॥ কাজী নজরুল ইসলাম ॥


ভূমিকা :
তিনি বিদ্রোহী কবি, মানবতার কবি, প্রেমের কবি। তিনি আমাদের জাতীয় কবি। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান কোনো দিন ভুলবে না। তবে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে সাহিত্যিক, কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল ইসলাম সর্বদাই ছিলেন উচ্চকণ্ঠ।কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে বেশি পরিচিত। তাঁর কবিতা, গান ও লেখায় নিপীড়িত মানুষের মুক্তির বাণী ধ্বনিত হয়েছে। ১৮৯৯ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলাম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যে কবির কবিতা পাঠে হৃদয়ে স্পন্দন জাগে, রক্তে তোলে শিহরণ, তিনি আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বিদ্রোহী কবি, মানবতার কবি, প্রেমের কবি একবিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও – গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি একাধারে সাহিত্যিক কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতজ্ঞ সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসাবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল ইসলাম সর্বদাই ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। বাংলা কাব্য-সাহিত্যের অঙ্গনে নজরুল ইসলাম একজন প্রতিভাবান কবি ছিলেন।

জন্ম  ও শিক্ষা ও কর্মজীবন :
        কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে ২৪ মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক পীর বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মাতার নাম জাহেদা খাতুন। তাঁদের চার পুত্রের অকাল মৃত্যুর পর নজরুলের জন্ম হওয়ায় তাঁর নাম রাখা হয় ‘দুখু মিয়া, কাজী নজরুলের পূর্বপুরুষরা ছিলেন বিহার প্রদেশের ৭, আমনিসোলে এরা কাজীর দায়িত্ব পালন করতেন। নজরুল বালা – কালেই তার পিতামাতাকে হারান। নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়।
        দারিদ্রতা, আর্থিক অনটন, পিতার মৃত‍্যু নজরুলকে দশ বছর বয়সে জীবিকার পথে দাঁড় করিয়ে দেয়। এসময় মক্তব থেকে নিম্ন মাধ‍্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মক্তবেই শিক্ষকতা করতেন। পাশাপাশি এক মসজিদের আজান দাতা মুয়াযযিন হিসাবে নিয়োজিত হন। তবে এই কাজ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এক ভ্রাম‍্যমাণ নাট‍্যদলে যোগ দেন। সেখানেই শুরু হয় নাট‍্যচর্চা, সলতে পাকে কবি নজরুলের। এরপর ১৯১০ সালে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল এবং মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে ভরতির মধ‍্য দিয়ে পুনরায় ছাত্রজীবন শুরু করেন। এইসময় মাথরুন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক কবি নজরুলের অনুপ্রেরণার ঠিকানা হয়। তবে আর্থিক সমস‍্যা ছাত্রজীবনকে দীর্ঘ হতে দেয়নি।
       প্রথমে খ্রিস্টান রেল‌ওয়ে গার্ডের খানসামা তারপর আসানসোলের এক রুটির দোকানে পাঁচ টাকা মাসিক বেতনে রুটি বানানাের চাকরি নিলেন। সেখানকার এক দারােগা কাজী রফিকউদ্দিন গান বাজনা ও কবিতার প্রতি ঝোঁক দেখে নজরুলকে তার ময়মনসিংহস্থ নিজ গ্রামে কাজীর সিমলায় নিয়ে আসেন। এখানে তিনি তাকে এক স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আবার রানীগঞ্জের সেই স্কুলে ফিরে এলেন। এর ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরনের সাহিত্য আর কবিতার বই পড়ে নিজের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে লাগলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে গিয়েও তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন।  অবশেষে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে মাধ‍্যমিক পরীক্ষার প্রিটেস্টে পরীক্ষা না দিয়ে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসাবে যোগ দেন।    

