গণদেবতা উপন্যাসে জাতীয় রাজনীতি

পূজা দাস , এম.‌এ (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)


       তিরিশের কাল হল বাঙালি মধ্যবিত্তের উপলব্ধির কাল। এই সময় মধ্যবিত্তের জীবনের ক্ষণস্থায়ী অবস্থান ঘটেছে, গ্রামীণ মধ্যবিত্ত জীবন-রঙ্গমঞ্চে যবনিকা দুলছে, নতুন পালা নতুন করে বাঁধতে বসেছে। ঠিক সেই সময় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আবির্ভাব হয় ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের, এঁরা হলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই তিন বন্দ্যোপাধ্যায় তিন রকম ভাবে বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে অস্তিত্বের ভাষ্য ও বেঁচে থাকার মানে খুঁজে দেবার চেষ্টা করেছেন। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম ঔপন্যাসিক হলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তারাশঙ্কর যখন উপন্যাস লিখতে আরম্ভ করলেন তখন শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে এবং প্রভাবও ছিল সুবিস্তৃত। লেখকদের পক্ষে তাকে এড়িয়ে যাওয়া ছিল দুরুহ কাজ। কিন্তু তারাশঙ্কর সবকিছু পেছনে ফেলে হেঁটেছিলেন অন্য পথে। তাই শরৎচন্দ্রের অনুকরণকারী উপেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, নরেশ সেনগুপ্ত ও জগদীশ গুপ্ত প্রমুখ অনেকেরই প্রভাব ক্ষীণ হয়ে গেলেও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এখন‌ও উজ্জ্বল। কেননা তিনি তার সমকালকে শুধু লিপিবদ্ধ করেননি, তার মধ‍্যে প্রাণ সঞ্চার করতে পেরেছিলেন। কখনো রাঢ়ের আঞ্চলিকতাকে,  কখনো বা সমাজের পরিবর্তনকে কখনো বা সমকালীন রাজনীতিকে তুলে ধরে। আলোচ‍্য গণদেবতা উপন্যাসের মাধ্যমে তারাশঙ্কর বিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে পাঠকের সম্মুখে তুলে ধরেছেন।

তারাশঙ্করের উপন্যাসে রাজনীতির প্রভাব: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির সংস্পর্শ যে স্বদেশীভাবনা, ঐতিহ্য ও আদর্শের প্রতি আনুগত্য ফুটে উঠেছিল, তা সম্পর্কে অধ্যাপক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেছেন –

“রুদ্রপ্রকৃতির নিষ্ঠুরতা ও অস্তগামী অভিজাত্যের নৈরাজ্যে তারাশঙ্করের শিল্পী চেতনা প্রথম পর্যায়ে দ্বিমুখী। বাজে পোড়া তালগাছ কিংবা পত্রহীন কন্টকময় বাবলা গাছের মতো কতগুলি মানুষ তাঁর সহানুভূতি আকর্ষণ করেছে আর একদিকে মৃত্যু যাত্রী অতীত তাঁর মমতায় অভিসেচন লাভ করেছে। জীবন ও জগত সম্পর্কে তাঁর কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য ফুটে ওঠেনি। কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যে পরিচয় তাঁর ঘটেছিল- তার ফলে তাঁর মনে এক আদর্শ রূপ নিতে আরম্ভ করেছে।”

