গণমাধ্যম রচনা
■ ভূমিকা :
গণমাধ্যম সমাজ জীবনের দর্পন স্বরূপ। এটি এখন আমাদের জীবনের সমাজের একটি অংশ। বর্তমান সময়ে গণমাধ্যম এর প্রভাব নিঃসন্দেহে সর্বজন স্বীকৃত। যে পৃথিবীতে আমরা এখন বাস করছি তার এক একটা দিনের ইতিহাস হলো সেই দিনে গণমাধ্যমগুলোর বিষয়বস্তু। আমাদের চলমান জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রতিটি কাজ ছোট ছোট ঘটনাগুলোই প্রতিফলিত হয় গণমাধ্যমে। তাই জীবন ও সমাজের সাথে গণমাধ্যম ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। গণমাধ্যম একদিকে যেমন সমাজের চলমান চিত্র তুলে ধরছে তেমনি অন্যদিকে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে ভাঙছে গড়ছে প্রভাবিত করছে। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, আজকের আধুনিক-বিশ্ব মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত। জাতির উন্নতি ও প্রগতির অন্যতম বাহন শিক্ষা। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন এবংআলােকিত মানুষ তৈরি করাই শিক্ষার লক্ষ্য।
মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ব আজ মানুষের বাড়ির আঙিনায় উপস্থিত হয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত বিশ্বের যে কোনো জায়গার খবর ও চিত্র আজ আমাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে যে কোনো বিষয়ে শিক্ষালাভ সহজ ও সুগম হয়েছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো উন্নতশীল দেশের গণজাগরণের ক্ষেত্রে এই গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম দূরকে করেছে নিকট, শত্রুকে করেছে মিত্র, জানিয়েছে কত অজানাকে, তেমনি আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নেতিবাচক দিকও শিক্ষাবিস্তারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ডেকে আনছে। ফলে জনজীবনে তার প্রভাব পড়ছে।শিক্ষার উপযােগিতা বিবেচনায় শিক্ষার বিস্তারে বিষয়টিও বর্তমানে সময়ের দাবী রাখে। আর শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম।
■ গণমাধ্যম কী :
সাধারণভাবেই জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমকে গণমাধ্যম বলা হয়। গণমাধ্যমকে জনসংযোগের উপায় হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রচারিত গণমাধ্যমের মধ্যে জনপ্রিয় হল রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং চলচ্চিত্র। এছাড়া মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার-ইন্টারনেটও গৌণ গণমাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিপুল তথ্যের এক অবিশ্বাস্য ভাণ্ডার। এ গণমাধ্যমটিরও দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যমকে তাই বলা হয় জাতির বিবেক সমাজের দর্পণ। এসব গণমাধ্যম ব্যবহার করে অনেক দূরের মানুষের কাছেও খুব সহজেই বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়। অবশ্য গণমাধ্যমের সহায়তায় জনগণের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ সংযোগ সম্ভব নয়। তাই তাৎক্ষণিক মতামতও পাওয়া যায় না। জনগণের ফিডব্যাক পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তবে বিশেষ ব্যবস্থাধীন ক্ষেত্রবিশেষে তাৎক্ষণিক মতামত সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যায়। গণমাধ্যম জনগণের বিনোদন মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। গণমাধ্যমে কোনো দেশ, সমাজ, গোষ্ঠীর শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে। ফলে এক দেশের সংস্কৃতি অন্য দেশে পৌঁছে যায়।
■ আধুনিক গণমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভূমিকা :
প্রকাশ ও প্রচারের ধরণভেদে গণমাধ্যম তিন ধরণের হয়ে থাকে –
প্রথমত মুদ্রণ মাধ্যম যেমন সংবাদপত্র, বই, ম্যাগাজিন।
