১)  বন্যার জেরে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রান তহবিল

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩: বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই দ্বারকেশ্বর নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষজনদের মাথায় হাত।  মাত্র পাঁচ দিনের প্রবল বর্ষণে নিস্তেজ দ্বারকেশ্বর যেন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। আর অজগরের মতো ফুলেঁপে ওঠা দ্বারকেশ্বর তার তাণ্ডব লীলা চালিয়ে যাচ্ছে তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে। বিধ্বংসী দ্বারকেশ্বর যেন ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। এবং তার এই বিধ্বংসী লীলা কার্যকর করে অট্টহাস্য হেসে চলেছে এবং সাধারণ মানুষ তার উচ্ছাসে বিপর্যস্ত আর যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয়ে উঠেছে।

আগামী ১৮ ই সেপ্টেম্বর ২০২৩, দক্ষিণ বঙ্গ নিম্নচাপের কারণে বাঁকুড়া সহ আরো পাঁচটি জেলায় শুরু হয় প্রবল বর্ষণ। এই  প্রবল  বর্ষণের প্রকোপে পড়েই বাঁকুড়ার ব্লক ২ এবং বাঁকুড়ার পশ্চিম মিউনিসিপালিটি অন্তর্গত এলাকা এক্তেশ্বর, পাতাকলা বেড়ামঠের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া দারকেশ্বর নদীটি বিধ্বংসী অবস্থায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এবং এই দ্বারকেশ্বরের নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোও পড়ে প্রবল বন্যার প্রকোপে।

এই বন্যার ত্রান তহবিলে এগিয়ে আসেন বাঁকুড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অধিকারিকগন। তারা এই সমস্ত এলাকার মানুষজনকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বাঁকুড়া মিশন গার্লস স্কুলে আশ্রয়দান করেছেন। এবং প্রত্যেক পরিবারকে ত্রান তহবিল স্বরূপ একটি করে প্যাকেট দিয়েছেন। এই প্যাকেট এর মধ্যে- দশ কেজি চাল, দু কেজি মশুর, এবং 5 কেজি চিড়ে ও এক কেজি গুড় দেওয়া হয়। এছাড়াও বাঁকুড়া শহর নিবাসী চন্ডীচরণ মুখার্জি মহাশয় নিজের ফান্ড থেকে প্রত্যেক পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, নুন ও চিড়ে-গুড় সাহায্য করেছেন।

  চণ্ডীচরণ মুখার্জি বলেছেন, “আমরা মানুষ, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াবো না তো কাদের পাশে থাকবো?”  তার এই বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাঁকুড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আধিকারিক কর্তাগণ। বন্যা বিপর্যস্ত এলাকাযর বাসিন্দা গুইরাম ভুঁই জানিয়েছেন, “এর আগেও অনেক বৃষ্টি নিম্ন চাপ হয়েছে, কিন্তু এবারের পাঁচ দিনের নিম্নচাপের বৃষ্টি এতটাই প্রবল আর বিধ্বংসী যে আমাদের সর্বহারা করে ছেড়েছে।”

২) শব্দবাজির দৌরাত্ম্যে সুস্থ সমাজে অসুস্থতার প্রবেশ এবং মৃত এক,
নিস্তব্ধ প্রশাসন: আইনের দিকে বুড়ো আঙ্গুল

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া, ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩:-       চারিদিক যখন বিশ্বকর্মা পূজার আনন্দে মশগুল, সেই সময় হঠাৎ বাজির শব্দে চমকে ওঠেন এলাকাবাসী। পূজার মন্ডপ সমেত সমস্ত দর্শনার্থী ও সেখানে উপস্থিত এলাকাবাসী যেন স্তব্ধ হয়ে যায় এই বাজির আওয়াজে। খানিকক্ষণ বাদেই হৈ হৈ রব ওঠে এবং সকলে ছুটতে থাকেন ওই এলাকারই প্রবীণ ভদ্রলোক শ্রী গোরাচাঁদ রানার বাড়ির দিকে। ঘটনা খোলসা হলে শোনা যায়, গোরাচাঁদ  রানা বাজির শব্দে হার্ট অ্যাটাক করেছেন।

বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত পুনিশোল অঞ্চলের দুবড়াকোন  গ্রামে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সন্ধ্যাবেলা এক ভয়াবহ বিভীষিকার শব্দে প্রাণ যায় ওই গ্রামেরই এক প্রবীণ ব্যক্তি শ্রী  গোরাচাঁদ রানার। হাইকোর্টের order অনুসারে স্থানীয় পুলিশ থানার ওসি শ্রী রঘুনাথ শর্মা নিজেই ওই গ্রামে এসে কঠোরভাবে শব্দবাজি ফাটানোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু লোকাল থানার ওসি এর নিষেধাজ্ঞার প্রতি আলোকপাত না করে পড়ানো হয় শব্দবাজি।

এই এলাকায় শান্ত পরিবেশে অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার সন্ধ্যে সাতটায় শব্দবাজিতে বাঁকুড়া জেলার দুবড়াকোন গ্রাম নিবাসী শ্রী গোরাচাঁদ রানার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। স্থানীয় লোকেরা প্রশ্ন খাড়া করেছে,- “এত কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা সত্ত্বেও শব্দবাজি পড়ালো কিভাবে? কেইবা এই অকৃত কর্মটা করলো? এলার্ট ও গার্ডে থাকা পুলিশ কর্মীরাই বা সেই সময় কি করছিল?”

স্থানীয় ব্যক্তি শ্রী নিত্যানন্দ  বিদ বলেন, “আইনের দিকে বুড়ো আঙ্গুল তুলে শব্দবাজি ফাটিয়েছে। আজ প্রশাসন নিস্তব্ধ।  মুখে কুলুপ এঁটেছে আইনি কর্মীরা।” ওই এলাকা নিবাসী গোপাল মর্দ্দূন্যা বলেন, “গার্ডে থাকা পুলিশেরা স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকবেন নাকি প্রশাসনিক কাজ করবেন?” মৃত গোরাচাঁদ রানার স্ত্রী বলেন, “গোরাচাঁদের আগে থেকেই হাটের সমস্যা ছিল, কিন্তু বুকে পেসমেকার বসানোর পর তিনি প্রায় সুস্থই ছিলেন। হঠাৎ কি হয়ে গেল?”

স্থানীয় চিকিৎসক শ্রী নিত্যানন্দ মুখার্জি বলেন, “আগে থেকেই সমস্যা থাকার কারণে গোরাচাঁদবাবু শব্দবাজির আওয়াজ সহ্য না করতে পেরেই প্রাণ ত্যাগ করেছেন। এবং এই প্রিয় সমাজকে ছেড়ে পরলোকে গমন করেছেন।” পুলিশ আইনগতভাবে অনুসন্ধান করে চলেছেন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শব্দবাজি ফাটালো কোথায়? কে-ই-বা এই বাজিটা ফাটালো? কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা উত্তর খুঁজতে ব্যর্থ।

কলমে:- অভিজিৎ ঘোষ ( বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় )