তাঁর যেসব উপন্যাসের রাজনৈতিক প্রভাব ফুটে উঠেছে তার মধ্যে প্রথমেই আসে ‘ধাত্রী দেবতা’ (১৯৩৯) এই উপন্যাসে তারাশঙ্কর রাজনীতির ক্ষেত্রে গান্ধী প্রবর্তিত রীতিকে অনুসরণ করেছেন।  ধাত্রী দেবতায় জমিদারের ছেলে শিবনাথের শৈশব ও থেকে কৈশোর ও যৌবন পর্যন্ত বাল্যকালের যে দুঃসাহসিকতা তাকে যুদ্ধ অভিনয় ও নেকড়ের বাচ্চা ধরতে উত্তেজিত করেছিল, কৈশোরের সেই গুণ‌ই তাকে মহামারীর প্রতিষেধক প্রচেষ্টায় ও যৌবনের সন্ত্রাসবাদ ও অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা দিয়েছিল। নিম্নবর্গের ডোম বধুকে কলেরার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। ডোম্ব বধুটি নিম্নবর্গীয় ও নিম্নবৃত্তিয় অধিকারিণী হলেও তার ধর্মভয় আছে। তাই সেই ডোমবধুটি যখন বলে, “আমরা ছোটলোক বলেকি আমাদের ধর্ম ভয় নাই বাবু ?” তখন শিবনাথ সেই ডোমবধূটির দিকে নিষ্পালক চোখে চেয়ে থাকে। তারাশঙ্করের ধাত্রীদেবতা উপন্যাসে তার স্বকীয় দেশ চেতনা ও শিবনাথ চরিত্রের মাধ্যমে নিজের আত্মপ্রকাশ করেছেন।
এরপরে আসি ‘কালিন্দী’ উপন্যাসে সাঁওতাল জীবনের চিত্র নিখুঁত, স্বচ্ছ, স্পষ্ট ও জীবন্ত রূপে উপস্থাপিত হয়েছে।  এখানে জমিদার সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। ধনী উচ্চবিত্তের, উচ্চ বর্গের মানুষেরা, এমনকি সাধারণ উচ্চবর্গের মানুষেরাও নিজেদের প্রয়োজনে সাঁওতাল জাতিকে কিভাবে কাজে লাগাচ্ছে এবং সমাজে তাদের স্থান কোথায় নামিয়েছে, এককথায়, সাঁওতাল জাতির ভাগ্য বঞ্চিত জীবনের দুঃখময় করুন কাহিনী এই উপন্যাসে বর্ণিত। উপন্যাসের চরিত্রের গৌরব ঘটনার প্রাধান্য গৌণ হয়েছে। মহেন্দ্র ও অহীন্দ্র উপন্যাসের কাহিনীর ক্ষুরধার স্রোতে বুদবুদের ন্যায় বিলীন হয়ে গেছে। উপন্যাসের কাহিনীতে ফুটে উঠেছে সাঁওতাল গোষ্ঠীর অনেক কষ্টে নতুন করে চাষবাস ও বসতি স্থাপন করার অক্লান্ত পরিশ্রম ও বাসনা চিনির কারখানার মালিক বিমল বাবুর  মত ধনতন্ত্রের চাপে বিনষ্ট হয়ে যায়। ধণতন্ত্রের অভ্যুত্থানে শিকারি ও কৃষিজীবী সাঁওতালরা শেষ হয়ে যায়, নতুবা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, অথবা শ্রমিকে পরিণত হয়। এক কথায় নিম্নবর্গের আদিবাসী সাঁওতালদের জীবন বিপন্ন হয়, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সংকটময় হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় নিরুপায় নিম্নবর্গের সাঁওতালদের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে।
  ‘পঞ্চগ্রাম’ (১৯৪৪) উপন্যাসটি গণদেবতার শেষাংশ – এখানে উচ্চ বর্গের জমিদারের অতিরিক্ত খাজনার বিরুদ্ধে নিম্নবর্গের প্রজারা বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী হয়েছে। তারা জমায়েত হয়ে দলবদ্ধ হতে শিখেছে।গণদেবতায় যেমন পাওয়া যায় হিন্দুভাবাপণ্য সমাজ, অপরদিকে পঞ্চগ্রাম উপন্যাসে নিম্নবর্গের মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন উপন্যাসিক। মুসলমান চাষীদের দৃঢ়তর ইচ্ছাশক্তি ও ঐক্যবোধ  জমিদারের খাজনা বৃদ্ধির- প্রস্তাবের প্রতিরোধে ব্যুহবদ্ধ হয়ে এমন একটা মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যার সঙ্গে তুলনায় গণদেবতার হিন্দুদের তুচ্ছসামাজিক আত্মকলহও ছেলেখেলা বলে মনে হয়। ইসরাদের মতো নেতার, দৌলত শেখের মতো ধনাঢ্য জমিদার হয়ে আসা মানুষের ভূমিকার পাশাপাশি রহম শেখ- ষষ্ঠী কিংকরবাবুদের দ্বন্দ্ব সংঘাত ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। এছাড়াও তারাশঙ্করের অন্যান্য ‌উপন্যাস যেমন ‘চৈতালী ঘুর্ণী’, ‘মন্বন্তর’, উপন্যাসে রাজনৈতিক পটভূমি দেখা যায়।

