বিষয় : ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

কলমে : অনন্যা সাহা , বি.এ ( বাংলা ) , বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়


ভূমিকা :
দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে  ঘুরতে যাওয়া , কম-বেশি সকলেরই বিশেষ পছন্দের বিষয়। একঘেয়ে জীবনযাত্রা থেকে কিছু সময়ের জন্য ছুটি নিতে মানুষ সর্বদায় উদগ্রীব হয়ে থাকে। এই ঘুরতে যাওয়ার নানান কারণের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে কারণটি কার্যকর হয় তা হলো, নিজেকে তথা নিজের কাছের মানুষজনদের সমস্ত ব্যস্ততা ভুলে, আলাদা করে সময় দেওয়া। বর্তমান সময়ে আমরা সকলেই ব্যস্ততার মধ্যেই থাকি, সেই ব্যস্ততাকে কিছুটা লাঘব করার ক্ষেত্রে ভ্রমণ হলো অন্যতম পন্থা। শুধু ব্যস্ততা কম করা নয়, অন্যান্য কারণেও মানুষ ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকে। কেও কেও নির্দিষ্ট ভাবে তথ্য সংগ্রহের জন্য ভ্রমণ করে, আবার কেও ভ্রমণকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে, এর থেকে আমরা বলতে পারি ভ্রমণের সংজ্ঞা বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন প্রকারের। তবে সংজ্ঞা আলাদা হলেও সর্বক্ষেত্রে ভ্রমণের আনন্দ ও অনভূতি একই থাকে। ভ্রমণের ফলে মানুষের মনে যে প্রশান্তির অনুভূতি আসে তা অপরিবর্তনশীল। ছুটির আমেজ উপভোগ করাটা প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে সর্বকালের প্রেক্ষিতে এক অন্যতম অনুভূতি। যে অনুভূতি মানুষ মনের সিন্দুকে স্বযত্নে আগলে রাখে আজীবন।

ভ্রমণ পরিকল্পনা :
একটি পরিবারে যেকটা মানুষ থাকে তারা সকলেই বিভিন্ন কাজের কাজি ,  নানান ব্যস্ততায় তারা ব্যাস্ত। এমনি এক ব্যস্ত পরিবারের সদস্য আমি। আমাদের বাড়িতে বাৎসরিক ভ্রমণের পরিকল্পনাই, বিভিন্ন ব্যস্ততার মাঝে ছুটির আস্বাদ নিয়ে আসে এবং পরিবারের সকলে একত্রিত হয়ে এই ঘুরতে যাওয়ার দিন গুলিতেই জমিয়ে আনন্দ করে। গত বছর আমরা সকলে মিলে গ্যাংটক যাওয়ার পরিকল্পনা করি। পাহাড় দেখার লোভ বাঙালি জাতি কোনো ভাবেই সংবরণ করতে পারেনা। ঠিক তেমন ভাবেই, আমার পরিবারও পাহাড় দেখার লোভকে সামলাতে না পেরে বছরের প্রায় শেষের দিকে অক্টোবর মাসে গ্যাংটক এর উদ্দেশ্যে গমনের দিন ঠিক করে। গন্তব্যে যাওয়ার ঠিক এক মাস আগে থেকে শুরু হয় শীতের পোশাক দিয়ে সুটকেস গোছানোর পালা। এছাড়া টিকিট থেকে শুরু করে সবরকমের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহযোগে , আমরা দীর্ঘ্য সময় ধরে সপরিবারে পাহাড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। ঘুরতে যাওয়ার আগের মুহুর্ত গুলির মধ্যে সব থেকে আনন্দের যে বিষয়টি তা হলো ব্যাগ গোছানো। প্রয়োজন, অপ্রয়োজন সব কিছু মিলিয়ে ব্যাগ গোছানোর তোড়জোড়, ঘুরতে যাওয়ার আনন্দকে বলাবাহুল্য দ্বিগুন করে তোলে।

