বিষয় : দুর্গোৎসব


কলমে : অনন্যা সাহা, বি.এ ( বাংলা ), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়


ভূমিকা :
সর্বজয়া মাতা দুর্গার আরাধনাই সার্বজনীন ভাবে দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। প্রত্যেক বছর শরতের শিউলি ফুলের আঘ্রান নিয়ে আসে আসন্ন উৎসবের সুখবার্তা। ভাদ্রমাসের আমবস্যায় পিতৃপক্ষ অবসানের পরে আরম্ভ হয় আশ্বিনের শুক্লপক্ষ । এই শুক্লপক্ষেই সূচনা হয় পবিত্র দুর্গোৎসবের। দূর্গা পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের এক বিশেষ উৎসব৷ বলাবাহুল্য সারা বিশ্বের নিরিখেই এই পূজা করা হয় তবে ভারতের আসাম, বিহার, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ সহ বাংলাদেশে এই পূজাকে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। দূর্গাপূজার সূত্রপাত হয় মহালয়ার পুণ‍্য তিথিতে এবং অবসান হয় মহাদশমীর অন্তিম লগ্নে। প্রায় ১০-১২ দিনের এই মহাউৎসব সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের বুকে নিয়ে আসে পরম আনন্দের জোয়ার। যে জোয়ারে ভেসে যাওয়ার জন্য প্রত্যেকটি মানুষ সারা বৎসর যাবৎ অপেক্ষা করে অধীর আগ্রহে।

উৎসব প্রিয় বাঙালি :
নানান অনুষঙ্গে যেকনো উৎসবকে সাজিয়ে তুলতে বাঙালিরা বিশেষ পটু। এই পটুত্বকে কাজে লাগিয়েই দূর্গা পূজাকে অসীম আড়ম্বরে ভরিয়ে তোলে বাঙালি। উৎসবের আতিসজ্জ দ্বিগুণ বেড়ে যায় মানুষের উৎসাহে এবং সমাগমে। প্রসঙ্গত বাঙালি সম্প্রদায় এই দুইটি বিষয়কেই বাস্তবে কার্যকরী করে তোলে নানান উৎসবের মরসুমে। বাঙালি সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব হলো দুর্গাপূজা। এই দুর্গাপূজাকে উদযাপন বাঙালি নানাভাবে করে। প্রথমেই শুরু হয় পূজোর কেনাকাটা। উচ্চবৃত্ত থেকে নিম্নবৃত্ত সম্প্রদায়ের প্রায় প্রত্যেকটি মানুষই নিজেদের সামর্থ‍্য মতন পূজোর কেনাকাটা করে। এর পরে আসে ঘর পরিচ্ছন্ন করার পালা। কম বেশি সব বাড়িতেই পূজো উপলক্ষে ঘর পরিছন্ন করার তোড়জোড় শুরু হয়। সর্বোপরি পূজোর দিনগুলিতে থাকে প্রতিমা দর্শন, মণ্ডপ ভ্রমণ, বিশাল খাওয়া দাওয়া এবং পারিবারিক ভাবে আনন্দ করার পরিকল্পনা। বাঙালির ঘরের উৎসব দূর্গাপূজাকে এই ভাবেই ধুমধাম করে পালন করা হয় বাংলার কোণে কোণে ।