গণদেবতা রচনাকালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি :

“রাজনৈতিক বন্ধন মুক্তির আকাঙ্ক্ষার যে দুর্নিবার আবেগ আমি জাতীয় জীবনের স্তরে স্তরে বিভিন্ন সঙ্গীতে হতে প্রকাশিত হতে দেখেছিলাম, তার মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছিলাম, মানুষের সনাতন জীবনমুক্তির সাধনা।  জীবন মুক্তি বলতে ভয়ের বন্ধন, ক্ষুদ্রতার গণ্ডি, অভাবের পীড়ন, জীবনে জোর করে চাপানো সকল প্রকার প্রভাবের বিরুদ্ধে মানুষ সংগ্রাম করে চলেছে। সেই তার অভিযান।”

(তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়)

তারাশঙ্কর জন্মেছিলেন দুইশতাব্দীর মিলন মিলনস্থলে- সে সময় এক শতাব্দী বিদায় নিচ্ছে, আর এক শতাব্দী এসে দোড় গড়ায় কড়া নাড়ছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, উপমহাদেশে ব্রিটিশদের অরাজকতার- মতো অস্থির সময়ে তাঁর শিশু মন বেড়ে ওঠে। ফলত তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সেই রাজনীতির অভিজ্ঞতায় তিনি গণদেবতার মত অমর সৃষ্টি তৈরি করেন। গণদেবতার কাহিনী সময়কাল ধরা যায়,  ১৯২৬ সাল থেকে শুরু করে এর বিস্তৃতি প্রায় এক দশক পর্যন্ত। সেইসময় একটা অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল জগত, সংসার ও সমাজে। সেই আগুনের তাপ থেকে রেহাই পায়নি শহর বা শহরের প্রতিটি মানুষ, এমনকি গ্রামে পর্যন্ত তার আগুনের ছিটে ছড়িয়ে পড়েছিল।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির ফলে অভাব ক্ষুধা চারপাশ থেকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরেছিল মানুষকে তৎকালীন সময়ের পরিস্থিতি এমন ছিল যে গরিব হচ্ছে আর‌ও গরিব, আর যে ধনী সে আরো ধনী হচ্ছে- এর থেকে উদ্ভব হচ্ছিল অনেক ভুঁইফোঁর ধ্বনি সম্প্রদায়ের।
যুদ্ধের পরবর্তী যে অস্থিরতা সেখান থেকে যেসব গ্রামগঞ্জ মুক্ত নয় – তার মধ্যে উঠে এসেছে শিবকালীপুর। গ্রাম বাংলার নীরব নিভৃত এক গ্রাম ছিল শিবকালীপুর। গ্রামের এই শান্তি টালমাটাল হয়ে ওঠে যুগের ধাক্কায় – সেই নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবন নতুন আর পুরাতনের দ্বন্দ্বে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে ওঠে। কারো মন পুরাতন সংস্কার ধরে রাখতে চায়, আর কেউ নতুনের টানে পুরাতনকে বিসর্জন দিয়ে সামনের দিকে চলতে চায়।  অভাবের তাড়না সব সময় ধাক্কা মারে গরিবদের। গণদেবতা উপন্যাসে ঔপন্যাসিক দেখিয়েছেন, যুদ্ধের সময়ে একদল সুযোগ সন্ধানী লোকের আবির্ভাব ঘটে – যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গরিব সাধারণের ঘাড়ে পা রেখে তাদের পিশে ফেলতে চায়। তখন‌ই অত্যাচারিত সাধারণ দুর্বল মানুষেরা বুক ফুলিয়ে রুখে দাঁড়াই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরা বলতে পারি যে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামের কথা লিখেছেন, গ্রামের মানুষের কথা লিখেছেন। কিন্তু তারাশঙ্করের ‘গণদেবতা’ উপন্যাসে উঠে এসেছে তৎকালীন গ্রামীন মানুষের জীবনের হঠাৎ বাঁক বদলের কথা।