নজরুলের সৈনিকজীবন :
        সেনা প্রশিক্ষণের জন‍্য প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়মে, পরবর্তীতে সীমান্ত প্রদেশের ন‌ওশেরায় যান। এরপর সেনাবাহিনীতে ১৯১৭র শেষ দিক থেকে ১৯২০র মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত কাটিয়েছেন। এইসময় সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন।
       সেনানিবাসে থাকলেও অব‍্যাহত থাকে সঙ্গীত ও সাহিত‍্যচর্চা। এখানেই নজরুল লিখেছেন প্রথম গদ‍্য রচনা – ‘বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী’, প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘মুক্তি’।
এই সময় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। ১৯২০ খ্রি: যুদ্ধ শেষ হলে সৈনিক জীবন ত‍্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন।

কবির বৈবাহিক জীবন :‌
       ১৯৪২ খ্রীস্টাব্দের ২৪ শে এপ্রিল, কাজী নজরুল ইসলাম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ।তিনি প্রমীলা দেবীকে বিবাহ করেন। তবে, এর আগে নজরুলের বিয়ে হয় আলী আকবর খানের বোন নার্গিস আসার খানমের সঙ্গে। বিয়ের পর নজরুলের ঘর জামাই হবার শর্ত নিয়ে বিরোধ বাঁধে এবং বাসর সম্পন্ন হবার আগেই নজরুল নার্গিসকে রেখে কুমিল্লায় চলে আসেন। থাকেন বিরাজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে। সেখানেই আলাপ হয় প্রমিলা দেবীর সঙ্গে, পরিচয় থেকে প্রণয় বিবাহে পরিণতি পায়। 
সাম্যবাদী নজরুল ; মুসলিম হয়েও চার সন্তানের নাম বাংলা এবং আরবি/ফারসি উভয় ভাষাতেই প্রদান করেছিলেন, যেমন: কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ।  কিন্তু  তাঁর জীবন ছিল চিরকালই বিড়ম্বনাজর্জর। সন্তানের মৃত্যু ও স্ত্রীর অসুস্থতা তাঁর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। নজরুলের প্রেমে পড়েননি, এমন পুরুষ কিংবা নারী খুঁজে পাওয়া ভার। তাঁর চরম শত্রুরাও তাঁর ভালোবাসার শক্তির কাছে হার মেনেছেন। কবি বুদ্ধদেব বসু নজরুলকে প্রথম দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। তিনি লিখেছেন, ‘সেই প্রথম আমি দেখলাম নজরুলকে। এবং অন্য অনেকের মতো যথারীতি তাঁর প্রেমে পড়ে গেলাম!’ শুধু বুদ্ধদেব বসু নন, তাঁর স্ত্রী প্রতিভা বসুও নজরুলের প্রেমে পড়েছিলেন। সেই কাহিনি নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘আয়না’ নামে একটি গল্প। কী অবাক কাণ্ড! স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একই লেখকের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন!অর্থের ব্যাপারে নজরুল ছিলেন ভয়াবহ বেহিসাবি। হাতে টাকা এলেই তা বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করে শেষ করে দিতেন।
আর বলতেন, ‘আমি আমার হাতের টাকা বন্ধুদের জন্য খরচ করছি। আর যখন ওদের টাকা হবে ওরাও আমার জন্য খরচ করবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই।’নজরুল তাঁর দুই পুত্রের ডাকনাম সানি (কাজী সব্যসাচী) আর নিনি (কাজী অনিরুদ্ধ) রেখেছিলেন তাঁর দুই প্রিয় মানুষ সান ইয়াত-সেন ও লেনিনের নামানুসারে। নজরুল তাঁর সন্তানদের খুবই ভালোবাসতেন। এমনকি তিনি তাঁদের নিজ হাতে খাওয়াতেন আর ছড়া কাটতেন, ‘সানি-নিনি দুই ভাই/ ব্যাঙ মারে ঠুই ঠাই।’ কিংবা ‘তোমার সানি যুদ্ধে যাবে মুখটি করে চাঁদপানা/ কোল-ন্যাওটা তোমার নিনি বোমার ভয়ে আধখানা।’

