ডেঙ্গু নিয়ে প্রতিবেদন


১) গোটা দেশ জুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ
               কলমে – শ্রেয়সী মিশ্র, এম.এ(বাংলা) , মেদিনীপুর কলেজ

নিজস্ব সংবাদদাতা,- দেশ জুড়ে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে ডেঙ্গু তে আক্রান্তকারী মানুষের সংখ্যা। এক ভয়ানক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। কোথাও কোথাও আবার মহামারীর আকার ও ধারন করেছে । গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের এলাকায় ও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তকারীর হার। অনেক ক্ষেত্রে এর ভয়াবহতা যতটা না বেশি তার থেকে বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি করে ফেলছে মানুষ। আমাদের এলাকায়  গড়ে দু- তিন জন করে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিদিন। স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এর সংখ্যা।
               সাধারণ ভাবে আলাদা কোনো সময়ে ডেঙ্গুর প্রভাব এতোটা না থাকলেও এই বর্ষাকালে কয়েক মাস জুড়ে প্রচুর পরিমাণে তান্ডব শুরু হয়।আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন বৃদ্ধ থেকে শিশু সকলেই। এই সময় ঋতু পরিবর্তন জনিত কারণে ও সর্দি, কাশি, জ্বর হয় কমবেশি সবার, তাই অনেকক্ষেত্রে সাধারণ জ্বর ভেবে বহু মানুষ হেলায় পড়ে থাকেন বাড়িতে। যার কারনে পরিণতি টাও এত মারাত্মক হয়ে ওঠে। তাই এইসময় মানুষ জনের সুবিধার্থে আমাদের পঞ্চায়েতের তরফ থেকে গ্ৰামে প্রাথমিক চিকিৎসার গ্ৰহনের উদ্যোগ  নেওয়া হয়েছে। আমাদের এলাকায় এমন অনেক বৃদ্ধ মানুষ আছেন যাঁদের ক্ষেত্রে দূরবর্তী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্ৰহন করা দুষ্কর ব্যাপার , তাঁদের ক্ষেত্রে এটা অনেক উপকারী হয়েছে। আমাদের সমিতির তরফ থেকে আবার ওষুধ প্রদানের ও ব্যবস্থা গ্ৰহন করা হয়েছে। সপ্তাহে দুদিন করে সভার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে ডেঙ্গু জনিত সকল তথ্য আলোচনা করা হয়ে থাকে।যাতে করে জ্বর গায়ে মানুষ জন নিজেকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করার উদ্যোগ নিতে পারেন।
                     বর্ষাকালে অনিয়মিত বৃষ্টির কারনে যত্রতত্র জল জমা হয়ে থাকে আর যার সুযোগ নিয়ে এডিস মশা বানিয়ে ফেলে তাঁর আঁতুড়ঘর। জলজমা অপরিষ্কার জায়গায় যেহেতু এই মশার বসবাস তাই এই সময় যাতে কোনো জায়গায় জল জমা হয়ে না থাকে বা অপরিষ্কার আবর্জনা জনিত জায়গা প্রতি দুই দিন অন্তর পরিষ্কার করার ব্যবস্থা ও গ্ৰহন করা হয়েছে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে উপসর্গ গুলি বিভিন্ন রকমের দেখা যাচ্ছে। কারোর তাপমাত্রা বাড়ছে তো কারোর পেটের সমস্যা আবার কারোর ভীষণ শরীর যন্ত্রনা, সব উপসর্গ গুলো একসাথে ও এক একজনের দেখা যাচ্ছে।এই সঙ্কটময় অবস্থায় আশাকর্মীরা ও অনেক টা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঘরে ঘরে গিয়ে সমস্ত প্রকার সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
           ‌      অসুস্থতা বোধ করার সঙ্গে সঙ্গে  আয়োজিত স্বাস্থ্য শিবির এ গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ গ্ৰহন করছেন। যদি বেশি কিছু সমস্যা দেখা দেয় তাহলে, পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে গিয়ে নিজেদের কে সুস্থ করে ফিরছেন। আমাদের এলাকার পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃক এই অভিনব উদ্যোগ গোটা গ্ৰামবাসী কে স্বস্তি দিচ্ছে। এতটা  সতর্কতা মেনে চলা কখনোই সম্ভব হতো না যদি গ্ৰামবাসীরা না একজোট হয়ে দাঁড়াতেন।