গণদেবতা উপন্যাসের রাজনীতির প্রভাব:

“আমি রাজনীতি ছাড়লেও রাজনীতির কম্বলরূপী ভালুক আমায় ছাড়লেনা।” (আমার সাহিত্য জীবন: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়)

তারাশঙ্করের রাজনৈতিক উপন্যাসের আলোচনা করতে গেলে দুটো জিনিসকে আগে স্পষ্ট করে নিতে হয় প্রথমত অর্থনৈতিক শ্রেণী ও বিচ্ছিন্নতাতত্ত্ব। তারাশঙ্কর মার্কসবাদী নন, তিনি সচেতন, উদার, মানবতাবাদী ও সংবেদনশীল মানুষ। তারাশঙ্করের মধ্যে রাজনীতি ও সাহিত্যের দ্বন্দ্ব প্রথম থেকেই ছিল। সাহিত্যে ব্যর্থ হয়ে তিনি কখনো রাজনীতিতে গেছেন আবার রাজনীতির ঘৃন্যরূপ দেখে তিনি আবার পুনরায় ফিরে এসেছেন সাহিত্য জগতে। ‘গন’ অর্থাৎ জনগণ বা সাধারণ মানুষ, তাদের দেবতা হলেন গণদেবতা। গণদেবতা উপন্যাসের নায়ক কোনো মানুষ নয়। চন্ডীমণ্ডপ‌ই গণদেবতার কেন্দ্রীয় শক্তি, তাকে কেন্দ্র করেই গ্রামের সমস্ত মানুষ মিলিত হয়েছে এবং তার সম্পর্কে মানুষ বিরোধ বেরিয়ে গেছে। সেখানে মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে সমষ্টিগত মানুষের পরিচয়, এই সমষ্টিগত মানুষ সমাজকে কেন্দ্র করে বিচিত্র ঘটনায় কালের স্রোতে নিহত পরিণতির দিকে এগিয়ে গেছে।। তারাশঙ্করের গণদেবতা হল এক রাজনৈতিক চেতনা লব্ধ মানবতা ও বাস্তবতার প্রতীক।
গণদেবতা উপন্যাসে আন্দোলনের সূচনা:  তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় গণদেবতা উপন্যাসে ১৯২০ দশকে বীরভূমের জনজীবনের সার্বিক চিত্র এঁকেছেন। তিনি এখানে দেখিয়েছেন- চিরাচরিত গ্রামীন ব্যবস্থার ভাঙন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, গ্রামীণ মানুষের জীবন ও জীবিকার পরিবর্তন, আধুনিক শিল্পায়ন,  অসহনীয় করবৃদ্ধি এবং তা আদায়ের জন্য নির্মম মানসিক উত্তেজনা হীন পল্লী জীবন,  দারিদ্রতা, বেকারত্ব অসহায়তা, জীর্ণশীর্ণ ঘর, রিক্ত অঙ্গন, মহামারী, ম্যালেরিয়া এবং জমিদার মহাজনদের অন্যায় অত্যাচার, শোষণ, পুলিশ প্রশাসনের নৈতিক অবক্ষয়; এক