ব‍্যক্তি নজরুল :
       ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মতো কবিতা; ধূমকেতুরমতো সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন।
        নজরুল শুধু বিদ্রোহী নন তিনি ছিলেন আদর্শ মানবতাবাদী। তাই তাঁর কাব্যে শাসন-শোষণ ক্লিষ্ট, বঞ্চিত নিপীড়িত মানবাত্মার প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনার প্রকাশ ঘটেছে। বাস্তববাদী হয়েও নজরুল প্রেম ও প্রকৃতিকে নিয়ে আবেগপূর্ণ কবিতা বিশেষত গান রচনা করেছেন এবং জনমনে তার আবেদন আজও অম্লান- যা নজরুলের রোমান্টিক প্রতিভার পরিচয়াক। সাম্যবাদে বিশ্বাসী ছিলেন কবি নজরুল। ধর্ম,জাতি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রাদেশিকতা এমনকি নারী পুরুষের ভেদ বৈষম্যের সীমা অতিক্রম করে তিনি সবাইয়ের সমমর্যাদা ও সমানাধিকারের কথাই ধ্বনিত করেছেন।সর্বোপরি এই বিদ্রোহী মানুষটির অন্তরে যে একটি ভক্তিবিনম্র সত্তা অতি সন্তর্পনে লালিত হয়ে উঠেছিল তাঁর পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর শ্যামা সংগীত ও ইসলামী গান থেকে। তবু যুগের সৃষ্টি হয়েও তিনি যুগকে অতিক্রম করে আজও অম্লান। ভাষা, ছন্দ, অলঙ্কার ব্যবহারে তাঁর দক্ষতা ও কম নয়। আজ তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হলেও পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী মানুষের তিনি আত্মার আত্মীয়।কিন্তু তাঁর কবিতার অন্তর্নিহিত শক্তি তেমন তীব্র ছিল না। আসলে দুর্বার প্রাণাবেগ ও পরিমার্জনের ধৈর্য হীনতার কারণেই এই শৈথিল্য।
       নজরুল ছিলেন সত্যিকারের জনদরদি মানুষ। একটি ঘটনা দিয়ে তার প্রমাণ দেওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ কলকাতার এক দরিদ্র হিন্দু মেয়ের বিবাহ। কোনোরকমে কন্যা বিদায়ের আয়োজন চলছে। নজরুল খবরটি পেলেন। তিনি দ্রুত বাজারে গেলেন। এক হিন্দু বন্ধুকে নিয়ে বিয়ের বাজার করলেন। তারপর ধুমধাম করে মেয়েটির বিয়ে হলো। মেয়ের বাবা নজরুলকে প্রণাম করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমরা আপনাকে ভুলব না কোনো দিন।’ এমনই ছিলেন কবি। তাঁর বাড়িতে সাঁওতাল, গারো, কোল—সবাই দল বেঁধে আসতেন। আপ্যায়িত হতেন উৎসবসহকারে। নজরুলের দৃষ্টিশক্তি ছিল অসামান্য। তিনি গভীর অন্ধকারেও বহুদূরের কোনো জিনিস স্পষ্ট দেখতে পেতেন।