ভ্রমণের সঙ্গীসাথী :
সাম্প্রতিক করোনা আবহের পরে গ্যাংটক ভ্রমণে আমরা যাওয়ার কথা ভাবি। অনেক গুলি দিন লকডাউন এর জেরে দমবন্ধ হওয়া পরিবেশ থেকে নিষ্কৃতি পেতেই আমরা সপরিবারে ছুটে যাই পাহাড়ের কোলে আশ্রয় নিতে। অক্টোবর মাসে শরতের সুমিষ্ট আবহে আমরা গ্যাংটক ভ্রমণে যায় আমাদের বৃহৎ পরিবারের সাথে। যেহেতু কাজ আমাদের সকলের একসাথে সময় কাটানোর ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়, সেই কারণেই ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা সাধারণত পরিবারের সদস্য বিনে করা হয়না। পরিবারের সাথে বাইরে একত্রিত ভাবে ঘুরতে যাওয়ার এক আলাদা ভালোলাগা আছে যে ভালোলাগা আসে, কাছের মানুষ গুলোর সাথে আনন্দ করার সোহাগে। পাহাড়ের প্রতি এক অদ্ভুত মায়ার টানে আমরা ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তবে এই সিদ্ধান্ত হটকারিতার সাথে নেওয়া হলেও, নেহাত ভুল ছিলোনা। ঘুরতে গিয়ে দেখা পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য আমাদের সকলের মনে আজও রয়ে গিয়েছে একই ভাবে। আমাদের গন্তব্যে যাওয়ার মূল মাধ্যম ছিল ট্রেন। সর্বপ্রথম শিলিগুড়ি তথা এন.যে.পি স্টেশন পর্যন্ত আমরা ট্রেন বদল করে পৌছায়। তারপরে সেখান থেকে গ্যাংটক পৌছয় ভারা গাড়িতে চড়ে, এইভাবেই আমরা আমাদের বাসস্থান থেকে গ্যাংটক-এ পদার্পন করি।

যাত্রাপথের বিবরণ :
টিকিট সামলে ব্যাগপত্র নিয়ে আমরা প্রথমেই রওনা দিই স্টেশন এর উদ্দেশ্যে । এরপরে স্টেশনে পৌঁছে শুরু হয় ট্রেনের অপেক্ষা। এই অপেক্ষার-ও এক আলাদা আমেজ আছে।  ঘুরতে যাওয়ার অমোঘ উৎসাহ লুকিয়ে থাকে অপেক্ষার মধ্যেই। প্রথমদিকে হয় ট্রেনে চাপার দিনটির অপেক্ষা। এর পরিবর্তিতে ট্রেনে চাপার নির্দিষ্ট দিনটিতে হয় গন্তব্যে পৌঁছবার অপেক্ষা। সেই অফুরন্ত অপেক্ষার অবসান হয় ট্রেনের সিটির তীব্র আওয়াজে এবং ট্রেনে চেপে যাওয়ার পর শুরু হয় নানান পাইকারি খাদ্য খাওয়ার প্রতিযোগিতা। সকলে মিলে ট্রেনে হাঁক দেওয়া, সকল হকারদের পণ্য কিনে ফেলতে রীতিমতো উদ্যোত হয়ে ওঠে । ঝালমুড়ি থেকে ডিম সিদ্দ সব কিছুই মোটামুটি কিনে চোখের পলকে সকলে মিলেই আত্মসাৎ করে ফেলে অনায়াসে। পরে কলকাতায় ট্রেন বদল করে , উৎসাহ কিছুটা চেপে রেখে রাতের ঘুম সেরে আমরা পৌঁছে যায় শিলিগুড়ি। সেখানে সকালের ভুরিভোজ সেরে, গাড়িতে চেপে শুরু হয় আমাদের পাহাড় চড়ার যাত্রা। বনবনানী পেরিয়ে তিস্তার কাছ ঘেসে পাহাড় বেয়ে বেয়ে আমরা উঠতে থাকি হিমালয়ে। শেষ পর্যন্ত গ্যাংটকের প্রায় কাছাকাছি এসে অনুভূত হয় হালকা শীতের আভাস। এই শীতের আভাস আরো গাঢ় হতে থাকে গ্যাংটক শহরে প্রবেশের সাথে সাথে এবং আমরা সকলে সময়ের সাথে এক লম্বা রাস্তা অতিক্রম করে ,  পৌঁছে যায় পূর্ব-হিমালয়ে অবস্থিত গ্যাংটকে।