কথায়, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সর্বহারা একশ্রেণীর মানুষের প্রতিবাদ। এই নির্জীব নিশ্চেষ্ঠ গ্রাম্য জীবনের প্রানশক্তির একমাত্র পরিচয় ইর্ষা বিক্ষুব্ধ দলাদলিতে। দলাদলির সূত্রপাত কামার, নাপিত, ছুতোর প্রভৃতি শিল্পীদের কাজ ও পারিশ্রমিক সম্বন্ধীয় সনাতন ব্যবস্থা উল্লঙ্ঘনের জন্য দন্ডবিধান চেষ্টাতে।  মুমূর্ষ, অক্ষম সমাজ দীর্ঘ অবহেলার পর হঠাৎ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু যে সুবিচার ও ন্যায়নিষ্ঠতা সমাজ শাসনের ভিত্তি ছিল তা বহু আগেই ধ্বসে পড়েছে। কলকারখানা সস্তা দ্রব্য গ্রাম শিল্পীর আয়ের পরিধি সংকীর্ণ করে তাকে কর্তব্য পালনে শিথিল করেছে। অনিরুদ্ধের কথায়,  “আমরা পেরেক, গজাল, হাতা, খুন্তি গড়ে দিতাম…. এখন গাঁয়ের লোক সব কিনছে বাজার থেকে। সস্তা পাচ্ছেন তাই কিনছে।” সুতরাং গ্রামবাসীদের অভিযোগের বিরুদ্ধে তার খুব যুক্তিপূর্ণ উত্তর আছে। ইতিমধ্য‌ই‌ গ্রাম সমাজে ধনের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়ে এর শাসনের নৈতিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করেছে। এর উদাহরণ পাওয়া যায়, “আমাকে চোখ রাঙাবেন না চৌধুরী মশাই। দু তিনবার আমাকে থামিয়ে দিয়েছেন আমি সহ্য করেছি।  আর কিন্তু সহ্য করব না।” তাই সমস্যার এমনকি দেখাও যায় যে সমাজ শ্রীহরিকে শাসন করতে পারে না অনিরুদ্ধ তারও কর্তৃত্ব  অস্বীকার করে। অনিরুদ্ধের বক্তব্যে “যে মজলিস ছিহরি মোড়লকে শাসন করতে পারেনা। তাকে আমরা মানি না।”  এইভাবে বহু শতাব্দীর যত্নে রচিত বিধি-বিধান এবং বাইরের অভিভব, নিজ অন্তজীর্নতা এবং ঐশ্বর্যের কাছে নতী স্বীকার এই ত্রিবিধ অস্ত্রে খন্ডিত হয়ে নিজের কল্যাণ শক্তি হারিয়েছে। সমাজ শাসনের দুর্বলতার রন্ধ্র পথ দিয়ে ব্যক্তিগত অত্যাচার এবং প্রতিশোধ স্পিয়ার অরাজকতা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তার প্রভাব গণদেবতা উপন্যাসে পাওয়া যায়।
উপন্যাসে বৈপ্লবিক মনোভাব:

“শরৎচন্দ্র অবলম্বন করেছিলেন পারিবারিক ও সামাজিক নীতি- দুর্নীতিঘটিত  প্রভাব- প্রতিবেশে বর্ধিত কয়েকটি নরনারীর ব্যক্তিগত সমস্যা। তারাশঙ্কর সে সমস্যা ও সীমা চৌধুরী অনেক বাড়িয়ে দিয়ে বিদায়ী পুরাতন নবীন আগন্তকের সংঘর্ষের বিশালতরও পটভূমি এঁকেছেন” (অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়)।

বিরোধের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে উপন্যাসে যে সমস্ত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য অর্জন করেছিল তাদের মধ্যে অনিরুদ্ধ কামার সর্বপ্রথম। তার মধ্যে বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ অনুকূল পবন- প্রবাহের সর্বগ্রাসী অনল শিখায় প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। এই আগুনে সে তার সংসারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, দাম্পত্য সুখ-শান্তি, সামাজিকতা আত্মমর্যাদাজ্ঞান সমস্ত আহুতি দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সে জমিদারের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একটা দুরন্ত, উন্মাদ ধ্বংস শক্তির বাহনে পরিণত হয়েছে। শেষ জীবনে স্বেচ্ছায় কারাবরণ যেন তার নিঃশেষিত প্রায় মনুষ্যত্বের শেষ চিহ্ন স্বরূপ তার ভবিষ্যৎ উদ্ধারের আশ্বাস বহন করে।
অপরদিকে শ্রী হরিপাল তার ইতর, লম্পট, প্রভুত্ব গর্বোদ্ধত চরিত্রে অতর্কিতভাবে মহত্বের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। ক্ষমতালাভের সঙ্গে সঙ্গে তার মনে নৈতিক দায়িত্ববোধের আগমন ঘটেছে। তার শাসন সমাজের কল্যাণার্থী‌ নেতৃত্ব কামনার উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সময়ে সময়ে এই সদ্যজাগ্রত নীতিজ্ঞানকে অভিভূত করে তার স্বভাব সিদ্ধ আদিম বর্বরতা অন্ধ রোষে গর্জন করে উঠে। কিন্তু এই পাশবিক স্তরে অবতরণ তার বাস্তবতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। দুর্গা মুচিনি, তার প্রকাশ্যে স্বৈরিনীবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনেকগুলি সদগুন ফুটিয়ে তুলেছেন উপন্যাসিক। তার সপ্রতিভতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, হৃদয়ের উদারতা,প্রতিবেশী দুঃখ কষ্টে সহানুভূতি, সবথেকে উল্লেখ্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সৎ সাহস তাকে নীচকুল ও হেয় বৃত্তির গ্লানি থেকে অনেক ঊর্ধ্বে উন্নীত করেছে। আর একদিকে মনস্তত্ত্বের দিক দিয়ে অনিরুদ্ধ স্ত্রী পদ্মা সর্বাপেক্ষা কৌতুহল উদ্দীপক। তার দাম্পত্য প্রেমের স্বাভাবিক প্রসার প্রতিরোধ প্রতিরোধের ফলে তার দেহ মনের নানা জটিলতার প্রক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সে দেহ মুর্ছা রোগের ব্যাপ্তি এবং মনে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় উদাস অসাড়তা তার ব্যাধির লক্ষণ। তার বিকারগ্রস্ত মনের বিচিত্রতম বিকাশ রাজবন্দি যতীনের প্রতিকার অদ্ভুত মাতৃভাবে স্ফুরণ। যতীনের সঙ্গে তার  বয়সেয তারতম্য ও পরিচয়ের স্বল্পকালীন বিবেচনা করলে এই ভাবের অকৃত্তিমতার প্রতি সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। কিন্তু “শুক্তির গর্ভে মুক্তোর জন্ম নেয় সন্তান স্নেহবুভুক্ষিতা‌ এই তীর্যক সঞ্চারী মমতার ‌আবির্ভাব তিনি স্বতঃস্বীকৃতির মতোমতো ধরিয়া ল‌ইয়াছেন, ইহার বিকাশ ও পরিণতি দেখাইবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন নাই।” ( শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়)
বন্দি যতীন গ্রামের জীবনযাত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট না হয়েও না গ্রামের অর্ধশত রাজনৈতিক সংস্কার ও সামাজিক বিবেক বুদ্ধিকে সংস্পষ্টতর আত্মসচেতনতার দিকে অগ্রসর করে দিয়েছে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে দেবু পন্ডিত কিন্তু দেবুর অতি উগ্র আদর্শবাদ সমাজের সঙ্গে খাপ খায়েন না। আবার তাকে বাদ দিলেও উপন্যাসের মধ্যে নায়েকের অংশগ্রহণ করবার উপযোগী কেউ থাকে না। কর্ণধারী নৌকার ন্যায় স্বার্থ সংঘাতে ক্ষুব্ধ , অনিয়ন্ত্রিত দ্রুত রসাতলগামী সমাজে দেবু ঘোষের মাধ্যমে তারাশঙ্কর নিজের রাজনৈতিক জীবনকে ফুটিয়ে তুলেছেন। দেবুর কারাবাসের ঘটনা যেন স্বয়ং তারাশঙ্করের কারাবাসের কথা  ফুটিয়ে তুলেছেন।
উপন্যাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব: 