ক্রীড়াপ্রেমী নজরুল :
নজরুল ছিলেন অসম্ভব রকমের ক্রীড়াপ্রেমী। সময় পেলেই তিনি ফুটবল খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে ছুটতেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে। যেদিন বাড়ি থেকে সোজা খেলা দেখতে যেতেন, সেদিন দুই পুত্র সানি আর নিনিকে সঙ্গে নিতেন। একবার খেলা দেখতে গেছেন। স্টেডিয়ামে পাশে বসে আছেন হুমায়ূন কবির। খেলা ভাঙার পর ভিড়ের মধ্যে দুই পুত্র খানিকটা আড়ালে চলে গেল। হঠাৎ পেছন থেকে নজরুলের হাঁকডাক শোনা গেল, ‘সানি কোথায়? নিনি কোথায়?’ মাঠসুদ্ধ লোক হাঁ হয়ে নজরুলকে দেখছে। এরই মধ্যে দুই পুত্রকে ঠেসে ধরে ট্যাক্সি করে বাড়ি নিয়ে এসে তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
নজরুল বেশ দক্ষ দাবাড়ু ছিলেন। যেদিন বিশেষ কোনো কাজ থাকত না, সেদিন তিনি দাবা খেলতেন। খেলায় এমন মগ্ন হতেন যে খাওয়া-নাওয়ার খেয়ালও থাকত না। মাঝেমধ্যে নজরুলের বাড়িতে দাবার আসর বসাতে আসতেন কাজী মোহাতার হোসেন ও হেম সোম।কলকাতায় নজরুলের তিনতলা বাড়ির সামনে ছিল একটা ন্যাড়া মাঠ। খেলা নিয়ে বহু কাণ্ড ঘটেছে ওই মাঠে। একবার জোর ক্রিকেট খেলা চলছে। নজরুল গ্যালারি অর্থাৎ বারান্দায় দাঁড়িয়ে খেলারত তাঁর দুই পুত্রকে জোর উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বড় পুত্র সানি এল ব্যাট করতে। প্রথম বলেই ছয়! নজরুলের সে কি দাপাদাপি! ঠিক পরের বল আসার আগে তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘সানি, ওই রকম আরেকটা মার।’ ব্যস বাবার কথায় উত্তেজিত হয়ে দিগ্‌বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ব্যাট চালাল পুত্র। ব্যাট অবশ্য বলে লাগল না। লাগল উইকেটকিপারের চোয়ালে! বেশ রক্তারক্তি অবস্থা! অবশেষে খেলা বন্ধ করা হলো।
এমনই নানা রঙের মানুষ ছিলেন নজরুল। যাঁর জীবনে দুঃখ-কষ্টের অভাব ছিল না, আবার রং-রূপেরও অভাব ছিল না। পৃথিবীর খুব কম মানুষই বোধ হয় এমন  মহাজীবনের অধিকারী হন।

বুদ্ধদেব বসু যথার্থই বলেছিলেন,
‘কণ্ঠে তাঁর হাসি, কণ্ঠে তাঁর গান, প্রাণে তাঁর অফুরান আনন্দ—সব মিলিয়ে মনোলুণ্ঠনকারী এক মানুষ।’

সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবি প্রতিভা :
তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম “মুক্তি” কিন্তু যে কবিতা তাঁকে খ্যাতি এনে দেয় তার নাম “বিদ্রোহী”। পরবর্তীকালে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিতি লাভ করেন। “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতাটি রচনা করে তিনি ব্রিটিশ শাসকদের বাস। করেছিলেন। এ কারণে তাকে কারাবর করতে হয়েছে। নজরুল প্রধানত কবি, তবে গদ্য রচনাতেও তিনি অকৃপণ ছিলেন।

     

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল -“অগ্নিবীণা”(১৯২২), “বিষের বাঁশি”(১৯২৪), “সাম্যবাদী”(১৯২৫), “সর্বহারা”(১৯২৬), “ফনিমনসা”(১৯২৭), “প্রলয় শিখা”(১৯৩০), “দোলনচাঁপা”, “ছায়ানট”, “পুবের হাওয়া”, “সিন্ধু হিল্লোল”, “চক্রবাক “, “সন্ধ্যা” প্রভৃতি। এছাড়া “ব্যথার দান”, “রিক্তের বেদন”, “শিউলি মালা” প্রভৃতি গল্পগ্রন্থ, “বাঁধনহারা”, “মৃত্যুক্ষুধা”, “কুহেলিকা” উপন্যাস এবং “বুলবুল”, “চোখের চাতক”, “বনগীতি”, “গীতি শতদল” প্রভৃতি গীতি সংকলন রচনা করেন। “যুগবাণী” তাঁর রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ।

