র্যাগিং – একপ্রকার মানসিক ব্যাধির স্বরূপ
কলমে : অনন্যা সাহা, বি.এ(বাংলা), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
■ ভূমিকা :
সময় এগিয়েছে, যুগ আধুনিক হয়েছে তবে দুর্বলের উপর স্ববলের অত্যাচার কখনো লুপ্ত হয়ে যায়নি। প্রাচীন কালেও যেমন দুর্বলেরা অবদমিত ছিল তেমন ভাবেই এখনো অবদমিতই আছে। এর মুখ্য কারণ একটাই, সময়ের সাপেক্ষে মানুষের জীবনযাত্রা বদলালেও, মানুষের মানসিকতা বদলায়নি।
মানুষের মানসিকতা সেই তলানিতেই রয়ে গিয়েছে। মানুষ প্রযুক্তির সাহায্যে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করলেও, তারা নিজেদের মানসিকতা বদলানোর পথকে সুগম করতে কখনোই উদ্যোগ নেয়নি। এর জন্য বিভিন্ন ধরণের অত্যাচার দিনের পর দিন বেড়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্র ভেদে এক ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দাঁড়িয়ে সমাজের বুকে একটু অনুসন্ধান করলেই দেখা যাবে অত্যাচারের নানান দৃষ্টান্ত সমূহ। মূলত সাধারণ মানবিকতাবোধ তথা নৈতিকতাবোধের অভাবেই যেকোনো মানুষের অন্তঃস্থলে বেড়ে ওঠে এক শয়তানের প্রতিমূর্তি।
বলাবাহুল্য কোনো মানুষ ভালো বা খারাপ এই তকমা নিয়ে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়না। বরং পরিবারের, সমাজের, নানা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রাপ্ত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তারা ভালো অথবা খারাপ মানুষে পরিণত হয়। এই ভালো বা খারাপ মানসিকতা যেকোনো মানুষের অস্তিত্বকে প্রাণ দান করে। যারা সৎ পথ অবলম্বন করে তারা সমাজে একরকম স্থান পায় আবার যারা অসৎ পথ অবলম্বন করে তারা সমাজে আর এক রকম স্থান পায়। এই ভালো খারাপের দ্বন্দ্ব আসলে চীরদিনের কিন্তু তবুও সর্বদাi মন্দ-র উপর ভালোর জয় ঘোষিত হয়। তবে প্রাচীন কাল থেকে উক্ত এই নিয়ম প্রযোজ্য হলেও, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কোথাও যেন মন্দর রমরমা বেড়েই চলেছে। মানুষ সৎ পথ কে ত্যাগ করে অসৎ কে বেছে নিতেই বিশেষ স্বচ্ছলতা বোধ করছে।
উক্ত কথা গুলির মাধ্যমে এটাই বলা চলে যে, দিনে দিনে মানুষের মানসিকতার পতন ঘটছে। র্যাগিং কালচার মানুষের এই অধঃপতনের অন্যতম এক দৃষ্টান্ত এবং সময়ের সাপেক্ষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটিত এই র্যাগিং অত্যাচারেরই এক সর্বোত্তম বিকল্পে পরিণত হয়েছে।
■ র্যাগিং কী :
র্যাগিং কী এ বিষয়ে যদি বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে হয় তবে কটা বিশেষ বিষয়ের উপর অলোকপাত করা প্রয়োজন সাপেক্ষ যথা ,
র্যাগিং শব্দটির মূল ভাবগত অর্থ হলো আলাপ। যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন নবাগতদের সাথে সিনিয়ারদের আলাপচারিতা হয় তখন সেই আলাপচারিতাকেই মূলত র্যাগিং নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে ।
এর পরে র্যাগিং কেন করা হয়, এই বিষয়ে কথা বললে, বলা যেতে পারে, যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরাতন ছাত্র-ছাত্রীদলের সাথে নবাগতদের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যই র্যাগিং এর প্রচলন।