দূর্গা পূজার শ্রেষ্ঠত্ব :
পুরাণ গাথা অনুযায়ী মহিষাসুর বধ যিনি করেন তিনি হলেন আমাদের চীরপরিচিত মহিষাসুরমর্দ্দিনী মাতা দূর্গা। এই মহিষাসুরমর্দ্দিনীর আখ্যান সেই ১৯৩২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মহালয়ার ভোরে রেডিও-তে সম্প্রচারিত হতে শোনা যায়। রেডিও সম্প্রচারে আমরা মূলত শুনে থাকি মাতার আবির্ভাব এবং মাতার অসুর বধের কাহিনী । একজন নারীর অসীম শক্তির পরিচয় আমরা চন্ডীপাঠের মাধ্যমে জানতে পারি। পুরাণের নিরিখে নারী মাহাত্ম‍্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেন মাতা দূর্গা। সর্ব দেবতাকূল যখন অসুরের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পরে তখনই শুভশক্তির প্রতীক হিসেবে মা দুর্গার আবির্ভাব হয় এবং দশভুজা, ত্রিশূল ধারিণী মা একক ভাবে অসুরের দমন করেন , ফলে জগতে শান্তি নেমে আসে। এ এক সাধারণ গল্পগাথা হলেও এর মাহাত্ম‍্য অসীম। অশুভ শক্তি, যে শুভ শক্তির কাছে পরাস্ত হতে বাধ্য এই বার্তাই বহন করে জগৎজননী মাতার সৌর্যের এই গাথা-কাহিনি৷ মানা হয় মাতার শক্তির কাছে নতমস্তক হয়ে, শ্রীরাম রাবণ বধের আগে অসময়ে মাতার আরাধনা করেন, যাকে বলে অকালবোধন। সেই আরাধনার সময়কেই আজ পর্যন্ত প্রাধান্য দিয়ে শরৎকালে শারদীয়ার উৎসব পালিত হয়। মানুষের জীবনে বর্তমানে এই শারদীয়া এক বৃহৎ উৎসবের নাম, যে উৎসবের প্রাণ কেন্দ্র হলেন স্বয়ং মা দূর্গা। এই পূজা যেমন একদিকে নারীশক্তির জয়গান গায় তেমনি অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে আসে বৃহৎ উৎসবের সুখবার্তা। এই কারণেই দুর্গোৎসব বিপুল শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার, যে শ্রেষ্ঠত্বের কোনো বিকল্প হয় না।

দূর্গাপূজার আরম্ভন এবং উৎসব উদযাপনের বিবরণ :
মহালয়ার ঊষালগ্নে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়ের চন্ডীপাঠের মাধ্যমে সূচিত হয় মাতার আগমনবার্তা। এ সময়ে রেডিও কাছে নিয়ে সমস্ত বাঙালি উদগ্রীব হয়ে থাকে চন্ডীদেবীর পদধ্বনি শ্রবণ করতে৷ এছাড়াও এই মহালয়ার দিনই সম্পন্ন করা হয় মৃত্যু-সংক্রান্ত নানান আচার বিচার এই কারণে হিন্দু ধর্মমতে মহালয়ার অপর নাম পিতৃপক্ষ। প্রেতকর্ম এবং তর্পণ ব্যতীত, বাঙালি মতে মহালয়ার আর এক বিশেষ মাহাত্য আছে, মনে করা হয় এই দিনই উমা পিতা গিরিরাজের গৃহের উদ্দেশ্যে গমন করেন প্রতিবছর। এর পরে মহালয়ার ৭ দিনের মাথায় শুরু হয় মাতা দুর্গার মহাপূজার অনন্দানুষ্ঠান। মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং মহাদশমী এই পাঁচ দিনের বিভাজনে পূজাকার্য সম্পন্ন করা হয়। ষষ্ঠীর দিন মণ্ডপে দেবীর বোধন,আমন্ত্রণ এবং অধিবাস  করা হয়। সপ্তমীতে সপ্তম্যদী কল্পারম্ভ পূজা, প্রবেশ, স্থাপন, নবপত্রিকা স্নান, সপ্তমীবিহিত পূজা ইত্যাদি সমাপন করা হয়। অষ্টমী তিথিতে উপবাস সহ পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, নানান প্রকার ব্রত, এবং মহা অষ্টমীর মহা পূজার আয়োজন করা হয়। নবমীতে হয় মহানবমী পূজা এবং দশমী তে হয় ঘট-বিসর্জন। এই ছিল পূজার দিন গুলিতে করা , মাতার অর্চনা সংক্রান্ত কার্যাবলী। এছাড়াও দুর্গোৎসবে নানা ধরণের উদযাপন ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। যেমন : পূজা উপলক্ষে ভোগ বিতরণ, সন্ধ্যাকালে ধুনুচি নাচ, ঢাকের সমাগম, বিজয়ার সিঁদুরখেলা ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখ্য।  উৎসবের কালে এই সমস্ত ক্রিয়াকলাপ ছাড়াও, সাধারণ মানুষ আরো একটি কাজ করে যা হলো মণ্ডপ ভ্রমণ। মাতার প্রতিমা দর্শনের জন্য মানুষ আলোর রোশনাই মিলিত হয়ে নানান সাবেকি এবং আধুনিক থিমের মণ্ডপ ঘুরে বেড়ায় মহা আহ্লাদে। মাতার পূজা, মানুষের আনন্দ সব কিছু মিলিয়ে-মিশিয়ে এই ভাবেই কেটে যায় বাৎসরিক দুর্গাপূজার দিন গুলি।