তাঁর কাব্য ও গানে বীর্যবান প্রাণবহ্নি নিত্য দীপ্যমান- যা জাতিভেদ মুছে দিয়ে জনমানসে ভারত ঐক্যের নিবিড় উপলব্ধি ও বিশুদ্ধ স্বাদেশিক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। তাঁর কাব্য কবিতায় তিনি সেই যৌবন শক্তিকেই জয়মাল্য পরিয়েছেন। তবে সে বিদ্রোহ শুধু ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নয় – সামাজিক অর্থনৈতিক নানা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। জাতপাত ও সকল প্রকার ভেদ বুদ্ধির বিরুদ্ধে সাম্যবাদী কবির এই সোচ্চার বিদ্রোহ ঘোষণার কারণেই তিনি বিদ্রোহী কবি। বিদেশি সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে তিনি ছড়িয়েছেন আগুনের ফুলকি। বোধ হয় রাজনৈতিক চেতনার ক্ষেত্রে এমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস আর কোনো কবি সঞ্চার করতে পারেননি। বিদ্রোহী নজরুল তাঁর কাব্য জীবনের শুরুতে রবীন্দ্রনাথের সস্নেহ সান্নিধ্য লাভ করলেও তাঁর কাব্যের প্রধান ধারাটি ছিল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। বিদ্রোহ -ই ছিল তাঁর কাব্যের প্রাণ।
কাজী নজরুল ইসলাম খুব অল্প সময় সাহিত্য সাধনার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার মধ্যেই তিনি রচনা করেছিলেন অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, চক্রবাক, দোলনচাঁপা, ফণীমনসা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ এবং কুহেলিকা, মৃত্যুক্ষুধা প্রভৃতি উপন্যাস। তবে, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত।

বিদ্রোহী কবি নজরুল :
মাত্র বাইশ বছর বয়সে নজরুল লিখে ফেললেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী ’। এই কবিতাটি রচনা করে কাজী নজরুল ইসলাম  বিখ্যাত হয়ে গেলেন ‘বিদ্রোহী কবি হিসাবে। দেশে প্রচুর সাড়া পড়ে গেল। এই একটি মাত্র কবিতার জন্য নজরুলকে চিরঞ্জীব পরিচিতি দান করেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাকে সমাদরে স্বাগত জানিয়ে আশীর্বাদ করলেন। তারপরের ইতিহাস বিজয়ের ইতিহাস, গৌরবের ইতিহাস,অমরত্বের ইতিহাস।
তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নজরুলের কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তার সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন।

       নজরুলের বস্তুনিষ্ঠ ও বক্তব্যপ্রধান কবিতাগুলির মধ্যে বিদ্রোহী, ফরিয়াদ, সাম্যবাদী, অন্ধস্বদেশ, দেবতা, কাণ্ডারী হুঁশিয়ার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এইসব কবিতার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও বিদ্রোহের দীপ্তি ও দাহ যুগমানসের বৈশিষ্ট্য রূপে প্রকাশ লাভ করেছে। ” আমার কৈফিয়ৎ ” কবিতায় নজরুল ইসলাম স্পষ্টই বলেছেন :
“প্রার্থনা করো-যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটী মুখের গ্রাস।
যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ।”
    নজরুল তাঁর বিদ্রোহী কবিতায় তীব্র চিৎকারে ঘোষণা করেছেন—
“আমি সেই দিন হবো শান্ত যবে
উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবেনা
অত্যাচারীর ঘড়া কৃপাণ ভীম রণভূমে বসিবে না।”
আবার কখনো বিপ্লবের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করার প্রেরণায় তিনি গেয়েছেন
“নবীন মন্ত্রে দামিতে দীক্ষা দিতে আসিতেছে ফাল্গুনী।
জাগোরে জোয়ান।
ঘুমায়ো না ভূয়ো শান্তির বাণীশুনি।”
কবি ধ্বংসের জয়গান গাইলেও তার মধ্যে নূতন জীবনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন :
“ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর প্রলয় নূতন সৃজন বেদন
আছে নবীন জীবন হারা অসুন্দরে করতে ছেদন।
তাই ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখীর ঝড়।”
দেখে তিনি আনন্দিত, শুনতে পেয়েছেন সেই অমর বার্তা—
“ফাসীরমঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান।
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা দিবে কোন বলিদান।”