এই র্যাগিং বিশেষ ভাবে ইউনিভার্সিটি তথা বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতেই দেখা যায় এছাড়া যেকোনো স্কুলের হোস্টেল বা ক্লাস রুমেও র্যাগিং সংক্রান্ত কিছু তথ্য মেলে। আসলে শুধুমাত্র আলাপ পর্ব সারার জন্য যদি র্যাগিং বিষয় টি ঘটিত হতো তবে কোনো সমস্যায় ছিলনা কারণ যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছাত্রীরা অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করতে আসে। এবার যেখানে আসছে সেখানকার সাথে নিজেকে একাত্ব না করতে পারলে পরবর্তীতে তারাই সমস্যার সম্মুখীন হবে সেই দিক থেকে বিচার করলে জুনিয়ারদের জন্য আলাপ চারিতা খুব একটা খারাপ জিনিস নয় । কিন্তু সমস্যা তখনই হয় যখন আলাপের গন্ডি পেরিয়ে কিছু মানসিক ভাবে বিকৃত ব্যক্তিবর্গ র্যাগিংকে, অত্যাচারের পর্যায়ে নামিয়ে আনে ।
■ র্যাগিং-এর উদ্দেশ্য :
যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটা র্যাগিং গুলির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, শান্তিপূর্ণ ভাবে নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের সাথে পরিচয় পর্ব সারা এবং তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত নানা বিষয় সম্মন্ধে অবগত করা।
প্রথমেই বলা হয়েছে নবাগতরা যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে আসে অনেক আশা নিয়ে, তাই তারা যাতে তাদের প্রতিষ্ঠান গুলির সাথে মানিয়ে নিতে পারে সেই দিক টা বিবেচনা করা কর্তৃপক্ষ সমেত সারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। এবার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই সিনিয়ারা সেমেস্টার এর প্রথমদিকে র্যাগিংকে একটি পন্থা হিসেবে বেছে নেয়। অর্থাৎ এ বিষয়ে বলা চলে জুনিয়ার দের স্বার্থে একটি দিন নির্দিষ্ট করে সিনিয়াররা জুনিয়ার দের যখন ইন্ট্রো (ইন্ট্রোডাকশন) নেয় একেই এক কথায় র্যাগিং নামে চিহ্নিত করা হয়।
তবে কিছু মানুষ থাকে যারা র্যাগিংকে বেছে নেয় নিজেদের প্রতিপত্তিকে ফলাও করার জন্য। যারা স্বার্থপর, যারা নিজেরটা বাদে আর কিছুই বোঝেনা তারা নিজেদের অস্তিত্বকে অন্যদের কাছে রীতিমত ভয়ঙ্কর করে তোলার জন্যই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা ভাবে তারাই যেন প্রভু এবং বাদবাকি সকলের কর্ম তাদের প্রভুত্ব করা এবং এই কারণেই তারা সিনিয়ার হিসেবে নিজেদের একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করার জন্য র্যাগিংকে অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়। যার ফলে অনেক ছাত্র ছাত্রীদের জীবনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়। আবার অনেকে র্যাগিং এর তীব্রতাকে সহ্য করতে না পেরে মানসিক অবসাদ গ্রস্ত হয়ে পরে।
সর্বোপরি দুঃখের বিষয় এটাই যে,যারা এমন মানসিক অবসাদকে অতিক্রম করে,তারা ছাড়া আর কেও তাদের মনের অন্তঃস্থলকে বোঝেনা বরং বলা চলে বোঝার প্রয়োজনবোধ করেনা। বিশেষ করে যারা র্যাগ দেয় তারাও উদাসীন থেকে যায়,তারা কখনোই নিজ কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করেনা বরং তাদের অত্যাচার দিনের পর দিন আরও তীব্র হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের কর্মের ফল বারংবার ভোগ করতে হয় কিছু নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের ।