বাঙালির আবেগ ( থিম বনাম সাবেকিয়ানা ) :
বাৎসরিকভাবে পালিত দুর্গাপূজা হলো আনন্দ ও উৎসবের  ঠিকানা। এই ঠিকানায় টোকা দেওয়ার জন্য মানুষ অমোঘ উৎসাহে, উৎসাহিত হয়ে থাকে সারা বছর। দুর্গাপূজার মূল কিছু আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম হলো মণ্ডপ সজ্জা। মণ্ডপ সজ্জা নানান প্রকারের হয়, সাবেকি থেকে আধুনিক। সাবেকিয়ানা ও আধুনিকতার মধ্যে একটি অদৃশ্য দ্বন্দ্ব সর্বদায় বিরাজমান। এর কারণ হলো মানবমনের আবেগ ও প্রত্যাশার বাহুল্যতা। একদল মানুষ সাবেকিয়নার পক্ষপাতী হয় অন্য দিকে আর একদল মানুষ আধুনিকতার। তবে এরই মাঝে মধ্যবর্তী কিছু মানুষ থাকে যারা দুইধরণের সজ্জাকেই সমর্থন করে। বাঙালি মনের আবেগ দুর্গাপূজার সাথে অতঃপ্রত ভাবে জড়িত এই কারণেই পূজার দিন গুলিকে ঘিরে তাদের প্রত্যাশাও থাকে ঢের। কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের নানান স্থানের বিভিন্ন ক্লাব, সমিতি, সংস্থা ইত্যাদি নিজেদের মতন করে সাবেকি ভাবে অথবা থিমের সাহায্যে দুর্গাপূজার আয়োজন করে। স্বভাবতই এই আয়োজন হয় বিশেষ কষ্ট সাপেক্ষ। কষ্ট হলেও পূজা কমিটি যথা সাধ্য প্রচেষ্টা করে সার্থক ভাবে পূজা সম্পন্ন করতে এবং দর্শনার্থীদের মন জয় করতে। সাবেকি হোক বা আধুনিক থিমের পূজা শালীনতা বজায় থাকলে সবই সুন্দর হয়ে ওঠে। বাঙালি যেহেতু স্মৃতিবিধুরতায় ভেসে থাকতে পছন্দ করে এই কারণেই, আবেগপ্রিয় বাঙালির মনে সাবেকিয়ানার স্থান বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত হয় । বর্তমানে নানান কিছু আধুনিক বিষয়কে অবলম্বন করে আধুনিক থিমের আয়োজন করা হয়, তবে এই আয়োজনকে কখনোই ব্রাত্য করা চলেনা। প্রত্যেক শিল্পীর শিল্পের ভিন্ন মাহাত্য থাকে। তথাপি আমারা বলতে পারি সাবেকি পূজো ও থিমের পূজো এই দুই বিষয়ই বাঙালির আবেগমন্ডিত। আমাদের সবার দুর্গোৎসব সাবেকি বনাম থিমের দোটানায়, সর্বকালের সাপেক্ষে ভাব উদ্রেককারী রয়ে-ছিল, রয়ে-আছে এবং রয়ে-থাকবে।