“একটা যুগের অবসান হচ্ছে আর একটা যুগ আসছে। পুরাতন গ্রামীণ জমিদারি আবহাওয়া চলে যাচ্ছে শূন্যস্থান পূরণ করতে আসছে শিল্পপতির দল।” (অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে আধুনিক অবস্থার পরিবর্তনের প্রভাবে গ্রামসমাজের প্রাচীন রীতি-নীতি ও অর্থনীতি ব্যবস্থার বিপর্যয় স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। গ্রামপঞ্চায়েতের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা,  সমাজ শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়াস বর্তমান যুগের অনুপযোগী প্রতিবেশে কি রূপে প্রভাব ফেলেছে তা উপন্যাসে বর্ণনা করা হয়েছে।উপন্যাসে সমস্ত চরিত্র‌ই প্রায় সমান অবস্থার। এখানে সকলেই  চাষী, কেউ কামার, কেউ ছুতোর আবার কেউ মুচি, আর তাদের মধ্যে সমাজ নেতার উচ্চ আসনে অভিজাত বংশীয় কোন ব্যক্তি নেই, কাজেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার  প্রভাব অধিকতর লক্ষ্যনীয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে শিবকালীপুরের নতুন সভ্যতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু যারা সনাতনরীতিতে তাদের জীবন অতিবাহিত করছিল হঠাৎ করে এই নতুন যুগের ধাক্কা তারা সামলে উঠতে পারেনি, তাই তাদের মধ্যে এক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে একটা গনবিদ্রোহের আকার ধারন করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে গ্রামীন সমাজের যে পরিবর্তন ঘটেছিল তার প্রভাব পরেছিল গ্রামের সমস্ত ব্যাক্তির মধ্যে, কারন কোনো ব্যক্তি সমাজচ্যুত নয়। ১. দ্বারিক চৌধুরী জমিদার-চ্যুত হয়ে সাধারণ চাষীর পর্যায়ে নেমেছিলেন বটে, কিন্তু তার মধ্যে যে আত্মমর্যাদাপূর্ন স্নিগ্ধ  ব্যবহার প্রমাণ করে যে, তিনি অর্থ গৌরব হারিয়ে তার চরিত্রের গৌরব অক্ষুন্ন রেখেছিলেন এবং তাকে গ্রামের সবাই সেই ভাবেই মেনে চলত।
2.  শ্রী হরিপাল ওরফে ছিরুপাল চাষী থেকে জমিদার উন্নীত, উচ্চ ও নীচ প্রবৃত্তির‌ অদ্ভুত সংমিশ্রন হয়েছে। শ্রীহরির সদ্য অর্জিত সম্পদ তাকে এখনো আভিজাত্যের কালজয়ী মর্যাদা অর্পণ করেনি। বুনিয়াদী ঘরের প্রতিষ্ঠা লাভ‌ই তার জীবনের সর্বপ্রথম কাম্য ছিল; এর জন্যই সে জনহিতকার কাজে রত হয়েছে।
৩. দেবুপন্ডিত অতর্কিত ভাবে এক অত্যুচ্চ আদর্শলোকে উন্নীত পল্লীগ্রামে সাধারণ জীবনযাত্রা ও মনোভাবের অনধিগম্য দূরত্বে অধিষ্ঠিত বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।  তার কল্পনায় আদর্শবাদের আতিশয্য গ্রামজীবনের গতীধারার ছন্দপতন ঘটিয়েছে। দেবুর স্ত্রী, পুত্রকে মৃত্যু কবলিত করে লেখক তার চরিত্রের লোকায়িত বা পৌরাণিক মহিমা অর্পণ করেছেন। সে অশিক্ষিত জনসাধারণের মাঝে ঘেটু গানের প্রশস্তি রচনা করে তার প্রতি অকৃত্রিম প্রীতিভক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ অর্ঘ নিবেদন করেছে। সবশেষে মহাগ্রামের মহামহোপাধ্যায় শিবশেখর ন্যায়রত্ন তার পূর্ণ ভাস্কর ব্রাহ্মণ্য মহিমা নিয়ে এই বিরোধ তিক্ত, নিচ স্বার্থপর, ইতর লোলুপতার ধুলিজালসমাছন্ন গ্রাম্য সমাজের উপর জ্যোতির্ময় প্রসন্ন

দেবাশীষর্বাদের পথিক রূপেদেবাশীষ বাদের প্রতীকরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। উপন্যাসের মধ্যে তার বিশেষ কোনো কাজ নেই। পূর্বযুগের সুনিয়ন্ত্রিত কর্তব্য অধিকার ভারসাম্য দৃঢ়ভুক্ত কল্যাণ বুদ্ধি ও ন্যায় তৎপরতা আশ্রয়াছিন্নস্নিগ্ধ, গ্রাম্যসমাজসৌধের শীর্ষ দেশে বিন্যাস্ত রত্নময় মঙ্গল কলসের ন্যায় তিনি অপার্থিব জ্যোতিতে অবর্তীন হয়েছে।

  তারাশঙ্কর ছিলেন বিংশ শতাব্দীর এক চিন্তাশীল বোধসম্পন্ন লেখক। তিনি তা‌ঁর সমসাময়িক কালের মধ্যে ইতিহাসের পদ শব্দ শুনতে পেয়েছেন এবং তার রচনার মাধ্যমে স্থায়ী করে রেখেছেন।