দর্শনীয় স্থান :
গ্যাংটক হলো সিকিমের বৃহত্তম শহর এছাড়াও এই গ্যাংটক পূর্ব সিকিম জেলার সদর দপ্তর। এই শহরে এসে পর্যটকেরা চারপাশে ঘোরা-ঘুরি সহ পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করে। এখানে দেখার মতন অনেক স্থানই আছে, যার মধ্যে কিছু স্থানে যেতে হয় পায়ে হেটে এবং কিছু স্থানে যেতে হয় গাড়িতে চড়ে । এছাড়া এখানকার সবথেকে আকর্ষনীয় বস্তু হলো, এখানকার নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার পাঁচটি চূড়া প্রত্যক্ষ করা যায়। কুয়াশার ফাঁকে সোনামাখা রোদ্দুরের আবহে পর্বতশৃঙ্গকে দেখা সত্যই ব্যক্তিমনে অতিন্দ্রীয় অনুভূতির সমাগম ঘটায় অতীব সহজে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়া আরো কিছু দর্শনীয় স্থানের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো –
পূর্ব সিকিম – ছাঙ্গু লেক, নাথুলা পাশ, মহাত্মা গান্ধী রোড (এম.জি মার্গ), বাবাজির মন্দির (নতুন ও পুরোনো), হনুমান টক, হিমালয়ান জুওলজিকাল পার্ক, রানাকা মনস্ট্রি, বনঝাকড়ি জলপ্রপাত, ব্ল‍্যাক ক‍্যাট মিউজিয়াম, গণেশ টক, গ‍্যাংটক রোপওয়ে, নাথাং ভ‍্যালি, তাশি ভিউ পয়েন্ট, সেভেন সিস্টার জলপ্রপাত বাকথাং জলপ্রপাত।

উত্তর সিকিম – লাচুং, জিরো পয়েন্ট, ইয়ুমথাং ভ্যালি, লাচেন, গুরুদংমার লেক, এলিফ‍্যান্ট লেক, থাংগু ভ‍্যালি, কালাপাথর, চোপথা ভ্যালি

পশ্চিম সিকিম – পেলিং, কাঞ্চনজংঘা ন‍্যাশানাল পার্ক, দারাপ ভিলেজ, খেচেওপালরি হ্রদ

স্থান মাহাত্ম‍্য :
গ্যাংটক শহরটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। বলাবাহুল্য এখানকার মূল আকর্ষণই হলো পাহাড়। কুয়াশায় মোড়া এই ঠান্ডা শহরটি বাঙলিদের ঘুরতে যাওয়ার কেন্দ্র হিসেবে শ্রেষ্ঠ। পূর্ব হিমালয় পর্বতমালায় গ্যাংটকের অবস্থান। মূলত লেপচা, গোর্খা, ভুটিয়া, কিরাটী নামক জাতি গোষ্ঠীর আধিপত্য এই স্থানে দেখা যায়। গ্যাংটক সিকিমের রাজধানী অনেক কাল আগে থেকেই ছিল, সময়ের সাথে নানান ওঠা-পরা হলেও গ্যাংটক রাজধানী হিসেবে অব্যাহত রয়ে গেছে । প্রথম দিকে সিকিম এক স্বাধীন রাজতন্ত্রের অন্তর্গত স্থান ছিল তবে পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে সিকিমকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই শহর সমন্ধে কোনো পূর্ব ইতিহাস তেমন পাওয়া যায়না। মনে করা হয় গ্যাংটক প্রাচীনকালে একটি ছোট গ্রাম ছিল পরে এনচে মঠ স্থাপনের ফলে ১৯৪০ সালে স্থানটি জনপ্রিয় বৌদ্ধ তীর্থস্থান হিসেবে  আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৫ সালে নানান রাজনৈতিক অচলতা পেরিয়ে ভারত আয়োজিত এক গণভোটের ফলে রাজতন্ত্র বাতিল হয়ে সিকিম ভারতের ২২-তম রাজ্যে পরিণত হয়। বর্তমানে সময়ে সিকিম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সবদিক থেকে স্থিত ও সমর্থ।

উত্তর সিকিমের অন্তর্গত কিছু স্থান, দর্শনের ক্ষেত্রে বিশেষ উপভোগ্য। গ্যাংটক থেকে একটি নির্দিষ্ট পথ অতিক্রম করে এই স্থান গুলিতে পৌঁছনো যায়।

উত্তর সিকিমের একটি জনপ্রিয় স্থান হলো গুরুদংমার হ্রদ। এই হ্রদ বিশ্বের তথা ভারতের সর্বোচ্চ হ্রদ গুলির মধ্যে একটি। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৭,৮০০ ফুট। তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু রিনপোচে-এর নাম কে কেন্দ্র করে এই হ্রদটির নামকরণ করা হয়। এই হ্রদ বেশির ভাগ সময়েই হিমায়িত থাকে কিন্ত তাও পর্যটকেরা গুরু রিনপোচে-এর চিহ্নিত এই শুভলক্ষন সমন্নিত হ্রদকে পরিদর্শন করতে ছুটে আসে , প্রকৃতির এক অসাধারণ সৃষ্টিকে স্বচক্ষে অবলোকন করতে।