সরকারি প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে তৎপর গ্রামবাসী
কলমে:- অভিজিত ঘোষ ( বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় )

নিজস্ব সংবাদদাতা:-  ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারি আর্থিক আনুকূল্যে বেশ কিছু প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কর্মসূচি গুলির হাত ধরে আজ বিশ্বের অনেক এলাকা ডেঙ্গু মুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবুও ডেঙ্গুর প্রকোপ নিম্নবর্তী এবং প্রত্যন্ত গ্রামীন এলাকা গুলি থেকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়নি।

        ডেঙ্গু প্রতিরোধে মূলত প্রথম এবং প্রধান কর্মসূচি হল জনসচেতনতা বৃদ্ধি। এই জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই বাঁকুড়ার B. S. M. C. H. এর C. M. O. H. এবং স্বাস্থ‍্য আধিকারিকের উপস্থিতিতে আগামী 10.08.2023 তারিখে  বাঁকুড়ার একটি প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা দুবড়াকোনে অনুষ্ঠিত হলো ডেঙ্গু প্রতিরোধের এক বিশাল মঞ্চ সভা।

ওই মঞ্চ সভার মাধ্যমে গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত এবং প্রায় অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা প্রচার ঘটিয়েছেন বাঁকুড়ার B. S. M. C. H.  এবং সরকারের পক্ষ থেকে যে বিভিন্ন কর্মসূচি গুলি রয়েছে তাও লাগু করার  আশ্বাস বচন দিয়েছেন C. M. O. H. । এছাড়াও ওই কর্মসূচি গুলির মাধ্যমে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে যে ঝোপঝাড় গুলি রয়েছে তা পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন বাঁকুড়ার B. S. M. C. H. এর  স্বাস্থ‍্য আধিকারিক এবং তিনি গ্রামবাসীদের নির্দেশ দিয়েছেন বাড়িতে এবং বাড়ির আশেপাশে জমা জল না রাখতে, কারণ জমা জলেই মশারা ডিম পাড়ে এবং তার মাধ্যমে মশার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। এছাড়াও প্রত্যহ মশারী টাঙানো নিত্যনৈমিত্তিকের তালিকায় তালিকাভুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বাঁকুড়ার B. S. M. C. H. এর ডাক্তারবাবু DR. A. KR. GHOSH, কারন রাত্রিবেলা মশারি না টাঙ্গালে মশার কামড়ে আমাদের শরীরে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।

যদিও গ্রামবাসীরা প্রথমে এই সমস্ত বিষয়ে অসচেতন থাকার কারণে তারা এই বিষয়গুলি সম্পর্কে অবহত না হওয়ায় বিষয়গুলির প্রতি সম্মতি দিচ্ছিলেন না। উক্ত গ্রামের স্থানীয় এক গ্রামবাসী রাজু দাসের কথায় ” ঘরের পরিস্কার জলে কখনো মশায় ডিম পাড়ে, সরকার আমাদের উলটা পথে চালাচ্ছে।” নন্দ পোড়ে বলেন যে, “ঝোপঝাড় থাকলে আবার মশা বাড়ে, যতসব আজগুবি, গাঁজাখুরী গল্প শোনাতে এসেছে আরকি।”

এমত অবস্থায় সভামঞ্চে উপস্থিত সম্মানীয় এবং উক্ত গ্রামের বিশ্বস্ত স্থানীয় ডাক্তার বাবু DR. N. KR. MUKHERJEE তাদের বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝালে তারা নিজে থেকেই এই সমস্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে বুঝে এই সমস্ত কর্মসূচির প্রতি সম্মতি জানিয়ে ডেঙ্গু মুক্ত বাংলা গড়তে সাহায্য করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।