তাঁর “গণদেবতা” উপন্যাস সম্পর্কে প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী বলেছেন, “গণদেবতা বলতে যা বুঝিয়েছেন তা হল সামাজিক প্রতিষ্ঠান। গণদেবতাই তিনি দেখিয়েছেন চন্ডীমন্ডপকে আশ্রয় করে ব্যক্তিজীবন গোষ্ঠী জীবনে পরিণত হয়েছে। ….. গ্রামীণের অর্থনীতির পরিবর্তে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির প্রাধান্য বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবনের যুগান্তরে এক ইতিহাস ধরা পড়েছে গণদেবতার পরিকল্পনায়।  এই বিচারে গণদেবতা ভারতবর্ষের গ্রাম্য সমাজের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের ভাষ্য।”



এক্ষেত্র একটা কথা বলে রাখা দরকার,  গণদেবতা উপন্যাসের পরবর্তী কাহিনী উপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ করেছেন ‘পঞ্চগ্রাম’ উপন্যাসের মাধ্যমে।

“নব নব উন্মেষশালিনী সৃষ্টি শক্তি যদি প্রতিভার স্বরূপ লক্ষণ হয়, তবে তারাশঙ্করের প্রতিভা অনস্বীকার্য।”( ড: শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়)

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলা কথা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় নাম। নগর-জীবনের ব্যর্থতা, ঔপনিবেশিক মধ্যবিত্তের চাকুরিগত নিরাপত্তার অভাব, যা ত্রিশের আর্থিক সংকটে প্রথম উগ্রভাবে প্রকাশ করল এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের ব্যর্থতা সত্ত্বেও বাঙালির মধ্যবিত্ত- জীবন তখনও আশাহীন হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীর সমাজ তখনও বিশ্বাস ও আশার মূল জাতীয় জীবনে মেলে দিতে চেয়েছে।  সেখানে থেকেই উঠে এসেছে তারাশঙ্করের ‘গণদেবতা’ উপন্যাসের পটভূমি। উত্তর-শরৎচন্দ্র যুগের তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ কথাকার। তাঁর গল্প ও উপন্যাস শুধু মাত্র বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রদেশের পাঠকদের সামনে। তাঁর উপন্যাসে একদিকে যেমন রয়েছে দুর্লভ বলিষ্ঠতা ও অন্তর্দৃষ্টির পরিচয়, বিশাল মানববোধের চিত্র উদঘাটিত হয়েছে। অন্যদিকে মুমূর্ষ সামন্ততান্ত্রিক ব্যক্তিজীবন ও সমাজের ছবি তিনি অপূর্ব করুণায় ও মমতায় বর্ণিত করেছেন। তারাশঙ্কর ছিলেন বাংলাদেশের গৌরব, ভারতবর্ষের প্রধান কথাকার। শরৎচন্দ্র অবলম্বন করেছিলেন পারিবারিক ও সামাজিক নীতি দূর্নীতি ঘটিত প্রভাব প্রতিবেশে বর্ধিত কয়েকটি নরনারীর ব্যক্তিগত সমস্যা। অপরদিকে তারাশঙ্কর সেই সমস্যা ও সীমার পরিসর অনেকটা বাড়িয়ে দিয়ে বিদায়ী পুরাতন ও নবীন আগন্তুকের সংঘর্ষের বিশাল পটভূমি এঁকেছেন। কাহিনির বিশলতা, আঞ্চলিকতা, চরিত্রের নানা বৈচিত্র্য,  ব্যক্তির মনোদ্বন্দ্ব প্রভৃতি ব্যাপারে সার্থক উপস্থাপনা তাঁকে বাঙালি জীবন সাধনার শ্রেষ্ঠ ধারাভাষ্যকারের কৃতিত্ব দান করেছে।

এ বিষয়ে ড: অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য-
জীবনের বিশালতা ও গভীরতা এভাবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা,  মাংস পেশির  যে জোর ইদানিং বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ – সারা ভারতেও তার জুড়ি মিলবে না।”