি.এ (বাংলা), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
★ ভূমিকা :
আমরা জানি সারা পৃথিবী জুরেই আছে , প্রকৃতির অবস্থান এবং আমাদের জীবনের সমস্ত কিছুর সাথে প্রকৃতি ওতঃপ্রোতো জড়িত। প্রকৃতির কোলেই আমরা সকলে বসবাস করি। বলাবাহুল্য নানান বৈচিত্র্য সম্মিলিত এই প্রকৃতির আবর্তনের মূল অঙ্গ হলো ঋতু। ঋতুর অবস্থান, প্রকৃতির অস্তিত্বকে আমাদের কাছে বিশেষ ভাবে স্পষ্ট করে তুলতে সাহায্য করে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয় তথা ঋতুর প্রভাবে প্রকৃতির বুকে নানা পরিবর্তন আসে । যে পরিবর্তনগুলি জীবজগতের যাপনের পথকে সুগম করে তোলে ।
যেকনো স্থানের আবহাওয়াকে কেন্দ্র করে ঋতুর বিভাজন নির্ধারিত হয় । পৃথিবীর প্রায় বেশির ভাগ দেশে মূলত চারটি ঋতুর অবস্থান পরিলক্ষিত। তবে কিছু কিছু দেশে চারের বেশি ঋতুর অস্তিত্ব দেখা যায়। পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলীয় দেশ গুলির কিছু অংশে বাৎসরিক ভাবে মোট ছয়টি ঋতু আবর্তিত হয়।
উত্তরাঞ্চলে বছরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিটি ঋতুর মেয়াদ দুই মাস করে অর্থাৎ বারোমাসের বছরে ছয়টি ঋতুকে, দুই মাসের আধারে বিভক্ত করা হয়। পৃথক ভাবে যদি আমরা বাংলার ঋতুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি তবে আমরা দেখবো বাংলায় গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত ছয় ঋতুর অস্তিত্বই বর্তমান। অন্যদিকে অন্যান্য অঞ্চলে মূলত চারটি প্রধান ঋতুর অবস্থানই দৃষ্টিগোচর হয়।
★ ঋতুচক্র কি :
একটি বছরের মধ্যে , সময়ের কয়েকটি নির্দিষ্ট বিভাজন হয় ঋতুর ভিত্তিতে এবং এই ঋতু যখন নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট বজায় রেখে, বছরের নির্দিষ্ট সময়ের সাপেক্ষে আবর্তিত হয় তখন তাকে বলে ঋতুচক্র। বছরের বারোটি মাসের ব্যাবধানে ঋতুর অবস্থান। একটি বছর শেষ হলে পরের বছরেও এই ঋতু নিয়ম মতন আবার, একই ভাবে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানেই আবর্তিত হতে থাকে। ঋতুর আবর্তনের এই শৃঙ্খলাকেই বলা হয় ঋতুচক্র।
অঞ্চল ও দেশ ভেদে এই ঋতুচক্র ভিন্ন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের স্থানীয় পরিবেশের বিভিন্নতার ভিত্তিতে ঋতুর সংখ্যার তারতম্য দেখা যায়। এই ঋতুসংখ্যার বিভিন্নতার জন্য, ঋতুচক্রের আবর্তন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন প্রকারের হয় । এছাড়া ঋতুচক্রের সৃষ্টির আর একটি বিশেষ কারণ হলো, সূর্যের আলোর ভিন্ন মাত্রায় ভুপৃষ্ঠে পতন। বছরের ৩৬৫ দিন পৃথিবী নিজের কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এই প্রদক্ষিণকালে সূর্যের রশ্মি পৃথিবী পৃষ্ঠে ভিন্ন ভিন্ন কোণে পতিত হয়, যার ফলে উৎপন্ন হয় ঋতুচক্র। সূর্য রশ্মি পৃথিবীর কোন স্থানে কতোটা পরছে তার উপরেই নির্ভর করে ঋতুচক্রের প্রভাবের বাহুল্যতা ।
★ প্রধান চারটি ঋতুর বিশিষ্টতা :
সারা ভারতে ভৌগোলিক পরিধির অধিক বিস্তৃতির ফলে, বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া ভারতে প্রধানত ৬ টি আবহাওয়া সংক্রান্ত উপবর্গ-এর দেখা মেলে। ভৌগোলিক পটভূমিতে সারাবছরব্যাপী উষ্ণতা,বৃষ্টিপাত, বায়ুর চাপ, মৌসুমী বায়ুর আসা-যাওয়া এ সবের উপর ভিত্তি করে ভারতের জলবায়ুকে মোট চারটি ঋতুতে বিভক্ত করা যায়। যথা –
শীতকাল ( ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী )
গ্রীষ্মকাল ( মার্চ থেকে মে )
বর্ষাকাল ( জুন থেকে সেপ্টেম্বর )
শরৎকাল ( অক্টোবর থেকে নভেম্বর )