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় :
“বিশুদ্ধ আবেগজীবী নজরুল অত্যাচারিতের প্রতি সমর্থনে। শোষক সম্প্রদায়ের প্রতি মহৎ ঘৃণায় এবং সর্বমানবিক কল্যাণবোধের আমন্ত্রণে সাম্যবাদের কাছে এসেছেন।”

এখানেই তাঁর অনন্যতা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতির বিরুদ্ধে দেশনেতাকে হুঁশিয়ার করে দেওয়ার সচেতনতাই কাণ্ডারী হুঁসিয়ার কবিতার মর্ম সত্য, এছাড়া বিপ্লববাদের মতোই নজরুলের ‘সাম্যবাদী ইন্টারন্যাশানাল গীতি, কৃষাণের গান, শ্রমিকের গান, গান, ধীবরের গান প্রভৃতি কবিতায় জাতিভেদ হীন সাম্প্রদায়িকতা মত্ত এক উদার সাম্যবাদী ভাবনা প্রতিফলিত।

কবির প্রকৃতি ও  শিশু বিষয়ক মনোভাব :
       ঘটনাবহুল নজরুলের জীবনের মতোই তাঁর কাব্যের পটভূমিও বৈচিত্র্যময়। বিদ্রোহ ও বিপ্লবের কবিতার মধ্যেই নজরুলের কবি প্রতিভা শুধু আবর্তিত হননি। ‘বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’ গানের আড়াল, আমি গাই তার গান প্রভৃতি কবিতায় প্রেম ও প্রকৃতির অপূর্ব সমাহার অনুভব করা যায়। যেমন

বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’ কবিতায় কী আশ্চর্য সুন্দর প্রেম চেতনা আত্মপ্রকাশ করেছে :
নিশীথিনী যায় দূর বনছায় তন্দ্ৰায় ঢুলুঢুলু।
আবার ‘গানের আড়াল’ কবিতায় ও রোমান্টিকতার বিরহ মাধুর্যে মনোহর :
জানায়ো আমারে, যদি আসে দিন এইটুকু শুধু যাচি।

কবি মুসাফির নজরুল কুমিল্লায় থাকাকালীন তার ঘরের জানালার পাশে গুবাক তরুর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। কোন এক অনামিকা প্রেমিকার কাছে হৃদয় নিবেদনের মুহূর্তে তার স্মৃতিচিত্র কবিকে আলোড়িত করেছে। কাজী নজরুল বেশ কিছু শিশু বিষয়ক কাব্য কবিতা নাটক রচনা করেছেন। তার ‘খুকুও কাঠবিড়ালী’, ‘প্রভাতী’, ‘লিচুচোর’, ‘ঝুমকো লতায় জোনাকী’, ‘মটকু মাইতি’, ‘বাঁটকুল রায়’, ‘ঘুমপাড়ানি গান’, ‘আমি যদি বাবা হতাম’, ‘বাবা হত খোকা’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘শিশুর জাদুকর’ ইত্যাদি কবিতাগুলি এই পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য।

খুকুর চোখে কাঠ বিড়ালীর যে জীবন্ত অবয়ব ফুটে উঠেছে তা সত্যই চমৎকার :
“দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ ছুট?
অমা দেখে যাও।।”

সমগ্র দৃশ্যটি যেন শিশুর কণ্ঠস্বর সহ একটি শ্রুতিময় চিত্র হয়ে ওঠে। তাঁর ‘পুতুলের বিয়ে’ নাকি শিশু মনের উপযোগী নাটক ও কবিতার সমাবেশ দেখা যায়।