দ্বিতীয়ত ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম যেমন- রেডিও ,টিভি , চলচ্চিত্র।
তৃতীয়ত নিউ মিডিয়া বা নতুন মাধ্যম । এটি গণমাধ্যম সংক্রান্ত নতুন ধারণা। তথ্য প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য সাফল্যের ফলে সৃষ্টি হয়েছে সক্রিয় ও কার্যকরী বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম। যেমন _ ফেসবুক ,টুইটার ,ইউটিউব ইত্যাদি। এগুলোর বৈশিষ্ট্য ও ভূমিকা অনেকটা অন্যান্য গণমাধ্যমের মতোই। তাই এগুলোকে বলা হচ্ছে নিউ মিডিয়া। এর মধ্যে অনলাইন সংবাদপত্রও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের জীবনে গণমাধ্যমের ব্যবহার এখন অবধারিত একটি বিষয় হয়ে উঠেছে।
বর্তমান যুগে শিক্ষা বিস্তারে বিশিষ্ট কয়েকটি গণমাধ্যম আমাদের বিশেষ সহায়ক হতে পারে। এসব গণমাধ্যমগুলো হচ্ছে- সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমা এ তিনটি মাধ্যম দ্বারা সম্পূর্ণ নিরক্ষররাও উপকৃত হতে সক্ষম। তবে চলচ্চিত্রে দর্শকরা নিজেদের পছন্দ বা অভিরুচি অনুযায়ী ছবি দেখে থাকে। রেডিওতে শ্রোতারা শুনে শিখতে পারে, জানতে পারে অনেক নতুন নতুন বিষয়। বিষয় নির্ধারণের সুযোগ রেডিওর ক্ষেত্রে আছে। তাই বেশিরভাগ প্রোগ্রাম নির্ধারিত থাকে বলে শ্রোতাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধেও বহু বিষয় শুনতে হয়। অন্যদিকে, টেলিভিশনের ক্ষেত্রে শোনার সঙ্গে সঙ্গে দেখারও বিরাট ভূমিকা থাকে বলে শিক্ষায় এই গণমাধ্যমটি আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এককথায়, সংবাদপত্রের শিক্ষা পড়ে পড়ে, রেডিও শুনে শুনে, আর টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের বেলায় তা দেখে শুনে। সম্প্রতি ক্যাসেট, রেডিও প্লেয়ার ইত্যাদিও শিক্ষা-বিস্তারে গণমাধ্যম হিসেবে বিশেষ কাজ করছে।
■ গণমাধ্যম হিসেবে ও জনমত গঠনে প্রিন্টমিডিয়া বা সংবাদপত্রের ভূমিকা :
গণশিক্ষার অন্যতম বলিষ্ঠ হাতিয়ার হলো সংবাদপত্র। সংবাদপত্র প্রতিনিয়ত অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে জনগণের কাছে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য উপস্থাপন করে।
সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় থাকে চলমান বিশ্বের চলতি ঘটনার যাবতীয় তথ্য।লেখাপড়াকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য পড়ালেখার পাতা, ক্যাম্পাস বিজ্ঞানের পাতা, প্রভৃতি শিরোনামে সংবাদপত্রগুলোতে আলাদা পাতা প্রকাশিত হয়। বর্তমানে সংবাদপত্রের সংখ্যাও অনেক বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বেছে নিতে পারে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের কৃতিত্বপূর্ণ খবর ছবিসহ ছাপা হয়। এ ধরনের ছবি, সাক্ষাৎকার পৌঁছে যায় সারা দেশে। এ থেকে উৎসাহিত হয় অন্য শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অনেক দরিদ্র মেধাবীর জীবনসংগ্রাম এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের কাহিনি গ্রাম ও শহরের পিছিয়ে পড়া দারিদ্রপীড়িত সন্তান ও তাদের বাবা মাকে উৎসাহিত করে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ বিদেশের বিভিন্ন তথ্য ও ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া যায় সংবাদপত্রের মাধ্যমে। তবে সংবাদপত্রের মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তার করতে হলে জনগণকে ব্যাপক ভিত্তিতে ন্যূনতম অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে।
■ শিক্ষাবিস্তারে রেডিওর ভূমিকা :
শিক্ষাবিস্তারে রেডিও অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মাধ্যম। প্রত্যন্ত গ্রামবাংলার অঞ্চলেও রেডিও সহজলভ্য। দামে সস্তা হওয়ায় বিনোদনের এ মাধ্যমটি অনেকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। সমুদ্র উপকূলে ইন্টারনেট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকায় সারা দুনিয়ার বার্তা এনে দেয় এই রেডিও। আবহাওয়া সম্পর্কে সচেতন করে, গান – নাটক শোনায়।
বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষার প্রসারে এ মাধ্যমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রেডিওর মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব প্রচার করা হলে অনেক নিরক্ষর লোকও এতে উৎসাহিত হয়। শিক্ষামূলক শিশুতোষ অনুষ্ঠান আকর্ষণীয়ভাবে সম্প্রচার করলে শিশুরাও তাদের দৈনন্দিন পাঠকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করে। রেডিওর মাধ্যমে শিক্ষা আন্দোলনে ব্যাপকগণজাগরণ গড়ে তোলা সম্ভব।
■ শিক্ষা বিস্তারে টেলিভিশনের ভূমিকা :
টেলিভিশন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় বিনোদন মাধ্যম। শোনার পাশাপাশি দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে বলে তা আরও বাস্তবসম্মত। কাহিনির মাধ্যমে দৃশ্যদ্রব্য বিষয় উপস্থাপন টেলিভিশনের একটি ইতিবাচকদিক। শিক্ষার প্রসারে যা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। এটি বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। বিশ্বের সর্বত্রই আজ বেতারের মতো টেলিভিশনের ছড়াছড়ি। গণশিক্ষা বিস্তারে এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত এ শক্তির প্রভাব অপ্রতিরোধ্য। বেতারের সকল ঘটনাপ্রবাহ ও শিক্ষণীয় পর্ব অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে সচিত্র তুলে ধরতে পারে টেলিভিশন। শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারের মাধ্যমে জাতি গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা ও বিস্ময়কর অবদান রাখতে পারে টেলিভিশন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বিষয়ের পাশাপাশি গণশিক্ষা কর্মসূচি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মতো বাস্তব চিত্রে উপস্থাপন করতে পারে টেলিভিশন। ঘরোয়া পরিবেশে চলচ্চিত্রের আনন্দ উপভোগের সুযোগ এনে দেয় টেলিভিশন।
■ শিক্ষা-বিস্তারে চলচ্চিত্রের ভূমিকা :
সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিক্ষা-বিস্তার এক ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নিয়ে থাকে। কোনদিন নিজের চোখে দেখা সম্ভব নয় এমন সব দৃশ্য আমরা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেখে থাকি। এ থেকে আমরা যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি তার মূল্য অনেক বেশি। আবার নানা জায়গায় ভ্রমণ করে যে অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে, শ্রম ও অর্থের অপচয় হত চলচ্চিত্রের সাহায্যে অতি সহজেই তা রোধ সম্ভব হয়ে থাকে। আমাদের জীবন ছোট, কিন্তু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বিশাল। চলচ্চিত্র অল্প সময়ের মধ্যে এ বিশাল ক্ষেত্রকে জানবার সুযোগ করে দেয়। আমরা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আরো নানাবিধ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে থাকি। তাই এ গণমাধ্যম শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে।
■ শিক্ষা বিস্তারে ইন্টারনেটের ভূমিকা:
বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্টারনেটে সার্চ করলেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের যেকোনো বিষয় সম্পর্কে জানা যায় মুহূর্তের মধ্যেই। কোনো অজানা বিষয় লিখে সার্চ করলেই জানা যায় সেই বিষয়ের সব কিছু। আজকাল অনলাইনে ক্লাসরুম ভিডিও আকারে প্রকাশ করে দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরাও সেই ক্লাসে অংশগ্রহণ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ইউটিউব থেকে যেকোনো বিষয়ে শিক্ষা, সংবাদ বা তথ্যচিত্র ভিডিও আকারে দেখা যায়।