শীতকাল : শীতকালে সূর্যের দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান হওয়ায় সূর্যরশ্মি দক্ষিণ গোলার্ধে লম্ব ভাবে পরে এবং উত্তর গোলার্ধে তির্যক ভাবে। এছাড়া এ সময় ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু। জলবায়ুর এই তারতম্য-এর জন্য শীতকালে স্থান ভেদে তাপমাত্রা নিম্নমুখী হয়। এসময় উত্তর ভারতে গড়ে তাপমাত্রা হয় ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দক্ষিণ ভারতে গড়ে তাপমাত্রা হয় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে বৃষ্টিপাত বিশেষত দেখা যায়না তবে উত্তর-পশ্চিম ভারত ও তামিলনাড়ুর উপকূল ভাগে এসময় বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালের আগমনের ফলে যেমন আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় তেমনি পরিবর্তন হয় জীবকূলে। একদিকে মানুষ যেমন শীত থেকে বাঁচতে গরম বস্তুসকলের আওতায় আসে ঠিক তেমনি পশুকুলের বেশির ভাগই চলে যায় শীত ঘুমে।
গ্রীষ্মকাল : উত্তর গোলার্ধে সূর্য রশ্মির লম্ব ভাবে পতনের ফলে ভারতের তাপমাত্রা উর্ধগামী হয় ও গ্রীষ্মকালের আগমন ঘটে। মার্চ মাস থেকে পারদের মান মূলত বাড়তে শুরু করে। এর পরে মে মাসের শুরুতে পারদ আরও চড়তে থাকে। এসময়ে সূর্য ক্রমশ উত্তরের কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর সরে যাওয়ায় উষ্ণতা বৃদ্ধি সংঘটিত হয়। তাপমাত্রার বৃদ্ধি ছাড়া গ্রীষ্মকালে আরো কিছু প্রকৃতি ভিত্তিক পরিবর্তন ঘটে । যেমন : এ সময় গরম বাতাসের লু প্রবাহিত হয় , স্থানীয় নিম্নচাপের ফলে ঝোড়ো বাতাস ও বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয় ইত্যাদি। এছাড়া ভারতের সর্ব উষ্ণতম স্থান গুলির তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে যথেষ্ট বেড়ে যায়। মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে গড়ে হয় ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজস্থানে তাপমাত্রা থাকে গড়ে প্রায় ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে মানবকুল উষ্ণতা প্রতিরোধে যা যা করণীয়, তা করতে ব্যস্ত থাকে। পশুকুল শীত ঘুম ছেড়ে জীবন চক্রের বিভিন্ন জৈবিক কাজে মনোনিবেশ করে।
বর্ষাকাল : গ্রীষ্মকালের অধিক তাপমাত্রার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারত ও উপদ্বীপ অঞ্চলে যে নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয় সেই বলয়ের আকর্ষণে ভারত মহাসাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে ভারতে । এর ফলে বর্ষাকালের সূত্রপাত হয় । প্রচুর পরিমানে জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে এই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমীবায়ু ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। পূর্ব হিমালয়ে বাঁধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর এই বায়ু , উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বিহার, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানে বৃষ্টিপাতের সূত্রপাত করে । এই বর্ষাকালেই ভারতের মৌসিনরামে, সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ঘটে। প্রায় ১১৮৭ সেমি মত বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় এই স্থানে। গ্রীষ্ম কালের উষ্ণতায় জীবকুল যখন অতিষ্ট হয়ে ওঠে তখন, এই বর্ষাকালই নিয়ে আসে চরম স্বস্তির আভা। এই বর্ষাকালের আগমনে প্রকৃতি সেজে ওঠে নবরূপে এবং প্রকৃতির ছত্রছায়ায় বসবাসকারী সকলে নানা ভাবে উপকৃত হতে থাকে এখনেই বর্ষাকালের পরম সার্থকতা।