নজরুলের সংগীত বিদ্যা :
তাঁরই রচিত গান নজরুল গীতি নামে পরিচিত। তিনি আগমনী বিজয়া, রাম শ্যাম বা কৃষ্ণ, চৈতন্য শঙ্কর দুর্গা, সরস্বতী বন্দনামূলক, মহাপুরুষ বন্দনা, বৈষ্ণব ভাবমূলক, হাস্য রসাত্মক, গজল, মমর্শিদ, জারি, সারি, ঝুমুর, খেয়াল ঠুংরী, বাউল, কাজরী, ভাটিয়ালী শ্যামাসঙ্গীত প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গান রচনা করে সাঙ্গীতিক প্রতিভার বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। কাব্য ও কবিতা রচনায় নজরুলের যে অসংযম ও বাণীশৈথিল্য দেখা যায় গানে তার পরিচয় অবিরমা নয়, বাংলা সাহিত্যের সুরসিক ও ভাবুকের কাছে নজরুল আজও নিত্য প্রেরণা। গান রচনায় নজরুল ‘স্বরাজ্যে স্বরাট’। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। তাঁর গানের সুরের বৈচিত্র্য আমাদের মুগ্ধ করে। মানুষ এখনো শ্রদ্ধা সহকারে তার গান শোনে।

◆ কবি নজরুলের ভূমিকা চলচ্চিত্রে :
নজরুল ইসলাম ‘ধুপছায়া’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন। এছাড়া পাতালপুরী, গোরা, রজতজয়ন্তী, সাপুড়ে, নন্দিনী, অভিনয় -এর মতো কয়েকটি নামকরা চলচ্চিত্রের গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। বলাবাহুল্য চৌরঙ্গী হিন্দিতে নির্মিত হলেও সেটার জন্য তিনি ৭টি হিন্দি গানও লেখেন।

নজরুলের পুরস্কার ও সম্মাননা :
        ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক বাংলা সাহিত্যর  ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ পাওয়ার পর ১৯৬০ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত হন। এছাড়া ২০১২ সালে আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে, তার নামকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্গাপুরে ‘কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নামকরণ করা হয়েছে। তার পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলাম সরণী ও মেট্রো স্টেশনেরও নামকরণ করা হয়েছে।
       ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নজরুলকে সে দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাহাকে সাম্মানিক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়া নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন।

উপসংহার :
        নজরুলের ছিল দৃপ্ত কণ্ঠস্বর, অব্যবহিত আঘাতের শক্তি, তাই রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক কবিদের মধ্যে তাকেই আজ উজ্জ্বলতম সেতু বলে মনে হয়।  নজরুল ইসলাম এসেছিলেন ইসলামের ধ্বজা নিয়ে নয় ; সমগ্র ভারতের হয়ে সামাজিক’ রাজনৈতিক- সবদিক থেকে রণভেরি বাজিয়ে। কণ্ঠে তাঁর মানবমুক্তির জয়গান  ।  সমগ্র জাতি কাজী নজরুল ইসলামের কবি প্রতিভার কাছে তাই চিরঋণী।                        রবীন্দ্রকাব্য পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ও মোহিতলাল। কিন্তু যারা রবীন্দ্র কাব্য পরিমণ্ডলের বাইরে কাব্য সাধনা করেছিলেন তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে নাম করতে হয় নজরুলের, নজরুল যুগচেতনার কবি, হুজুগের কবি, যুগচেতনার কবি হয়েও তিনি যুগতীর্ণ। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন যুগের হুজুগ কেটে গেলে তার কাব্য কবিতা সকলের কাছে তেমন সমাদর পাবে না –
“পরোয়া করিনা বাঁচি বা না বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে।”
কিন্তু যুগের হুজুগ কেটে যাওয়ার পরও তিনি বেঁচে আছেন। শতবর্ষ পরেও আমরা তাকে ভুলে যাইনে। ভোলার কথাও নয়। বাংলাদেশের জাতীয় কবি রূপেও নজরুল ইসলাম খ্যাতির শিখরে অধিষ্ঠান করেন। তাঁর অবদানের কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে মানুষের মনের মণিকোঠায় ।