■ দেশাত্মবোধের জাগরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা :
শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জনগণকে জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত করা। গণমাধ্যমগুলো শিক্ষার এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রসমূহ দেশের জনগণকে স্বাধীনতা ও দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত করে। দেশদ্রোহী বিভিন্ন শক্তি ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম। পাশাপাশি এটা দেশের জন্য কল্যাণকর বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্ব তুলে ধরে।
■ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শিক্ষায় গনমাধ্যমের ভূমিকা :
ধর্ম ও সংস্কৃতি ছাড়া কোনো জাতি বেঁচে থাকতে পারে না। শিক্ষার অন্যতম দিক হলো ধর্ম ও সংস্কৃতির চর্চা। ধর্ম ও সংস্কৃতির বিস্তারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম। গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন দেশ ও জাতির আচার- আচরণ, কৃষি সভ্যতা, ধর্ম-সংস্কৃতি ইত্যাদির সচিত্র বিবরণ তুলে ধরে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সুস্থ বিকাশের মাধ্যমে আদর্শ জাতি গঠন সম্ভব। তাই গণমাধ্যমগুলো এ ব্যাপারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। পক্ষান্তরে, গনমাধ্যমগুলো যদি ধর্মের নামে অধর্ম, অনাচার ও সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটায় তাহলে দেশ ও জাতি এক নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়।
■ সামাজিক ও রাজনৈতিক জ্ঞানে গনমাধ্যমের ভূমিকা
যে কোনো দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন শিক্ষার অপরিহার্য দিক। বিশ্বের কোন রাষ্ট্র কিভাবে চলছে, কোন রাজনৈতিক শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, কোন দেশ বা জাতির সামাজিকতা কেমন ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া প্রতিটি সচেতন নাগরিকের জন্য অবশ্য কর্তব্য। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে রাজনৈতিক শক্তি কর্তৃক।গণমাধ্যমগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির সামাজিক রাজনৈতিকজ্ঞান বিস্তারে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
■ উপসংহার:
গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের রয়েছে প্রবল আকর্ষণ। গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য আমাদের জ্ঞানের এক বিরাট উৎস। গণমাধ্যম আছে বলেই পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে আমরা তা মুহূর্তেই জানতে পারছি। বহু দূরে ঘটেও সব কিছুই যেন ঘটছে আমাদের চোখের সামনে। তা সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র গণমাধ্যমের কল্যাণেই।
তবে গণশিক্ষার সবচেয়ে বড় ভূমিকা গণমাধ্যম । উন্নত বিশ্বে জনমত গঠন, সমাজ পরিশোধন ও মুক্ত চিন্তার বিকাশ সাধনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ অবদান পালন করে। বাংলাদেশে বেতার- টেলিভিশনের অনুষ্ঠান এখনো যথার্থ হয়ে ওঠেনি। চলচ্চিত্র নগ্নতা ও অম্লীলতা দোষে দুষ্ট, সংবাদপত্রগুলো মোটামুটি গণমুখী।
কিন্তু এই গণমাধ্যম আমাদের জন্য যেমন ইতিবাচক তেমনি নেতিবাচক। তাই মানুষ হিসেবে নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণমাধ্যমের কোন দিকগুলো দ্বারা আমরা প্রভাবিত হব। তাই জাতি গঠনে ও বিজ্ঞান-বিদ্যার অগ্রগতির সাথে সাথে শিক্ষা-বিস্তারে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা ক্রমেই বিশেষ অর্থবহ হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে শিক্ষাসহ জাতীয় অগ্রগতিতে ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে গণমাধ্যম আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।