শরৎকাল : মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন কালে শরতের আগমন ঘটে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এ সময় ভারত থেকে ফিরে আসে। এবং ফিরে আসার কালে ভারতের উপকূলের অঞ্চলে আপাত ঝড় ও বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই ঝরকে সাধারণত সাইক্লোন বলে তবে পশ্চিমবঙ্গে একে বলা হয় আশ্বিনের ঝড়। এ সময় পরিবেশ আসতে আসতে শীতল হতে থাকে। হালকা বৃষ্টিপাত এবং স্বল্প রোদের কিরণে আবহাওয়ার মধ্যে স্নিগ্ধতা বিরাজ করে। উদ্ভিদ জগতের শাখায় শাখায় শুরু হয় পাতা ঝড়ার মরশুম।
★ স্থানভেদে ঋতুবৈচিত্র এবং মানুষের জীবনযাত্রা :
ঋতুর নিজস্ব চরিত্র বৈশিষ্ট্য বদলে যায় অঞ্চলভেদে। সময়ের সাপেক্ষে ঋতু পরিবর্তিত হলেও , কিছু কিছু অঞ্চল নির্দিষ্ট একটি ঋতুর স্বভাব বৈশিষ্টকেই বহন করে চলে । যেমন রাজস্থানের মতন জায়গা গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল অন্যদিকে ভারতের উত্তরাঞ্চল শীতপ্রধান। স্থানভেদে এই বৈচিত্র বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রাকৃতিক ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব এই অঞ্চলগুলিতেও পরে তবে সেই প্রভাব অধিক পরিমানে কার্যকর হয়না অর্থাৎ কোনো গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে শীত কাল এলে তাপমাত্রা কমে ঠিকই, কিন্তু তাপমাত্রা কমার হার হয় কম । ঋতুর প্রভাব মানুষের জীবনযাত্রাতেও পরে , যার ফলে স্থানভেদে মানুষের পোশাক , খাদ্য , জীবন অভ্যাস সব কিছুই বদলে যায় । নিম্নে আমরা কিছু স্থানের উদাহরণ সাজিয়ে স্থানভেদে এবং ঋতুভেদে মানুষের জীবনযাত্রার বিভিন্নতা লক্ষ্য করবো ।
গ্রীষ্মপ্রধান ( রাজস্থান ): রাজস্থানে সুদূর মরুভুমির অবস্থান থাকায় এখানকার তাপমাত্রা বেশির ভাগ সময়ই অধিক থাকে। এখানকার মানুষ মরুভূমিতে জীবন অতিবাহিত করার জন্য উটের সাহায্য গ্রহণ করে। পোশাক পরিচ্ছদ তাদের যথেষ্ট ঢাকা হয় , প্রখর রৌদ্রের হাত থেকে বাঁচার জন্য । তবে বর্তমানে অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এখানকার মানুষেরা নির্বিঘ্নে জীবন অতিবাহিত করেছে ।
শীতপ্রধান ( ভারতের উত্তরাঞ্চল ): তাপমাত্রা সর্বদায় নিম্নস্থ থাকে শীতপ্রধান অঞ্চলে। জম্মু ও কাশ্মীর , দার্জিলিং , উত্তরাখন্ড ইত্যাদি স্থান ভারতের শীতপ্রধান অঞ্চলের অন্তর্গত। শীত থেকে বাঁচতে এই স্থানের মানুষেরা উষ্ণ পোশাক ব্যবহার করে। এর পাশাপাশি তারা শীতকালে উৎপন্ন নানান ফল , সবজি ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। জীবন অতিবাহিত করার জন্য এখানকার মানুষেরা পাহাড় চড়তে নানান ধরণের পন্থাও অবলম্বন করে।
বর্ষাপ্রধান ( মেঘালয় ): মেঘালয় পৃথিবীর সবথেকে আর্দ্রতম স্থান। মেঘালয়ের অন্তর্গত চেরাপুঞ্জি এবং মৌসিনরামে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয় । এবং এই বৃষ্টিপাতের ফলে মেঘালয় বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির প্রাণভূমি হিসেবে বিবেচিত। মেঘালয়ের বেশির ভাগই পর্বত বেষ্ঠিত। এই কারণে এখানে পর্যটকের ভিড় নেহাত কম হয়না। এখানকার মানুষেরা পর্যটনের উপর মূলত নির্ভর করেই জীবন অতিবাহিত করে। এছাড়াও কৃষি হলো এই স্থানের এক প্রভাবশালী অঙ্গ যা অর্থনীতিকে গতি প্রদানে বিশেষ সাহায্যকারী।
★ ঋতু ভেদে অনুষ্ঠিত নানান উৎসব :