সিকিম থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ছাঙ্গু লেক-এও পর্যটকের বিশেষ সমাবেশ দেখা যায়। এটি একটি হিমবাহী হ্রদ , ১২,৩১৩ ফুট উচ্চতায় হ্রদটি অবস্থিত। ঋতু পরিবর্তনের সাথে এই হ্রদের রং-ও পরিবর্তন হয়,যে পরিবর্তনকে স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুকেরা পর্যবেক্ষণ করেন সূক্ষ ভাবে। এছাড়া লোকমান্যতা অনুসারে এই স্থানে গুরু পূর্ণিমার দিনে বিশেষ উৎসব পালন করা হয়। ঋতু অনুযায়ী নানান জাতির ফুলের সম্ভারও এই উপত্যকায় দেখা যায় যেমন – রডোডেনড্রন, পপি, প্রিমুলাস ইত্যাদি। পর্যটকেরা আনন্দের সাথে ইয়াকে চড়ে এই লেকের সৌন্দর্যকে উপভোগ করে।

সিকিমে দুইটি বাবাজির মন্দির রয়েছে একটি নাথুলার কাছে এবং একটি সিল্ক রোডে। এই দুই মন্দিরের কেন্দ্রবিন্দু হলে হরভজন সিংহ। নাথুলা সেনাবাহিনীর অন্তর্গত এই তরুণ যুবক ১৯৬৮ সালে এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারায়। তবে লোকমান্যতা অনুযায়ী আজও মনে করা হয় এই যুবক সূক্ষ দেহ ধারণ করে দেশের সীমান্ত রক্ষা করে চলেছে। এই কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হরভজন সিংহের মাহাত্য অনন্য। দর্শনার্থীরা এই যুবকের স্মৃতির উদ্দেশ্যে গড়া মন্দিরে বেড়াতে আসে। কোনো ভগবান কে দেখার জন্য নয় বরং তারা আসে লোকমান্যতার নজির হিসেবে এই স্থানের গুরুত্বকে পর্যবেক্ষণ করতে।

এছাড়া পশ্চিম সিকিমের অন‍্যতম দর্শনীয় একটি স্থান হল খেচেওপালরি হ্রদ। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি পবিত্র হ্রদ। কিংবদন্তী আছে, এই হ্রদে এসে মনের ইচ্ছা জানালে তা নাকি পূর্ণ হয়। গাছপালা আর পাখিদের মধ‍্যে এই হ্রদ পশ্চিম সিকিমের সৌন্দর্য অনেকটাই বাড়িয়ে তুলেছে।

জমা অভিজ্ঞতা :
ধীরে ধীরে আমাদের পাহাড়ে থাকার মেয়াদ যখন কমে, আসতে থাকলো তখন হঠাৎ ই মনের মধ্যে, এতদিন যাবৎ কাটানো দিনগুলির স্মৃতি ঘুর-পাক খাওয়া শুরু করে। পরিবারের সাথে হাসি – ঠাট্টা – ঘোরাঘুরি সবই যেন চোখের সামনে পর পর ভাসতে থাকে আর মনে হয় এই দিন গুলি কি আর ফিরবে? শেষে মনের গহীন থেকে একটা কথাই উঠে আসে তা হলো খুশির মুহূর্ত আবার ফিরবে। এ কথা মনে হতেই মনটা আবার দুঃখ ভুলিয়ে সতেজ হয়ে ওঠে চোখের পলকে। এখানে নানান জায়গা ঘুরেছি , এর পাশাপাশি জায়গাগুলির বিবরণ শুনে কিছু তথ্যও মাথার মধ্যে সংগ্রহ করেছি। এই সংগ্রহ করা তথ্য গুলিকে আমার পাহাড় ভ্রমণ অভিজ্ঞতার একটু অংশ হিসেবে ধরা যেতে পারে। এছাড়া মূলত পাহাড়ের মানুষদের জীবনযাত্রা আমার অভিজ্ঞতার অনেকটা জুরে বিরাজমান । তারা যে ভাবে,তাদের অক্ষমতা গুলিকে গুরুত্ব না দিয়ে  অনুসাঙ্গিক বস্তু সকল আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। পুষ্টিকর খাদ্যের মন্দা তাদের বারোমাস-ই , এছাড়া অর্থনৈতিক দিক থেকেও তাদের বেশি সুযোগ সুবিধা নেই তবুও পর্যটনকে কেন্দ্র করে তারা অতীব স্বচ্ছন্দেই দিন যাপন করে। অল্পতেই কিভাবে খুশি থাকতে হয় এর নজির হলো এই পাহাড়ি মানুষগুলি। আমিও ব্যক্তিগত ভাবে এঁদের দেখে , নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নানান কিছু পুরে তারপরই বাড়ি ফিরি ।

