১) সোশ্যাল মিডিয়ার জ্বরে আজ ছাত্র জীবনে নেমে এসেছে মহামারী

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩:-   বর্তমান প্রজন্ম আজ সোশ্যাল মিডিয়ার ঘূর্ণনময় বেড়াজালে আসক্ত। একটি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষা স্তরের সমগ্র বিভাগ ও শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা প্রায় এমন একজনও নেই যাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট নেই। IQAC রিপোর্ট অনুযায়ী দৈনিক ২৪ ঘন্টার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াগুলিতে প্রতি ঘন্টায় গড়ে ৯৩৮২ কোটি মানুষ সক্রিয় থাকেন। তার মধ্যে ২২ বছরের নিচে, অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীরা, মূলত ৪০৭০ কোটি ছাত্রছাত্রী সক্রিয় থাকেন। এই রিপোর্ট অনুযায়ী ওই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে যেন বেড়েই চলেছে।

বর্তমানে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, instagram সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমগুলিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি এই সমস্ত মাধ্যমগুলিকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু দুষ্ট লোক তাদের উদ্দেশ্য সাধন করে চলেছে খারাপ মনোভাব নিয়ে অশ্লীল পোস্টের মাধ্যমে। এবং অবুঝ ছাত্র সমাজ এই সমস্ত পোষ্টের মাধ্যমে যেমন অশ্লীল ভিডিও, অশ্লীল লেখা এবং বিভিন্ন প্রকার অশ্লীল ছবির প্রতি আকৃষ্ট ও আসক্ত হয়ে পড়ছে যার ফলে তাদের জীবন হয়ে উঠেছে বিপন্ন।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই সমস্ত পোস্ট এবং অশ্লীল ভিডিও, ও অশ্লীল লেখা এবং অশ্লীল ছবি যা দূষিত করে তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়াকে। এবং এই দূষিত করার মাধ্যমে যেন জ্বর ও ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া গুলি। আর এই জ্বরের কবলেই যেন মহামারী নেমে এসেছে ছাত্র জীবনের বুকে। সমাজে এই মহামারির কবলে পড়ে বস্যতা স্বীকার করে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা এই সোশ্যাল মিডিয়ার আন্তর্জালের বেড়াজালের থেকে বের হয়ে আসতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে সমাজে-সমুদ্রের অতল তলে। তাদের হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করতে না পেরে তারা তাদের হৃদয় কুসুমের কলিকে হারিয়ে ফেলছে বৃন্ত থেকেই যা ঝরে পড়ছে প্রসফুটিত হওয়ার আগেই।

বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর ও লাবণ্যময় করে তোলার জন্য সক্রিয় রয়েছেন। বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি সংস্থা যারা এই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ার এই সমস্ত অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ পোস্টগুলি যে আইডি থেকে করা হচ্ছে সেই সমস্ত আইডিগুলিকে ব্যান করছে। এবং এরা ছাত্র সমাজের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বেশ কয়েকটি সংস্থা বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন  সেমিনারের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবক অভিভাবিকা দের এই সমস্ত  বিষয়গুলি থেকে সচেতন করে তুলেছে। সম্প্রতি ভারতের এমনই এক সংস্থা IPSMC তাদের twitter হ্যান্ডেলে প্রকাশিত করেছেন, “যতদূর যাওয়ার এবং যা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এবং যা কিছু করলে ছাত্রসমাজকে এই কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি থেকে বের করে আনা যায় তার যথাসাধ্য চেষ্টা আমরা করব ।” এছাড়াও আমেরিকার একটি কুরুচিপূর্ণ সোশ্যাল পোস্ট প্রতিরোধকারী সংস্থা BRCTC তাদের টুইটার হ্যান্ডেলে টুইট করে জানিয়েছেন, “we are always with students to reject their additions and attractions of porn social post like video audio image and writing & improving themselves to continuing their studies better.”

২) র‍্যাগিংয়ের বিভীষিকায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিল পনের বছরের স্কুল পড়ুয়া, ঘটনাকে ঘিরে বিক্ষোভ, প্রশ্নের মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব সংবাদদাতা,দুবড়াকোন,17 সেপ্টেম্বর 2023:- র‍্যাগিংয়ের বিভীষিকায় পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিল মাত্র ১৫ বছরের তরুণ যুবক। দুবড়াকোন মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়া এক বালক সজল মর্দ্দূন্যা, যাঁর বাড়ি ছিল বাঁকুড়া জেলার পাঁচমুড়া গ্রামে, সে দুবড়াকোন মডেল স্কুলের সংহতি বালক হস্টেলে থাকত, আগামী 15 সেপ্টেম্বর শনিবার রাত্রে স্কুলের হস্টেলের তিনতলার ছাত থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শোরগোল পড়ে যায় সমগ্র স্কুলের স্থানীয় এলাকা জুড়ে।

স্কুলের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে সজল ক্লাসের মধ্যে সবথেকে মেধাবী ছাত্র ছিল। এছাড়াও সজলের অভিভাবকরা অভিযোগ দায়ের করেছেন যে ওই স্কুলেরই একদল হস্টেলের ছেলে নির্মমভাবে অত্যাচার ও নিপীড়ন করে মেরেছে সজলকে। যদিও ঘটনার তদন্ত এখনও সম্পূর্ণ করতে পারেনি প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সজলের মায়ের বুক ফাটা কান্নায় সমগ্র স্কুল ক্যাম্পাস নিস্তব্ধ ও শোকাহত।

সজলের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথমে সজলকে মারধর করা হয় এবং তারপর তার গায়ে বিড়ি বা সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকাও দেওয়া হয়, তারপর তাকে ছাত্র থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, যার ফলে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বক্তব্য যে তারা এই ব্যাপার সম্পর্কে কিছুই জানে না। 16ই সেপ্টেম্বর সকালবেলা এক ছাত্র মর্নিং ওয়াকের জন্য গ্রাউন্ডে গেলে সেখানেই সে পড়ে থাকতে দেখে সজলের মৃতদেহ।

সজলের বাবার বক্তব্য,” সজল মাঝে মাঝেই আমাকে ফোন করে বলত এখানে থাকতে আমার খুবই অসুবিধে, কিন্তু আমি সরকারী স্কুলের মতো এত সুন্দর সূযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাইনি।” সজলের মায়ের বক্তব্য, ” সজল আমাকে বলেছিল এখানে একটা গ্রুপ আছে যারা র‍্যাগিং করে, কিন্তু আমি ওদের কথামতো থাকি বলে কোনো অসুবিধে হয়না। আর এখন কী হয়ে গেল।” স্থানীয় এলাকার সম্মানীয় ব্যাক্তি নিত্যানন্দ মুখার্জী প্রশ্ন খাড়া করেছেন,” এমন একটা কাণ্ড ঘটে গেল, কেউ খুনাক্ষরে টেরটিও পেলনা? স্কুল কর্তৃপক্ষের লোকেরাই বা কী করছিল?” স্কুল কর্তৃপক্ষের সুপারিনটেন্ডেন্ট জানান,” ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেকার ব্যাপার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। এমনকি এমন অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে কোনোদিন কোনো ছাত্র-ছাত্রী অভিযোগও করেনি।”

কলমে- অভিজিত ঘোষ ( বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় )