বছর সাপেক্ষে আবর্তিত ঋতুচক্র নিজের সাথে বয়ে আনে নানা কিছু। এই নানান কিছুর মাঝে উৎসব হলো অন্যতম তথাপি আমরা বলতে পারি ঋতুর পরিবর্তনের সাথে মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরণের, উৎসবের আগমনও ঘটে। মানব সম্প্রদায় ঋতুকে উদযাপন করে উৎসবের মাধ্যমে। সম্প্রদায় ভেদে বিশেষ কোনো ঋতুকে ঘিরে পালন করা হয় ঋতুভিত্তিক উৎসব। বাঙালির সম্প্রদায়ে ষড়ঋতুকে কেন্দ্র করে, আমরা এই ঋতুভিত্তিক উৎসবের বিশেষ বাহুল্যতা লক্ষ করি। যেমন : নতুন বছরের আহ্বান সূত্রে বৈশাখ মাসে পালিত হয় নববর্ষ, বর্ষার সময় হয় ঝুলন ও রথযাত্রা উৎসব, শরতে আসেন মঙ্গলময়ী মা দুর্গা তথা এই সময় আয়োজিত হয় বাংলার সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গোৎসব, হেমন্ত কালে হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয় শস্যউৎসব, শীতকালে আসে পিঠে পার্বনের আনন্দানুষ্ঠান, সর্বোপরি বসন্তকালের দোলযাত্রা মানবমনকে আবিরের রঙে-রাঙিয়ে তোলে। ঋতুভেদে নানান উৎসব ছাড়াও নানান ধরণের ব্রতও পালন করা হয় যথা : মঙ্গলাগৌরী ব্রত, চৈত্র নবরাত্রি ব্রত, জন্মাষ্টমী ব্রত, সেঁজুতি ব্রত ইত্যাদি।
★ ঋতুবৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা :
ঋতু ও জীবকুল পরস্পর অবিচ্ছেদ্য তাই জীবকুলের সামঞ্জস্য রক্ষার্থে ঋতুবৈচিত্র্যকে বিশেষ ভাবে কার্যকরী হতে লক্ষ্য করা যায়। ঋতুবৈচিত্রের প্রজনীয়তা যে কতোটা , তা আমরা নিম্নে একটি উদাহরণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করবো। মানবকুলের উপর নজর দিলে দেখা যাবে জীবিকা, অর্থনীতি, মানুষের মন-শরীর সবের উপর, অচিরেই এই পরিবর্তন প্রাধান্য বিস্তার করে। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে মানুষের খাদ্যের অভ্যাস ও পোশাকও বদলে যায়। একদিকে ঋতু ভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ করে মানুষ সুস্থ-সবল থাকে অন্যদিকে প্রাকৃতিক তাপমাত্রা থেকে বাঁচতে তারা ঋতু ভেদে নানান ধরণের পোশাক ব্যবহার করে। কৃষির ক্ষেত্রে রবি ও খরিফ সস্য উৎপাদিত হয় ঋতুর উপর নির্ভর করেই। তথাপি এর মাধ্যমে আমরা বলতে পারি ঋতু বৈচিত্রের অবস্থান বিশেষ প্রয়োজন সাপেক্ষ। এই বৈচিত্র্য না থাকলে জীবকুলের সাধারণ জীবন ব্যাহত হবে। ঋতু যদি সঠিক ভাবে পরিবর্তিত না হয় তবে অনিয়ম ঘটবে এবং জীবকুলের বিনাশ অবধারিত হিসেবে গণ্য করা হবে।
★ উপসংহার :
বর্তমানে নিজেদের সুবিধার্থে আমরা নানান ধরনের যান্ত্রিক বস্তু ব্যবহার করি। এই যান্ত্রিক বস্তু গুলি যে প্রকৃতির পক্ষে হানিকারক এ কথা জেনেও আমরা পিছু পা হইনা। নানান প্রকারের অরাজকতা এবং অনিয়ম চালাতে থাকার ফল যে আমাদেরই পরবর্তীতে ভোগ করতে হবে , এ কথা আমরা বিস্মৃত হই। প্রকৃতির উপর যথেচ্ছাচার চালানোর দায় বর্তায় মানুষের উপরেই । তারাই জ্ঞান থাকতে অজ্ঞানের মতন কাজ করে এবং প্রকৃতি কে ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিভিন্ন বাহ্যিক বিষয় প্রকৃতির স্বাভাবিক গতির ব্যাঘাত ঘটায় এবং এই ব্যাঘাতের ফলেই প্রকৃতির সামঞ্জস্য হারিয়ে যেতে থাকে এর পাশাপাশি ঋতু দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। ঋতুর পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়, এর সাথে বাড়তে থাকে মানব জীবনের নানান সমস্যা। প্রকৃতিকে বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে মানুষ, যে ভুলটা বারবার করে তা হলো বৃক্ষ ছেদন । ফলত বর্তমানে প্রকৃতিকে সঠিক ভাবে টিকিয়ে রাখার মূল পন্থা হলো বৃক্ষ ছেদন রোধ এবং বহুল পরিমানে বৃক্ষ রোপন। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। যে দায়িত্বকে পালন করলে আমাদেরই পরবর্তী প্রজন্ম সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। পরিশেষে বলা যেতে পারে ঋতুবৈচিত্র্য ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে আমাদের ভুলের কারণেই , তাই ঋতুর সৌন্দর্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের সকলের সচেতন হওয়া বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য ।।