প্রবাসে দূর্গাপূজা :
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের গন্ডির বাইরেও নানান স্থানে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। মূলত প্রবাসী বাঙালিরাই দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে বাঙালি ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করতে দূর্গাপূজার জমজমাট আয়োজন করে থাকে। দেশের ন্যায় বিদেশেও  দুর্গাপূজা বছর বছর পালিত হয় বাঙালিদের নিজেদের ঐতিহ্য-এর প্রতি ভাবপ্রবণতা কে কেন্দ্র করেই । আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা সহ নানা উপমহাদেশে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়ে থাকে। বিদেশের বিভিন্ন এসোসিয়েশান মূলত পূজার আয়োজন  করে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পূজা এসোসিয়েশান ইনক এর নাম বিশেষ খ্যাত। মনে করা হয় ১৯৯০ এর দশকে এই সংস্থাই প্রথম দুর্গাপূজা আয়োজন করে সিডনিতে। এ সময়ে দাঁড়িয়ে সিডনিতে প্রায় ১৫ টি পূজা সম্পন্ন হয়। এর থেকে বলা যায় কাল পেরিয়েছে তবে বাঙালিদের ভাববাহুল্যতা রয়ে গিয়েছে একই ভাবে, এর বদল কখনো হয়নি বরং সময়ের গুণে এর বৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া কানাডার, ডারহাম-এ অনুষ্ঠিত দুর্গোৎসব বর্তমান সময়ে বহুল চর্চিত। আগমনী কালচার এসোসিয়েশানের উদ্যোগে এই স্থানে ২ দিনের জন্য দুর্গোৎসব উদযাপিত হলেও, কোনো রকমের উৎসাহের খামতি চোখে পরেনা। সকলে পরম আনন্দে সকল ব্যস্ততার মাঝে পূজো উপলক্ষে ভরপুর আনন্দ করে। বাংলার ন্যায় প্রবাসেও পূজোর কটা দিন মেলার আয়োজন করা হয়, এরই সাথে থাকে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-এর সমাবেশ, নির্দিষ্ট দিনে ভোগ সহ জম্পেশ খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি।

দুর্গাপূজার আন্তর্জাতিকতা :
খুবই সাম্প্রতিক দুর্গাপূজাকে আন্তর্জাতিক ভাবে হেরিটেজ উৎসব বলে ঘোষণা করে ইউনেসকো। দুর্গোৎসবকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার পিছনে যথোচিত কারণও আছে প্রভূত পরিমানে। একদিকে দূর্গা পূজা যেমন প্রাচীন ইতিহাসের অঙ্গবিশেষ , তেমন অন্যদিকে দূর্গা পূজার সাথে সাধারণ মানুষেরও যাপনের এক বিশেষ যোগসূত্র বর্তমান আছে। সাধারণের সাথে এই উৎসব অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত। এই উৎসবের আসন্নকালে মানুষ উৎসাহের প্রাচুর্যতায় ভরে ওঠে এবং উৎসবের আয়োজনে প্রবৃত্ত হয়। ভিন্ন জাতি সহ ভিন্ন পেশার ব্যাক্তিবর্গ একত্রিত হয় মাতা দুর্গার আগমন কে সাজিয়ে তুলতে। এসবের পাশাপাশি কলকাতার রেড রোড কার্নিভাল বিশেষ উল্লেখ্য দূর্গা পূজাকে আন্তর্জাতিক স্তরে চিত্রিত করার ক্ষেত্রে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাথে অন্যান্য গুণী ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে নানান স্থানের দূর্গা প্রতিমাকে উপস্থাপনা করা হয় এই কার্নিভালে। প্রত্যেকটি অঞ্চলের বিশেষত্ব ভেদে, দেবী মূর্তির বাহুল্যতাও দেখা যায়। প্রতিমার সাথে, জায়গা বিশেষের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরা হয় কার্নিভালে। প্রত্যেক শিল্পীর শিল্পনিদর্শন দৃষ্টিগোচর হয় এই রেড রোদ শো-এ। ৩ মিনিটের সময় নিয়ে প্রত্যেকটি প্রতিমাকে বাদ্যযন্ত্র এবং আতশবাজি সহযোগে উপস্থাপন করা হয় দেশ তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।

উপসংহার :
অনাকাঙ্খিত করোনা আবহে সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠান জনস্বার্থে বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। এই প্রস্তাব অনুযায়ী দীর্ঘ দুই-বছর সমস্ত রকমের উৎসব বন্ধ থাকে। তবুও করোনা আবহের পরবর্তী সময়ে উৎসবের হর্ষ অটুট থেকে যায় । উৎসব বাৎসরিক ভাবে আসা যাওয়া করলেও  উৎসবের রেশ কখনো ম্লান হয়ে যায়না, এর প্রমান আমাদের প্রাণের দুর্গোৎসব। মানুষের আশার উৎসব দুর্গোৎসব কিছুদিন যাবৎ বন্ধ থাকলেও এর মাহাত্য কম হয়ে যায়না বরং পরিবেশ সুস্থ হলে মানুষ আবার উৎসবের আনন্দ ধারায় মেতে ওঠে। এখানেই মঙ্গলময়ী মাতার , শারদীয়া পূজার সার্থকতা।