■ র্যাগিং-সামাজিক ও মানসিক ব্যাধি :
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বলা যেতে পারে যতই উন্নয়ন হোক না কেন মানবিকতা এবং নৈতিকতার দিক থেকে সমাজের পতন ধীরে ধীরে হয়েই চলেছে। নানা ক্ষেত্রে হয়ে চলা নানা ধরণের অত্যাচার তথা অন্যায় এই পতনের জ্বলন্ত ইঙ্গিত স্বরূপ। মানুষ কোথাও যেন নিজের স্বার্থের বাইরে অন্য কোনো কিছুই ভাবতে বা বুঝতে নারাজ। তারা নিজের আখের গুছিয়ে নিতেই বিশেষ আনন্দ অনুভব করে, সে নিজের পারিবারিক জীবনে হোক বা সামাজিক জীবনে। তারা নিজের দিক টা বজায় রাখতে গিয়ে তাদের চারপাশে থাকা মানুষগুলোর ক্ষতি করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেনা।
সময়ের সাথে মানুষের মানসিকতা এই অন্ত্যজ জায়গায় গিয়ে ঠেকছে বলেই সমাজও নিজের রূপ বদল করতে বাধ্য হয়েছে। মানুষই যেকোনো সমাজের মূল কান্ডারি ফলে মানুষের মানসিকতা যেমন হবে সমাজের মানসিকতাও তেমন ভাবেই আত্ম প্রকাশ করবে। প্রত্যেক মানুষই সমাজের বুকে চলতে থাকা, মালিকের কর্মচারীর উপর ব্যাভিচারের খেলা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে এবং তাদের মানসিকতাও সেই ভাবেই গঠিত হতে থাকে। তারা ভাবে যাদের কাছে অর্থবল এবং প্রশাসনিক বল আছে তারাই সর্বেসর্বা। ঠিক এমন মানসিকতাই কাজ করে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও, প্রবল বলে বলিয়ান সিনিয়ার দের প্রতিপত্তিকে প্রত্যেকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেয় এবং তাদের কাছে নিজেদের মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ এ কথা বলাই যায় যে সমাজ থেকে উত্থিত ব্যাধিগ্রস্ত মানসিকতাই সর্বস্তরে কার্যকরী হয় এবং অত্যাচারের দূত স্বরূপ র্যাগিং নামক কালচারের জন্ম হয়।
■ বর্তমান সমাজে র্যাগিং এর প্রভাব :
সত্যি কথা বলতে র্যাগিং আসলে মানুষের এবং সমাজ ব্যবস্থার দোষেই সৃষ্ট। বাস্তব জগতের কুরুচিকর মানসিকতাই অপরাধীদের, অপরাধ করতে উৎসাহ প্রদান করে। শুধুমাত্র উল্লাস ও আনন্দ উপভোগের জন্য কিছু ব্যক্তিবর্গ র্যাগিংকে বেছে নেয় এবং এর জন্য শিকার হতে হয় কোনো নিরপরাধী ছাত্র বা ছাত্রীকে। তাদের রুচি এতটাই নিম্নতর হয় যে অপরকে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করে তারা তৃপ্তি অনুভব করে। মূলত র্যাগিং এর মূল সূত্রধর হল কিছু মানুষের ভুল ভাবনাচিন্তা এবং এই কারণেই এই চিন্তা ভাবনার বদল প্রয়োজন।
সমাজে এই র্যাগিং কথাটি বর্তমানে বিশেষ প্রচলিত। বলাবাহুল্য এই র্যাগিং আধুনিক ছাত্র সমাজের বুকে এক জঘন্যতম কলঙ্ক। এর জন্য অনেক ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের নিরাপদ স্থান হিসেবে গন্য করেনা। ফলত এই র্যাগিং, সমাজের বুকে এমন আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে যে বর্তমানে , সমাজ তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির এক ভয়ঙ্কর ব্যাধি রূপে র্যাগিংকে পরিগণিত করা হচ্ছে।
■ র্যাগিং সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাবলি :
র্যাগিং কোনো হালকা ভাবে নেওয়ার মতন মজার বিষয় নয়। এটি সম্পূর্ণ রূপে এক অপরাধমূলক কাজ। নিম্নে বিগত কয়েক বছর হয়ে চলা র্যাগিং এর কিছু ঘটনা তুলে ধরা হল –
কলকাতা এবং কটক আমাদের সকলেরই চেনা স্থান এই দুই জায়গায় একই দিনে দুই ধরণের র্যাগিং কেস এর খবর মেলে, একদিকে কলকাতায় এক ছাত্রী আহত অবস্থায় বাড়ি ফেরে অন্যদিকে কটকের এক ছাত্রকে মানসিক বিকলন থেকে উদ্ধারের জন্য মনোবিদের সাহায্য নিতে হয়।
২০০৫ এর ১১-ই অক্টোবর-এর ঘটনা এক ছাত্র আত্মহত্যা করে কারণ তাকে নগ্ন করে তার উপর অত্যাচার চালানো হয়। এই বীভৎস অত্যাচারের কথা নিজের অভিভাবককে না বলতে পেরে সে মৃত্যুর পথ বেছে নেয়।
২০০৫ থেকে ২০০৬ এর সমীক্ষা অনুযায়ী র্যাগিং এর জন্য ১১জনের মৃত্যু হয়, ২৩ জন আহত হয়, ১২জন মনবিকলনের শিকার হয়, এছাড়া ৫জনের মতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়তে বাধ্য হয়।
২০০৭ সালের সমাজ রিপোর্টিং অনুযায়ী র্যাগিং এর ৮৯টি কেস ঘটিত হয় যার মধ্যে আবারো ১১জনের মৃত্যু, ৬টি আত্মহত্যার চেষ্টা এবং ১৭টি গুরুতর আঘাত জনিত কেস এর মামলা দৃষ্টিগোচর হয় ।
২০০৮ থেকে ২০০৯ সালে ১৬৪ এর অধিক র্যাগিং সংক্রান্ত কেস হয় এবং এর মধ্যে ১৯জনের মৃত্যু হয়।
২০১০ সালে আরও এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ২২ বছরের এক ছাত্রী র্যাগিং এর শিকার হয়ে সালফিউরিক এসিড খেয়ে আত্মহত্যা করে।
২০১১- ২০১২ সালের প্রেক্ষিতে ৯৬১ এর উপর র্যাগিং কেস রেজিস্টার করা হয়।
উক্ত কেস গুলি সবই আনঅফিসিয়াল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত কারণ সব সঠিক খবর সরাসরি ভাবে উঠে আসেনা এবং সব ঘটনার সত্যতাও সঠিক ভাবে যাচাই করা হয়না । তবে উক্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ কথা স্পষ্ট যে র্যাগিং এর ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে এবং এর অন্ত যেন অনিশ্চিত।
■ র্যাগিং এর প্রতিকার সংক্রান্ত আইন সমূহ :
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের জন্য জাতীয় অ্যান্টি-র্যাগিং হেল্পলাইন গঠন করা হয়। এই হেল্প লাইন এর এক অন্যতম বৈশিষ্ট হলো এর মাধ্যমে যেকোনো মানুষ বেনামে নিজের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারবে। এই হেল্প লাইন এর কাজ শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। ইমেইল এর পাশাপাশি এই হেল্প লাইনএ ২৪ ঘন্টার টোল ফ্রি নম্বর এর মাধ্যমে পৌঁছনো যেতে পারে। এছাড়া ইউজিসি এর গাইড লাইন অনুযায়ী যেকোনো র্যাগিং কেস ঘটলে,যাদের দ্বারা র্যাগিং হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক অর্থাৎ হেল্প লাইন এ অভিযোগ করার পরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ স্টেশনএ অভিযোগকারীকে এফআইআর করতে হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে র্যাগিং এর বিরুদ্ধে নানা রকমের আইন লাগু করা হয়। যেমন ১৯৯৭ সালে তামিলনাড়ু প্রথম রাজ্য হিসেবে র্যাগিং এর বিরুদ্ধে আইন পাশ করে। ১৯৯৯ সালে মহারাষ্ট্র প্রহিবিশন অফ র্যাগিং অ্যাক্ট পাশ করে র্যাগিং নিষিদ্ধ করার জন্য।