প্রত্যাবর্তন :
স্বভাবতই যতগুলি ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম তার থেকে দ্বি-গুন ব্যাগ নিয়ে আমরা বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।  গ্যাংটকের যেন সমস্ত জিনিসই আমরা কিনে ফেলেছি,  এমন একটা গর্ব সমন্নিত মনোভাব নিয়ে আমাদের বাড়ি ফেরার যাত্রার সূত্রপাত হয়। প্রথমেই ভাড়া গাড়িতে চেপে পরি পাহাড় থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছনোর জন্য। অদ্ভুত বিষয় যত দেরিতে আমরা পাহাড়ে পৌঁছেছিলাম তার থেকে অনেক দ্রুত আমরা পাহাড় থেকে নেমে পরি । সময় যেন অনন্য গতিতে বয়ে চলেছিল , হয়তো গতানুগতিক জীবনে ফেরার তাড়ার জন্যই এমন ঘটনার আবর্তন ঘটে। আবার ফিরে এলাম স্টেশনে তবে এই সময় ট্রেনের জন্য অপেক্ষা ততটা তীব্র ছিলোনা, মনে ছিল বিষাদের ছায়া। এই বিষাদ নিয়েই আবার চেপে পরি ট্রেনে।বেশির ভাগ সময়টায় জানালার বাইরে তাকিয়ে , ফেলে আসা স্থান গুলির উদ্দেশ্যে বিদায় জ্ঞাপন করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ট্রেন যাত্রার অবসান ঘটে এবং আমরা সকলে ফিরে আসি নিজ নিকেতনে। সকলেই কাজের জীবনে ফেরার পরেই আবার ব্যস্ত হয়ে ওঠে । মা -মাসি -পিসি রা চলে যায় ঘর সামলাতে, বাবা – মেসো -জেঠু রা চলে যায় ল্যাপটপ চালাতে, আর রইলো পরে ছোট সদস্যরা তারাও পড়াশোনা সংক্রান্ত কাজে মশগুল হয়ে পরে। আমি শুধু দূর থেকে তাদের দেখছিলাম, আর ভাবছিলাম, যে ক্লান্ত মন নিয়ে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে পরেছিল, সেই ক্লান্ত মন যেন আবার জোড় পেয়ে ফিরে এসেছে। এই কিছু সময়ের ভ্রমণ এনে দিয়েছে নতুন করে ফের কাজ করার উদ্দম, এর পাশাপাশি এনেছে কাজ সেরে আবার বেরিয়ে পরার মনোভাব।

উপসংহার :
ভ্রমণ যেমন আনন্দ দেয় , তেমনি দেয় অনেক স্মৃতির সম্ভার। বিভিন্ন স্থান বিভিন্ন প্রকারের, এই বিভিন্নতাকে উপলব্ধি করার জন্যই মানুষ ভ্রমণে বেরিয়ে পরে। আমার পরিবারও এই কারণে বিশেষ ভাবে ভ্রমণ পিপাসু । গ্যাংটক গিয়েও আমরা নানান কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি। ঠান্ডা পাহাড়ে ঘুরে মনে যে , কি তৃপ্তিদায়ক প্রশান্তি আসে তার অনুভূতি বলে বা লিখে বোঝানো অসম্ভব। শুধু নিজের অনুভূতি কে একটা নামে নামাঙ্কিত করে প্রকাশ করা ছাড়া, এই অনুভূতি বোঝানো বিশেষ কষ্ট সাধ্য । সর্বোপরি বলা যেতে পারে বছরে অন্তত একটিবার,যেকনো স্থানে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা গতানুগতিক জীবনে নিয়ে আসে সুখের আভাস যে আভাসের জুড়িমেলা ভার।।