তবে ভারতে এমন সব দন্ড বিধির প্রচলন থাকলেও অত্যাচারের মাত্রা কখনো কমে যায়নি। যারা র্যাগিং করে তারা নিজেদের কাজ নিজেদের মতনই করে গেছে। বেশির ভাগ ছাত্র ছাত্রীরাই প্রথম দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে ভীত সংন্ত্রস্ত থাকে এবং ঠিক এই জিনিসটিরই সুযোগ নিয়ে কিছু বিকৃত মনস্ক মানুষেরা তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার করে। যে অত্যাচার নিরীহ কিছু ছাত্র ছাত্রী সহ্য করে নেয়, ভয়ের জন্য তারা মুখ খুলতে পারেনা এই কারণেই যতই আইন হোকনা কেন, সঠিক জায়গায় সঠিক প্রতিবাদ না হওয়ায় আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে র্যাগিং এর এতো বাড় বাড়ন্ত।
■ ছাত্রসমাজ ও র্যাগিং :
যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সমাজেই এই র্যাগিং প্রচলিত। কারণ আলাপচারিতার নামে কিছু ব্যক্তিবর্গ অন্যদের উপর ব্যাভিচার চালাতে বিশেষ পছন্দ করে। তারা অত্যাচার করার জন্য একটিবারও অত্যাচারিত দের কথা ভেবে দেখেনা। তাদের কাছে নিজেদের আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠা করাই হলো মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে ছাত্র সমাজের সর্বত্রই এই র্যাগিং নামক ব্যাধির বাড় বাড়ন্ত বিশেষ চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। সময় সময় এমনও দেখা যাচ্ছে যে অনেক ছাত্র ছাত্রী রীতিমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পাচ্ছে, এমনকি তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও বিশেষ ভাবে চিন্তিত। তবে এই চিন্তা থাকলেও তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে এবং এর পাশাপাশি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তাদের মুখ বন্ধ করে তা সহ্য করতে হচ্ছে। আবার অন্যদিকে অনেক সময় এই ঘটনা গুলি সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলেও আইন ব্যবস্থা, কোর্ট রুম এর মাধ্যমে অপরাধীরা শুধুমাত্র আইন পথে সাজা পাচ্ছে তবে গোঁড়া থেকে কখনোই এই ব্যাধির নিরাময় হচ্ছেনা। একটা ঘটনা ঘটলে, পরে সেই ঘটনার মতনই আরএকরকম কিছু ঘটতে সময় লাগছেনা। আইন ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধুমাত্র অপরাধীকেই সাজা দেওয়া সম্ভব তবে অপরাধ করার মানসিকতাকে নির্মূল করা কখনই সম্ভব নয়। ছাত্র সমাজ থেকে র্যাগিং নামক কলঙ্কটি মুছে ফেলার জন্য অপরাধমূলক মানসিকতার পরিবর্তন বিশেষ প্রয়োজন সাপেক্ষ, এমন হলে ছাত্র সমাজের এই বিশেষ ব্যাধির নিরাময় ঘটতে বাধ্য।
■ উপসংহার :
পরিশেষে একটাই কথা বলা যুক্তি সঙ্গত হবে তা হলো আমাদের সকলেরই মানসিকতা বদলের প্রয়োজন। এই মানসিকতা বদল না হলে সমাজ কখনোই বদলাবেনা। এবং এই সমাজ না বদলালে সমাজ থেকে জাত সন্তানেরা এক একটা আস্ত অপরাধীতে পরিণত হবে। তারা কখনোই অপরকে সম্মান করতে শিখবেনা বরং অন্যের উপর জোড় জুলুম করে তারা মানসিক শান্তি অনুভব করবে। ফলত র্যাগিং নামক ব্যাধিকে নির্মূল করার জন্য সমাজে সঠিক সচেতনতা এবং সঠিক শিক্ষা বিতরণ আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। শুধু প্রশাসনের উপর সবটা ছেড়ে না দিয়ে,সকলে একত্রিত ভাবে ইতিবাচক শিক্ষা বিতরণ করলে র্যাগিংএর মত অপার্থিব অসংগতি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।